• খলিফা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু

     

    খলিফা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু

    আনহু সম্পর্কে ইনসাফপন্থীদের কিছু বাণী

    [ بنغالي –  Bengali – বাংলা ]

                 

     

    আব্দুল মুহসিন ইবন হামদ আল-আব্বাদ

     

     

    অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ

    সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া


     

    من أقوال المنصفين في الصحابي الخليفة معاوية رضي الله عنه

     

    عبد المحسن بن حمد العبَّاد

     

     

    ترجمة: ثناء الله نذير أحمد

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    সূচীপত্র

     

    الصفحة

    العنوان

    م

     

    ভূমিকা

     

    মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু কেন আলোচনার বিষয় বস্তু?

     

    সাহাবীগণ উম্মতের শ্রেষ্ঠ সদস্য

     

    সর্বাধিক সাওয়াবের অধিকারী সাহাবীগণ

     

    সাহাবীদের মর্যাদা সম্পর্কে মনীষীদের বাণী

     

    মুয়াবিয়া সম্পর্কে ইনসাফপন্থীদের বাণী

     


     

    ভূমিকা

     

    ﴿بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ١ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٣ مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ ٤ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥ ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧﴾ [الفاتحة: ١،  ٧] 

    اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد, اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد, اللهم أرض عن الصحابة أجمعين ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين وعنا معهم بمنك وكرمك يا أرحم الراحمين: ﴿رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [الحشر: ١٠]

    সালাত ও সালামের পর, সম্মানিত ভ্রাতৃবৃন্দ, আজকের আলোচনার বিষয় ইনসাফপন্থী মনীষীদের মুখ নিঃসারিত বাণী ও অভিমতের আলোকে মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা। আমি এখানে তার বংশ, জীবনী ও কথা-কর্ম নিয়ে আলোচনা করব না; বরং আমার আলোচনা হবে একটি নির্দিষ্ট বিষয় কেন্দ্রিক, অর্থাৎ ইনসাফপন্থী মনীষীদের বাণী ও মতামতের আলোকে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু। যারা আল্লাহর তাওফীক প্রাপ্ত হয়ে সঠিক পথ অনুসরণ করেছেন এবং তার সম্পর্কে তাই বলেছেন যা তার জন্য প্রযোজ্য ও তার মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যশীল। মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে তারা ভ্রান্তিতে পতিত হয় নি, যেরূপ পতিত হয়েছে সেসব লোক, যাদের সঙ্গী হয় নি আল্লাহর তাওফীক এবং তারা হাসিল করতে পারি নি সে ইলম, যাতে রয়েছে তাদের মুক্তি, নিরাপত্তা ও সফলতা।

    মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সৌভাগ্য ধন্য সেসব সাহাবীদের একজন, যাদেরকে আল্লাহ তার প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য দিয়ে সম্মানিত করেছেন। সাহাবীদের সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে সাধারণভাবে যা বলা ও লিখা হয়, মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিঃসন্দেহে তার অন্তর্ভুক্তঅধিকন্তু আদর্শ মনীষীগণ তার সম্পর্কে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা তার গুণাবলির বহিঃপ্রকাশ ও তার মর্যাদার যথাযথ মূল্যায়ন, যা একমাত্র তার সাথেই খাস। আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট হোন ও তাকে সন্তুষ্ট করুন।

    মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সম্পর্কে মনীষীদের বাণী ও অভিমত আমি সেসব গ্রন্থ থেকে উল্লেখ করব, যার লিখকগণ সুন্নতের খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন এবং সাহাবীদের প্রাপ্য হক আদায়ে পূর্ণ সজাগ ছিলেন, যা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য ও ধন্যবাদ পাওয়ার হকদার। উল্লেখ্য, সাহাবীদের মর্যাদা সংক্রান্ত দু’ধরণের বাণী রয়েছে মনীষীদের: কতক বাণী ব্যাপক, মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান যার অন্তর্ভুক্ত হবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই, আমি এখানে ব্যাপক বাণীসমূহ প্রথম উল্লেখ করব, অতঃপর উল্লেখ করব কেবল মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু সংক্রান্ত বিশেষ বাণীসমূহ।

    মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু কেন আলোচনার বিষয় বস্তু?

    কেউ হয়তো বলবেন, আপনি মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ানকে আলোচনার বিষয় বস্তু করলেন, অন্য সাহাবীকে কেন করলেন না? তার উত্তর, জনৈক আদর্শ মনীষী আবু তাওবাহ হালবি তার সুপ্রসিদ্ধ বাক্যে বলেছেন, “মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের জন্য পর্দাস্বরূপ, যে এই পর্দা উঠাবে, সে তার ভেতর প্রবেশ করারও দুঃসাহস দেখাবে”[1]

    অতএব, যে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দোষ চর্চা করে এবং তার সম্পর্কে এমন কথা বলে, যা তার মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়, তার পক্ষে খুব স্বাভাবিক অন্যান্য সাহাবী সম্পর্কে কুৎসা রটনা করা, শুধু এতেই ক্ষান্ত হবে না, বরং তার চেয়েও উত্তম সাহাবী পর্যন্ত তার মুখ দরাজ হবে, বরং নবী ও রাসূলদের পর সর্বোত্তম সাহাবী আবু বকর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে, অতঃপর উমার ইবনুল খাত্তাব, অতঃপর উসমান ইবন আফফান, অতঃপর আলী ইবন আবু তালিবকেও রেহাই দিবে না সেআল্লাহ তাদের সবার ওপর সন্তুষ্ট হোন ও তাদের সবাইকে সন্তুষ্ট করুন। বস্তুত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নিয়ে যে বিতর্কই হোক, সেটা অন্যান্য সাহাবী সম্পর্কেও হবে সন্দেহ নেই। তাই আজকের আলোচনার বিষয় মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু

    সাহাবীগণ উম্মতের শ্রেষ্ঠ সদস্য

    সাহাবীদের সম্পর্কে অনেক সুন্দর আলোচনা অনেকেই করেছেন, যা তাদের অবদানকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং যার উপযুক্ত একমাত্র তারাই। আলোচিত সাহাবী ও ভালো আলোচক উভয়ই হোন প্রশংসার পাত্র। আমরা প্রত্যক্ষ করি, উম্মতের সেরা সদস্য সাহাবীদের নিয়ে যেসব মনীষী যথাযথ মন্তব্য করেছেন, মানুষের মুখে মুখে তাদের কথা উচ্চারণ হয়। মানুষ তাদের নামের সাথে রহমতের দোআ করে কারণ, তারা সাহাবীদের হক আদায় করেছেন। আল্লাহ সকল সাহাবীর ওপর সন্তুষ্ট হোন।

    পক্ষান্তরে সাহাবীদের নিয়ে যে ব্যক্তি খারাপ মন্তব্য করেছে, সে তাদের কোনো ক্ষতি করতে সক্ষম হয় নি, বরং ক্ষতি করেছে নিজের। কারণ, সাহাবীগণ যে আমল করেছেন তার পরিমাণ অনেক, তারা