• ডিফেন্ডিং মানবতার নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)

    আল্লাহ্‌ কুরআনে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত বলেছেন [সুরা আম্বিয়া ২১:১০৭]। অন্য একটি আয়াতে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে মহান চরিত্রের অধিকারী বলা হয়েছে [সূরা কালাম ৬৮:৪]। 
    "আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমতস্বরূপই প্রেরণ করেছি।" [২১:১০৭]
    "আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।" [৬৮:৪]
    কাজেই কুরআন অনুযায়ী মানবতার নবী ও মহান চরিত্রের অধিকারী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর জন্য নিচের সত্য কথাগুলো বলতেই হবে।

    ১. ইসলামবিদ্বেষী অসভ্য মৌলবাদীরা চৌদ্দশ' বছর আগের মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে 'শিশুকামী (Pedophile)' বলে চরম পৈশাচিক একটা আনন্দ পায়। কিন্তু এই গালি দেয়ার 'রসদ' তারা পেয়েছে হাদিস থেকে। তাছাড়াও তারা মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে 'ধর্ষক', 'নারী-বিদ্বেষী', 'মৃগীরোগী', 'সন্ত্রাসী', 'যুদ্ধবাজ নেতা', 'গণহত্যাকারী', 'নির্যাতক', 'অত্যাচারী', 'গুপ্তঘাতক', 'লুণ্ঠনকারী', ইত্যাদি বলে। এগুলোর 'রসদ'ও তারা পেয়েছে হাদিস থেকে। তাদের লেখাগুলো পড়ে দেখুন।
    অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর বিরুদ্ধে যত রকমের ঘৃণাবিদ্বেষমূলক অপবাদ/গালি বাজারে প্রচলিত আছে, সেগুলোর সবগুলোর 'রসদ' এসেছে হাদিস থেকে। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, হাদিসের উপর ভিত্তি করে তারা যা বলেছে সেগুলো সত্য বা যৌক্তিক। না, ঠিক তা নয়। তারা বিদ্বেষী মনোভাব থেকে হাদিসের নামে চাপাবাজি, অতিরঞ্জন, ও মনগড়া কথাই বেশি বলেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তারা এগুলো বলার 'রসদ/ছুতা/অজুহাত' হাদিস থেকেই পেয়েছে, কুরআন থেকে নয়। এই গুরুত্বপূর্ণ কথাটা মনে রাখতে হবে।
    প্রশ্ন: মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর মৃত্যুর ২০০+ বছর পর শোনা কথার উপর ভিত্তি করে সংগৃহীত যে হাদিসগুলোকে পুঁজি করে তাঁকে ঘৃণাবিদ্বেষমূলক অপবাদ/গালি দেয়া হচ্ছে, সেই হাদিসগুলোকে সত্য হিসেবে বিশ্বাস করা কি ঈমানের অঙ্গ? আমি মোটেও তা মনে করি না। হাদিসগ্রন্থে বিশ্বাস ঈমানের অঙ্গ হতে পারে না।

    ২. ইসলামের নামে যারা চরমপন্থার সাথে জড়িত, তারাও 'রসদ' পায় মূলতঃ হাদিস থেকে। ধর্মব্যবসায়ীরাও 'রসদ' পায় হাদিস থেকে। হুজুরদের ওয়াজে কুরআনের বাণী কখনো শুনেছেন কি? শুনে থাকলে কতটুকু শুনেছেন?

    ৩. ব্যভিচারের জন্য পাথর মেরে হত্যার মতো অযৌক্তিক ও অমানবিক বিধান এসেছে হাদিস থেকে — যেটি বাইবেলে আছে, কুরআনে নেই [সূত্র]। যেখানে কুরআনে উল্লেখিত বেত্রাঘাতের কথাই তেমন একটা শোনা যায় না, সেখানে পাথর মেরে হত্যার মতো অমানবিক-বর্বর বিধানকে শারিয়া আইনের নামে জিঁইয়ে রেখে ইসলামকে 'অমানবিক-বর্বর' হিসেবে উপস্থাপন করার পেছনে কোনো সু-যুক্তি থাকতে পারে কি? তাছাড়া ইসলামপন্থীরা নিজেদের মধ্যে অন্তত শারিয়া আইনের প্রয়োগ করে কি? না!!! তাহলে তারা কাদের উপর শারিয়া আইন প্রয়োগ করতে চায়?
    –ধর্মত্যাগী হত্যার অযৌক্তিক বিধান এসেছে হাদিস থেকে, কুরআন থেকে নয়। (নোট: এখানে কাউকে ধর্মত্যাগে উৎসাহিত করা হচ্ছে না!)
    –সমকামী হত্যার কথা এসেছে হাদিস থেকে — যেটি বাইবেলে আছে (Leviticus 20:13), কুরআনে নেই। (নোট: এখানে একটি সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। কিন্তু সমকামীতাকে প্রমোট করা হচ্ছে না। সমকামীতা আসলে প্রমোট করার মতো কিছু না। তবে মুসলিমদের মধ্যে যারা বাইবেল ও মধ্যযুগীয় খ্রিস্টানদের অনুকরণে সমকামীদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ঘৃণাবিদ্বেষকে উস্কে দিচ্ছে, তাদের জন্য চারজন বিখ্যাত ইসলামিক স্কলারের (Dr. Shabir Ally, Dr. Yasir Qadhi, Dr. Tariq Ramadan, Dr. Sherman Jackson) বক্তব্যের ভিডিও লিঙ্ক দেওয়া হলো []। ইসলামের নামে সমকামীদের বিরুদ্ধে অযথায় ঘৃণাবিদ্বেষ ছড়ানোর আগে তাঁদের বক্তব্যগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে শুনে দেখুন।)
    –পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে নারীর সৃষ্টির কথা এসেছে হাদিস থেকে — যেটি বাইবেলে আছে, কুরআনে নেই। নারীদের খৎনার কথাও এসেছে হাদিস থেকে। হাদিসেই নারীদের বুদ্ধিমত্তাকে হেয় করা হয়েছে। আর এগুলো বলা হয়েছে মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর মুখ দিয়ে!
    –কুকুর নামক একটি অবলা প্রাণীর প্রতি বিদ্বেষের 'রসদ' এসেছে হাদিস থেকে। কুরআনে কুকুর সম্পর্কে বরং পজিটিভ কথাবার্তাই আছে [সূত্র]। (নোট: এখানে কাউকে কুকুর পালতে উৎসাহিত করা হচ্ছে না। আমি নিজেও কুকুর-ভক্ত নই।)
    –টুপি-দাড়ি ও টাখনুর উপর কাপড় পরা নিয়ে যে চরম বাড়াবাড়ি-ফতোয়াবাজি চলে, সেগুলোর 'রসদ' এসেছে হাদিস থেকে; কুরআন থেকে নয়। (নোট: টুপি-দাড়ি ও টাখনুর উপর কাপড় পরা নিয়ে কারো কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।)
    –'প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম', 'দেয়ালে ছবি ঝুলিয়ে রাখা হারাম' জাতীয় ফতোয়ার 'রসদ' এসেছে হাদিস থেকে — যেগুলো কুরআনে নেই, তবে বাইবেলের সাথে কিছুটা সম্পর্কযুক্ত [সূত্র: ]।
    –'গান শোনা হারাম' জাতীয় ফতোয়ার 'রসদ' এসেছে হাদিস থেকে, কুরআন থেকে নয় [সূত্র: ]। (নোট: এখানে কাউকে গানের প্রতি আসক্ত হতে উৎসাহিত করা হচ্ছে না, আর আমি নিজেও গানের প্রতি আসক্ত নই।)
    –মাদ্রাসায় শিশুদেরকে লাঠি দিয়ে অমানবিকভাবে প্রহার করা হয়। শিশুদেরকে লাঠি দিয়ে প্রহার করার কথা বাইবেলে আছে, কুরআনে বা এমনকি হাদিসেও নেই। নিচে বাইবেলে শিশুদেরকে লাঠি (রড) দিয়ে প্রহার করার কথা দেখুন।
    Proverbs 23:13 "Do not withhold discipline from a child; if you strike him with a rod, he will not die."
    Proverbs 22:15 "A child’s heart has a tendency to do wrong, but the rod of discipline removes it far away from him."
    Proverbs 13:24 "Whoever spares the rod hates his son, but he who loves him is diligent to discipline him."
    বাইবেল আর হাদিসে শুধু হত্যা আর হত্যা! চিকিৎসার বিভিন্ন টোটকা [সূত্র]! অযৌক্তিক ও নারী-বিরোধী কথাবার্তা [সূত্র]! নেগেটিভ দিক থেকে এই দুই 'ভাইয়ের' মধ্যে বেশ মিল দেখা যায়! চিন্তার বিষয় নয় কি? অবশ্য এদিক দিয়ে হাদিসের চেয়ে বাইবেল দুই-তিন ধাপ এগিয়েই আছে। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর মৃত্যুর ২০০+ বছর পর লিখিত হাদিসগ্রন্থগুলোতে উল্লেখিত অযৌক্তিক, অমানবিক, বর্বর, নারী-বিরোধী, ইত্যাদি কথাবার্তাকে মুসলিমদের একাংশ মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে বেশ মজা পায়! ধরা যাক, তারা কাউকে পৈশাচিক পন্থায় পাথর মেরে হত্যা করতে চায় কিংবা ইসলামবিদ্বেষের কারণে বিচার-বহির্ভূতভাবে কুপিয়ে হত্যা করতে চায়। কিন্তু সেগুলো তারা নিজ দায়িত্বে না করে হাদিসের মাধ্যমে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর নামে চালিয়ে দিতে চায়! মাঝখানে থেকে অমুসলিমদের কাছে ঘৃণাবিদ্বেষ ও আক্রমণের শিকার হন মুহাম্মাদ (সাঃ)! সেই সাথে মুসলিমদেরও অনেকে ইসলাম নিয়ে সংশয় বা হীনমন্যতার মধ্যে পড়ে যায়।
    তাছাড়াও হাদিসগ্রন্থের সংখ্যা যেহেতু অগণিত সেহেতু হাদিসের নামে মুসলিম ও ইসলামবিদ্বেষী উভয় পক্ষ থেকেই অসংখ্য কথাবার্তা বাজারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, যেগুলো যাচাই করা প্রায় অসম্ভব। কুরআন যত সহজে যাচাই করা যায়, হাদিস তত সহজে যাচাই করা যায় না। উভয় পক্ষের অসাধু লোকজন এই সুযোগটাই নিচ্ছে।
    হাজার হাজার হাদিসের মধ্যে থেকে কতিপয় হাদিস বেছে নিয়ে সেগুলোকে 'বেদবাক্য' ধরে নিয়ে সেগুলোর উপর ভিত্তি করে ইসলামবিদ্বেষীরা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর বিরুদ্ধে ঘৃণাবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মনে বিভ্রান্তি ও সংশয়-সন্দেহের সৃষ্টি করছে। মূলতঃ হাদিস-ভিত্তিক সমালোচনাগুলো দেখে সাধারণ অমুসলিমরা ইসলাম ও মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে আজেবাজে ধারণা পোষণ করে বসে আছে, আর মুসলিমদেরও অনেকে সংশয়বাদী/নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে।
    প্রশ্ন: মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর মৃত্যুর ২০০+ বছর পর সংগৃহীত হাদিসের উপর ভিত্তি করে ব্যভিচারের জন্য পাথর মেরে হত্যা, ধর্মত্যাগী হত্যা, সমকামী হত্যা, পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে নারীর সৃষ্টি, কুকুর-বিদ্বেষ, গান-বিদ্বেষ, ইত্যাদিতে বিশ্বাস করা কি ঈমানের অঙ্গ হতে পারে? আমি তা মনে করি না। হাদিসে কিছু লিখা থাকা মানেই সেটিতে বিশ্বাস করা ঈমানের অঙ্গ হতে পারে না।

    ৪. ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণী কুরআন। মুহাম্মাদ (সাঃ) শুধু কুরআন রেখে গেছেন। হাদিসগ্রন্থগুলো সঙ্কলন করা হয়েছে তাঁর মৃত্যুর অনেক পরে। এই হাদিসগ্রন্থগুলো সম্পর্কে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর কোনো ধারণাই ছিল না! অথচ ইসলাম ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা ও বিদ্বেষমূলক যত লেখালেখি আছে সেগুলোর প্রায় ৯৯%-ই হাদিসের উপর ভিত্তি করে। ইসলামবিদ্বেষীরা হাদিসের নামে ইসলাম ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর সমালোচনা করে মুসলিমদেরকে দৌড়ের উপর রেখেছে। তারা মুসলিমদের প্রচুর সময় নষ্ট করছে। অথচ আলেম সমাজের উচিত ছিল কুরআন আর হাদিসের মধ্যে পার্থক্যগুলো পরিস্কার করে তুলে ধরা। যেমন:
    –ইসলামের ভিত্তি যেহেতু আল্লাহ্‌র বাণী কুরআন সেহেতু ইসলামকে ভুল/অযৌক্তিক/অমানবিক/অবৈজ্ঞানিক/নারী-বিরোধী/ইত্যাদি প্রমাণ করতে হলে কিংবা ইসলামের সমালোচনা করতে চাইলে কুরআনের উপর ভিত্তি করেই করা উচিত। হাদিস দিয়ে ইসলামকে ভুল/অযৌক্তিক/অমানবিক/অবৈজ্ঞানিক/নারী-বিরোধী প্রমাণ করা সম্পূর্ণরূপে অযৌক্তিক, যেহেতু হাদিসগ্রন্থগুলো লিখা হয়েছে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর মৃত্যুর অনেক পরে। অথচ সেই হাদিসগ্রন্থগুলোর দায়ভার তাঁর উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে!
    –হাদিসগ্রন্থগুলো শুধুমাত্র কুরআন পালনের কাজেই ব্যবহৃত হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ- কুরআনে সালাত, রোযা, হজ্জ পালন করতে বলা হয়েছে; যাকাত দিতে বলা হয়েছে; ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো পালনের বিস্তারিত নিয়ম-কানুন কুরআনে নেই। কাজেই এজন্য হাদিস বা সুন্নাহ্‌র সাহায্য নিতে হবে।
    নোট: ১. বর্তমান হাদিসগ্রন্থগুলো সম্পর্কে মুহাম্মাদ (সাঃ) কিছুই জানতেন না! কাজেই এই হাদিসগ্রন্থগুলোতে বিশ্বাস কোনোভাবেই ঈমানের অঙ্গ হতে পারে না। ২. শিয়া ও সুন্নীদের হাদিসগ্রন্থ আলাদা। ৩. ঈমাম বুখারী ৬ লাখ হাদিস সংগ্রহ করে সেগুলোর মধ্যে থেকে মাত্র ৭ হাজার (১%) হাদিসকে 'সহী' হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ৪. মুহাম্মাদ (সাঃ) নিজে তাঁর বাণীগুলোকে গ্রন্থ আকারে সঙ্কলন করার প্রয়োজন মনে করেননি, তাঁর ৪ জন বিখ্যাত সাহাবাদেরও কেউ সেই প্রয়োজন মনে করেননি, অথচ তাঁর মৃত্যুর ২০০+ বছর পর উজবেকিস্তানে জন্ম নেওয়া একজন পার্সিয়ান মুসলিম সেই প্রয়োজন মনে করলেন! তারপর একে একে যাঁরা হাদিস সঙ্কলনের কাজ করেছেন (প্রথম ৬ জন) তাঁদের কেউই আরবের (মক্কা/মদিনা) বাসিন্দা ছিলেন না! তাঁদের সকলেই আবার পার্সিয়ান-বংশদ্ভুত।
    তার মানে কি হাদিসগ্রন্থগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে? নিশ্চয় না। উপরে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে যে, হাদিসগ্রন্থগুলো শুধুমাত্র কুরআন পালনের কাজেই ব্যবহৃত হওয়া উচিত। তাছাড়া হাদিসগ্রন্থগুলোতে ভালো কিছু থাকলে সেগুলো পালন করাতেও দোষের কিছু নেই। একটি হাদিসের উপর ভিত্তি করে আমার এই লেখাটা পড়ে দেখুন। হাদিস সম্পর্কে ড. শাবির আলী নামে উচ্চ-শিক্ষিত ও আন্তর্জাতিক মানের একজন ইসলামিক স্কলারের বক্তব্য নিচের ভিডিওগুলোতে পাওয়া যাবে।
    আপনাকে স্বাগতম। সেই প্রায় এক যুগ থেকে এ কথাগুলোই বলে আসছি। এ কারণে ইতোমধ্যে আমাকে অনেকেই "কোরয়ান অনলি" মনে করেন। “সত্য সমাগত“। সুতরাং আশাকরি, নিশ্চয় অচিরেই তাদের এ ভুল ভাঙবে। তবে যত তাড়াতাড়ি ভাঙে ততই মঙ্গল। যারা এ পথে চলার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হবেন, তাদেরকে পবিত্র কোরআন সম্পর্কে ব্যপক ও সচ্ছ ধারনা নেয়ার চেষ্টা নিতে হবে। আধুনিকতার মোহাচ্ছন্নতা কিংবা ধর্মান্ধতার আঁধার যেন ইমানের সরল পথকে গরল বানাতে না পারে সে বিষয়ে সদা সজাগ থাকতে হবে। মহান আল্লাহতায়ালা যেন আমাদেরকে সরল পথে চলার ও সত্য কথা বলার তৌফিক দান করেন।
    আপনি বলেছেন- //ইসলামের নামে সমকামীদের বিরুদ্ধে অযথায় ঘৃণাবিদ্বেষ ছড়ানোর আগে তাঁদের বক্তব্যগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে শুনে দেখুন//
    হাঁ, ঠিকই বলেছেন। কারো বিরুদ্ধে অযথা ঘৃণা্বিদ্বেষ ছড়ানো ঠিক নয়। তবে পবিত্র কোরআনে সমকামিতাকে খুব ভাল চোখে দেখা হয় নাই। এ বিষয়ে এখানে কিছু বলার চেষ্টা করেছি-  ৩১. সেবক যখন যৌন নিপীড়ক
    ধন্যবাদ ও শুভকামনা-
    কুরআন-হাদিস হচ্ছে লিখিত ডক্যুমেন্ট। আল্লাহ্‌ ও মুহাম্মাদ(সাঃ)-এঁর বাণীর কোনো অডিও/ভিডিও নেই। কাজেই এই লিখিত ডক্যুমেন্টকে কে-কীভাবে উপস্থাপন করছে, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, আযানের একই কথাগুলো দশজন বললে দশ রকম শুনাবে। কারোটা হবে অত্যন্ত শ্রুতিমধুর, কারোটা বা আবার হেরে গলার বিরক্তিকর কিছু একটা হতে পারে। অনুরূপভাবে, বাংলাদেশ নিয়ে দশজন আলাদা আলাদা ভিডিও ডক্যুমেন্টারি তৈরি করলে দশ রকম লাগবে। কোনোটা হবে খুবই চমৎকার, আবার কোনোটা হতে পারে চরম জঘণ্য। দেশ কিন্তু একটাই। রবীন্দ্রনাথের একটি গানের উপস্থাপনা দেখুন-
    এখানে রোদ্দুর রায় যেভাবে রবীন্দ্রনাথের একটি গানকে উপস্থাপন করেছে -- চরমপন্থী, উগ্রপন্থী, বদমাশ, ও অসৎ স্বভাবের মুসলমানরা মুহাম্মাদ(সাঃ) ও ইসলামকেও অনুরূপভাবে উপস্থাপন করছে।
    ইসলামবিদ্বেষী ধর্মান্ধ: আমরা বরং নিজেদেরকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেব, তথাপি যে হাদিসে আয়িশার বয়স  বছর উল্লেখ আছে সেই হাদিসের সত্যতা নিয়ে সংশয়-সন্দেহ করে নরকে যেতে পারবো না!
    —তাই নাকি? কিন্তু কেন?
    ইসলামবিদ্বেষী ধর্মান্ধ: এই মনে করেন ভাল্লাগে, খুশিতে ঠ্যালায়, ঘোরতে!
    —তার মানে?
    ইসলামবিদ্বেষী ধর্মান্ধ: এই হাদিসের উপর ভিত্তি করে আমরা মুসলমানগো নবীরে গালি দিয়ে ব্যাপক মজা পাই! কাজেই এই ধরণের হাদিসকে আমরা নিজের জীবন দিয়ে হলেও ১০০% সহী হিসেবে ডিফেন্ড করবো! হেঁহেঁহেঁ!
    ধর্মান্ধ মুসলমান: আমরাও এই হাদিসের উপর ভিত্তি করে 'রাসূলের সুন্নাহ্‌'র নামে  বছরের বালিকাকে বিয়ে করে আমাদের অপকর্মের দায় রাসূলের ঘাড়ে চাপাতে চাই! কী মজা! কী মজা!
    'নারী নেতৃত্ব হারাম' ফতোয়ার 'রসদ' এসেছে একটি হাদিস থেকে [সূত্র], যদিও সেই হাদিসে নারী নেতৃত্বকে 'হারাম' বলা হয়নি। দেখুন-
    "সে জাতি কখনো সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোনো স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে" — হাদিস
    ১মত- এই কথা মুহাম্মাদ (সাঃ) আদৌ বলেছেন কি-না, সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে; তথাপি এই হাদিসে যেহেতু নারী নেতৃত্বকে 'হারাম' বলা হয়নি সেহেতু নারী নেতৃত্বকে 'হারাম' বলার আমি পক্ষপাতি না। কেননা ইসলাম বা মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে 'নারী-বিদ্বেষী' প্রমাণ করতে এটি একটি 'যুক্তি' হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 
    ২য়ত- সেই হাদিসে একটি জাতির 'সফলকাম' না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এখানে 'সফলকাম' বলতে আসলে কী বুঝানো হয়েছে, সেটা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
    আমার বক্তব্য হচ্ছে- নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে আমি অপেন, কিন্তু মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর নামে নারী নেতৃত্বকে 'হারাম' বলা যাবে না।
    নোট: জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-শক্তি তথা সবদিক দিয়ে মহাপরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোনো নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারেনি! বাকি পরাক্রমশালী দেশগুলোর ইতিহাসেও খুব অল্প সময়ের জন্য নারী নেতৃত্ব ছিল! স্বাধীন ভারতের প্রায় ৭২ বছরের ইতিহাসে মাত্র একজন নারী ক্ষমতায় ছিলেন! অন্যদিকে স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে অধিকাংশ সময় নারী ক্ষমতায় ছিলেন। চিন্তার বিষয়ই বটে! এই সত্য তথ্যগুলো থেকে 'সফলকাম' শব্দটাকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
    কাজেই যারা নারী নেতৃত্বের বিরোধীতা করে তারা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এঁর ঘাড়ে বন্দুক না রেখে মহাপরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্র-সহ বাকি পরাক্রমশালী দেশগুলোর ঘাড়ে বন্দুক রাখলেই তো পারে? আপনারা কী বলেন?
    অভিজিতের 'মুক্তমনা' মুরিদদের সাথে কথোপকথন
    যুক্তিবাদী: তোমরা আয়িশা (রাঃ)-এর বয়স '' বছর পেয়েছ কোথা থেকে?
    মুক্তমনা মুরিদ: বুখারী শরীফের একটি হাদিস থেকে।
    যুক্তিবাদী: শিয়া, আহমেদিয়া, ও কুরআন-অনলিরা কিন্তু ঐ হাদিসে বিশ্বাস করে না। শিয়াদের হাদিসে আয়িশার বয়স '' বছর উল্লেখ নেই।
    মুক্তমনা মুরিদ: তারা তাহলে কাফির হয়ে গেছে। আমরা সুন্নীদের হাদিসে বিশ্বাস করি।
    যুক্তিবাদী: সুন্নীদেরও অনেকে ঐ হাদিস নিয়ে সংশয় করে। কেউ কেউ বরং প্রমাণ করেছেন যে, বিয়ের সময় আয়িশার বয়স আরো বেশি ছিল।
    মুক্তমনা মুরিদ: তারাও কাফির হয়ে গেছে। তারাও নরকে যাবে।
    যুক্তিবাদী: কুরআন হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণী যেটি মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর তত্ত্বাবধানে লিখা হয়েছে। সেই কুরআনে আয়িশার বয়স উল্লেখ নেই। কুরআনের অনেক পরে লিখা হাদিসে উল্লেখিত আয়িশার বয়সে বিশ্বাস করা ঈমানের কোনো অঙ্গ নয়। এমনকি মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর বয়সে বিশ্বাস করাও ঈমানের অঙ্গ নয়। 
    মুক্তমনা মুরিদ: এটা আমাদের ঈমানের #১ অঙ্গ। যারা আয়িশার বয়স ৯ বছর বিশ্বাস করে না, তাদের সকলেই কাফির। তারা নরকে যাবে।
    যুক্তিবাদী: প্রায় ১২০০ বছর আগে লিখিত একটি হাদিসগ্রন্থে উল্লেখিত '' সংখ্যাটার প্রতি তোমাদের তো দেখা যায় কঠিন 'ঈমান'-রে বাবা! যে হাদিসকে মুসলিমরাই অতটা অন্ধভাবে বিশ্বাস করে না।
    মুক্তমনা মুরিদ: জ্বী অবশ্যই! আমাদের অভিশ্বর বলেছেন এই  সংখ্যার প্রতি যারা অন্ধভাবে ঈমান আনবে না তারা কাফির, তাদেরকে নরকে নিক্ষেপ করা হবে। কাজেই নরকে যাওয়ার ভয়ে আমরা আল্লাহ্‌-মুহাম্মাদ, ও কুরআনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে এই  সংখ্যার প্রতি অন্ধভাবে ঈমান এনেছি।
    যুক্তিবাদী: বেশ বেশ! 😀 তবে তোমরা মিশন্যারীদের লেখা থেকে কপি-পেস্ট করে হাদিস নিয়ে গুবেষণা করে যে পরিমাণ সময় নষ্ট করছ, সেই সময়টা বিজ্ঞানের গবেষণার কাজে ব্যয় করলে এতদিনে প্রত্যেকেই দু-চারটি করে জার্নাল পেপার লিখে ফেলতে পারতা, কী বলো?
    মুক্তমনা মুরিদ: ওয়েল, আমাদের অভিশ্বর দাদা বলেছেন বৈজ্ঞানিক জার্নালে পেপার লিখে ইহজীবনে জার্মানিতে আশ্রয় নিয়ে পাকা পায়খানায় হাগু করা যাবে না!! আর পরজীবনে স্বর্গেও যাওয়া যাবে না!!!
    সত্যি বলতে- ইসলাম ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সবচেয়ে বেশি পচিয়েছে মুসলিম নামধারীদের একাংশ, বিশেষ একটি বেশভূষার লোকজন। সেটা কীভাবে? মুসলিমদের একাংশ বিশেষ একটি বেশভূষাকে 'নবীর সুন্নাহ্‌' হিসেবে চালিয়ে দিয়ে প্রচার করেছে। এর অর্থ হচ্ছে সেই বিশেষ বেশভূষাধারী লোকজনের প্রত্যেকেই একেকজন 'চলন্ত নবী' বা 'নবীর প্রতিনিধি'! এর ফলে যা হয়েছে তা হচ্ছে:
    --মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকলেই লক্ষ্য করেছে যে, সেই বিশেষ বেশভূষাধারী লোকজনের অধিকাংশই শূন্য কলস। বিজ্ঞান-দর্শন-ইত্যাদি তো দূরে থাক, এমনকি ইসলাম সম্পর্কেও তারা অজ্ঞ-মূর্খ। তাদের বেশভূষাটাই সার! কিন্তু তারা যেহেতু নিজেদেরকে 'চলন্ত নবী' বা 'নবীর প্রতিনিধি' হিসেবে উপস্থাপন করছে, সেহেতু ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ লোকজন তাদের দেখে ইসলাম ও মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে ঠুনকো বা নীচু ধারণা পোষণ করতে পারে।
    --সেই বিশেষ বেশভূষাধারী অপরাধীদেরকে ইসলামবিদ্বেষীরা বেশি বেশি করে হাইলাইট করে বুঝাতে চেয়েছে যে, এদের অপরাধের জন্য ইসলাম বা ইসলামের নবীই দায়ি। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু যখনই সেই বিশেষ বেশভূষাধারীদের কেউ ধর্ষণের সাথে জড়িত হওয়ার খবর বের হয়, তখন দেখা যায় ইসলামবিদ্বেষীরা তাকে বেশি বেশি করে হাইলাইট করছে; কেউ কেউ সুযোগ বুঝে তার ঘাড়ে বন্দুক রেখে মুহাম্মাদ (সাঃ)-কেও হেয় করে।
    --ওসামা বিন লাদেন, আবু বকর আল-বাগদাদী, আলকায়েদা-আইসিস পরিচয়ধারী লোকজনকে পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়াগুলোতে যে কী পরিমাণ হাইলাইট করা হয়েছে, তা কল্পনারও বাইরে। সেই তুলনায় সাদ্দামকে কিন্তু সেভাবে হাইলাইট করা হয়নি, কেননা সাদ্দামের সেই বেশভূষা ছিল না। এদিকে বাংলাদেশে সেই বিশেষ বেশভূষাধারীদের মধ্যে যাদেরকে 'রাজাকার' বা 'যুদ্ধাপরাধী রাজাকার' বলা হয়েছে, তাদেরকে কী পরিমাণ হাইলাইট করা হয়েছে সেটা বাংলাদেশি মাত্রই জানার কথা। মানুষের মনে লিখিত স্ক্রিপ্টের চেয়ে ভিজুয়াল জিনিস খুব সহজেই দাগ কাটে। 
    এভাবেই তারা "ইসলাম = জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, খুন, ধর্ষণ, ইত্যাদি" প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।
    ইসলাম ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনা ও হেয় করার জন্য ডজন ডজন হাদিসগ্রন্থে অগণিত 'রসদ' আছে। ইসলামবিদ্বেষীরা এই কারণেই দিন রাত হাদিসের মধ্যে মাথা গুঁজে থাকে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কারণ হচ্ছে মুসলিমরা নিজেরাই। মুসলিমরা শত শত বছর ধরে কুরআনকে অনেকটাই সাইডলাইনে রেখে কথায় কথায় হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছে। ওয়াজ-মাহ্‌ফিল'সহ সব জায়গায় শুধু হাদিস আর হাদিস! যার ফলে নাস্তিক ও অমুসলিমরা কুরআনের চেয়ে হাদিসকেই ইসলামের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে!
    ইসলাম: সত্যিই একটা মিরাকল!
    বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সকল কিছু যাঁকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, সেই বুদ্ধের ছবি/মূর্তি তাদের চোখের সামনে থাকে। অর্থাৎ বৌদ্ধরা বুদ্ধের ছবি/মূর্তি দেখে তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস করে, তাঁকে পূজা করে। সারা বিশ্ব থেকে যদি বুদ্ধের ছবি ও মূর্তি মুছে ফেলা হয় তাহলে বৌদ্ধ ধর্ম বলে কিছু থাকবে না।
    খ্রিস্টানরা যাঁকে 'গড' বা 'গডের পুত্র' হিসেবে বিশ্বাস করে, সেই যীশুর ছবি/মূর্তিকে নিজ চোখে দেখে তাঁর অস্তিত্বে তারা বিশ্বাস করে, তাঁকে ওয়ার্শিপ করে। সারা বিশ্ব থেকে যদি যীশুর ছবি ও মূর্তি মুছে ফেলা হয় তাহলে খ্রিস্ট ধর্ম বলে কিছু থাকবে না।
    হিন্দুদের ব্যাপারটা তো সকলেরই জানা। তারা তাদের ঈশ্বর(কৃষ্ণ)-দেব-দেবী সকলকে স্বচক্ষে দেখে তাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস ও তাদের পূজা করে। এক্ষেত্রেও সারা বিশ্ব থেকে যদি ঈশ্বর-দেব-দেবীর ছবি ও মূর্তি মুছে ফেলা হয় সেক্ষেত্রে হিন্দু ধর্ম বলে কিছু থাকবে না।
    তার মানে এই তিনটি ধর্ম দাঁড়িয়ে আছে কিছু ছবি-মূর্তির উপর ভিত্তি করে। ছবি-মূর্তি নাই, তো ধর্মও নাই! সেই সাথে এটাও প্রমাণ হয় যে, এই ধর্মগুলোতে বিশ্বাস করতে কোনো রকম মাথা খাটাতে হয় না। কোনো কিছুকে স্বচক্ষে দেখে বিশ্বাস করতে মাথা খাটানোর তো দরকার নাই!
    এবার ইসলামের ব্যাপারটা দেখা যাক। মুসলিমদের কাছে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ্‌র কোনো ছবি/মূর্তি নাই। শুধু তা-ই নয়, মুহাম্মাদ (সাঃ)-সহ কোনো নবী-রাসূলেরও কোনো ছবি/মূর্তি নাই! অথচ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় মুসলিমদের বিশ্বাস অনেক বেশি দৃঢ় ও শক্তিশালী। এটা ডিভাইন কিছু ছাড়া সম্ভব না। এমনকি ১৪০০ বছর আগের যে মানুষটাকে মুসলিমদের কেউ স্বপ্নেও দেখেনি, তাঁর জন্য তারা জীবন উৎসর্গ করতেও রাজি! বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ তাঁর জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত! এটাকে মিরাকল ছাড়া অন্য কোনোভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। ইসলামে বিশ্বাসের পক্ষে অন্যান্য সকল যুক্তিকে একপাশে রেখে শুধুমাত্র এটুকু নিয়ে চিন্তা করলেও ইসলামের সত্যতা অনুধাবন করতে পারার কথা।
    ইসলামকে আক্রমণ করার যতগুলো মোক্ষম অস্ত্র ইসলামবিদ্বেষীদের হাতে রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কতিপয় মুসলিমের দ্বারা রচিত সেইসব অজ্ঞতাপসূত প্রোপাগাণ্ডা, যার মাধ্যমে যুদ্ধের সময় যুদ্ধবন্দী হিসেবে ধৃত নারীর সাথে বিবাহ বহির্ভূত যৌন-সম্পর্ক করাকে ধর্মের দোহাই দিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত জায়েজ দেখানো হয়েছে।
    ইসলামে যুদ্ধবন্দী নারীর অধীকার সংরক্ষণের স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অথচ মুসলিমদের মধ্যেই একটি মহল দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিলের নেশায় ইনিয়ে বিনিয়ে ধর্মান্ধ মানুষকে ব্যবহার করছে এবং তাদেরকে যুদ্ধের পথে নামিয়ে যুদ্ধবন্দী নারীকে ভোগ করার প্রলোভন দখানো হচ্ছে। এভাবে তারা যুদ্ধবন্দী হওয়ার অযুহাত দেখিয়ে সেই নারীদের অবস্থানকে যৌনদাসীর পর্যায়ে নামানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
    হাঁ, ইসলাম কখনই ক্রীতদাসি আর যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের প্রবর্তক নয়। তাই ক্রীতদাসি আর যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে অতি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা যথেচ্ছ, অমানবিক ও অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচারকে ইসলাম কখনোই সমর্থন করেনা বরং তা মানবিক ও নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রাখার পথই প্রদর্শন করেছে। তাদের জৈবিক চাহিদা পুরনের বিষয়টিকে ক্রমান্বয়ে বৈধ ও মর্যাদাপূর্ণ পর্যায়ে উন্নিত করার জন্য তাদেরকে উপপতিœ কিংবা ব্যাভিচারী হিসেবে ব্যবহার না করে বরং পবিত্র কোরআনে তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে ইসলাম পূর্ব যুগে সামাজিক প্রথা হিসেবে যারা ক্রীতদাসির সাথে উপপতিœর ন্যায় সম্পর্ক রাখতেন এবং তারা যখন ইসলাম গ্রহণ করতেন, তখন সেই নব মুসলিমদের জন্য রাসূলের (সা.) পক্ষ থেকে সাময়িকভাবে কিছু নিয়ম বেধে দেয়া হয়েছিল। কতিপয় হাদিছে যার উল্লেখ রয়েছে এবং তা থেকে জানা যায় যে, সেই উপপতিœর সন্তান জন্মগতভাবে স্বাধীন হয়ে যেত ও তারা পিতার সম্পদেরও উত্তারিকারী হতে পারত। আর সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে উপপতিœ ক্রীতদাসিটির জন্য ক্রমান্বয়ে মুক্তি লাভ করার সুযোগ ছিল। এই নিয়ম সেই সময়কার সংকটময় পরিস্থিতিতে যেমন কিছু সময়ের জন্য বহাল ছিল, তেমনি একই রকম পরিস্থির উদ্ভব হলে বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের যেকোন সময় তা বহাল হতে পারে এবং পবিত্র কোরআনে যার ইংগিত রয়েছে। কিন্তু তাই বলে কথায় কথায় যুদ্ধ বাধিয়ে সেই অযুহাতে শুধুমাত্র যুদ্ধবন্দী অর্থাৎ “মা-মালকাত আইমানুকুম” হওয়ার কারণে কোন নারীকে উপপতিœ বানিয়ে তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার কোন নির্দেশনাই পবিত্র কোরআনে দেয়া হয় নাই। মূল আলোচনায় যাবার আগে কয়েকটি বিষয় আমাদের ভালোভাবে মনে রাখতে হবে:
    ০১. দাসপ্রথা যদি ইসলামের উদ্ভাবন না হয় এবং কেবলমাত্র অতি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা একটি অমানবিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা প্রথাই হয়ে থাকে, তাহলে ইসলামের  মৌল গ্রন্থ আল-কোরআনে মহান স্রষ্টা নিশ্চয় এটিকে আধা মনবিক নয় বরং পূর্ণ মানবিক করার বিধানই দিয়েছেন। আর সে কারণেই দাসমুক্তির জন্য নানান পথ উন্মুক্ত করেছেন।
    ০২. ক্রীতদাসির সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের অধিকার যদি দাসপ্রথার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকে এবং এটি যদি ইসলামের কোন অপরিহার্য, অবশ্য করণীয় অথবা আকাঙ্খিত বিষয় না হয়, তাহলে এ যুগে এসেও একজন মুসলিমের জন্য যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে (উপপতিœর ন্যায়) বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক বহাল রাখা কিভাবে বৈধ হতে পারে? ইসলাম নিজ গÐির ভেতরে দাসপ্রথাকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এই নিয়ন্ত্রণ যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাকে কিয়ামত পর্যন্ত বহাল রাখার অনুমোদন দেয় কিনা তা আমাদের অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এ বিষয়ে কোনরূপ অবিবেচক সিদ্ধান্তের কারণে নিজেকে যেমন পাপের ভাগী হতে হবে, তেমনি অন্য অনেককেই পাপের পথে ঠেলে দেয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে পরকালে হাজির হওয়া যে কতটা বিপদজনক ও কষ্টকর হতে পারে, তা যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধিতে আসবে ততই মঙ্গল।
    ০৩. হাঁ, দাসপ্রথার নিয়মকে ইসলামের সাথে গুলিয়ে ফেলার কোন সুযোগই নেই। বিশেষ করে পবিত্র কোরআনে "বিবাহ বহির্ভূত সকল যৌন সম্পর্ক হারাম" করে দেয়া সম্পর্কিত আয়াত নাযিলের পর থেকে মুসলিমদের জন্য যুদ্ধবন্দী নারীর সাথে (ইসলাম পূর্ব দাসপ্রথায় প্রচলিত) উপপতির ন্যায় সম্পর্ক স্থাপন করার সকল পথই চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। যুদ্ধবন্দীরা নারী হোক বা পুরুষ, তাদেরকে যোগ্য অভিভাবকের তত্ত¡াবধানে রেখে তাদের সাথে ব্যভিচার নয় বরং সদাচার করার এবং মানুষ হিসেবে তাদের মৌলিক অধীকার রক্ষার স্পষ্ট নির্দেশনাই দেয়া হয়েছে।
    যারা জানতে আগ্রহী তাদের জন্য বিষয়টি এখানে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে- ১৫. ক্রীতদাসত্ব এবং আল-কোরআন
    নোট: ১. বর্তমান হাদিসগ্রন্থগুলো সম্পর্কে মুহাম্মাদ (সাঃ) কিছুই জানতেন না! কাজেই এই হাদিসগ্রন্থগুলোতে বিশ্বাস কোনোভাবেই ঈমানের অঙ্গ হতে পারে না। ২. শিয়া ও সুন্নীদের হাদিসগ্রন্থ আলাদা। ৩. ঈমাম বুখারী ৬ লাখ হাদিস সংগ্রহ করে সেগুলোর মধ্যে থেকে মাত্র ৭ হাজার (১%) হাদিসকে 'সহী' হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ৪. মুহাম্মাদ (সাঃ) নিজে তাঁর বাণীগুলোকে গ্রন্থ আকারে সঙ্কলন করার প্রয়োজন মনে করেননি, তাঁর ৪ জন বিখ্যাত সাহাবাদেরও কেউ সেই প্রয়োজন মনে করেননি, অথচ তাঁর মৃত্যুর ২০০+ বছর পর উজবেকিস্তানে জন্ম নেওয়া একজন পার্সিয়ান মুসলিম সেই প্রয়োজন মনে করলেন! তারপর একে একে যাঁরা হাদিস সঙ্কলনের কাজ করেছেন (প্রথম ৬ জন) তাঁদের কেউই আরবের (মক্কা/মদিনা) বাসিন্দা ছিলেন না! তাঁদের সকলেই আবার পার্সিয়ান-বংশদ্ভুত।
    সারা বিশ্বে মিলিয়ন মিলিয়ন ১৮+ নারী আছে যাদের এখনো বিয়ে হয়নি। এই অবস্থায় যারা 'রাসূলের সুন্নাহ্‌'র নামে ৯ বছরের মেয়েদের বিয়ের কথা বলে তারা তাদের বদমায়েশিকে রাসূল (সাঃ)-এঁর ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চায়।
    উল্লেখ্য যে, রাসূল (সাঃ) ২৫ বছর বয়সে ৪০ বছর বয়সী একজন বিধবা নারীকে প্রথম বিয়ে করে সেই নারীর আমৃত্যু পর্যন্ত আর কোনো বিয়ে করেননি। কাজেই যারা 'রাসূলের সুন্নাহ্‌'র নামে বিয়ে করতে চায়, তাদেরকে এই নিয়ম মেনে বিয়ে করতে হবে -- অর্থাৎ ২৫ বছর বয়সে ৪০ বছর বয়সী বিধবা নারীকে প্রথম বিয়ে করতে হবে। এই নিয়ম না মেনে যারা 'রাসূলের সুন্নাহ্‌'র নামে ৯ বছরের মেয়েদের বিয়ের কথা বলে তারা নিঃসন্দেহে বদমাশ। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে রাসূল (সাঃ)-কে পচানো।



  • 0 comments:

    Post a Comment

    New Research

    Attention Mechanism Based Multi Feature Fusion Forest for Hyperspectral Image Classification.

    CBS-GAN: A Band Selection Based Generative Adversarial Net for Hyperspectral Sample Generation.

    Multi-feature Fusion based Deep Forest for Hyperspectral Image Classification.

    ADDRESS

    388 Lumo Rd, Hongshan, Wuhan, Hubei, China

    EMAIL

    contact-m.zamanb@yahoo.com
    mostofa.zaman@cug.edu.cn

    TELEPHONE

    #
    #

    MOBILE

    +8615527370302,
    +8807171546477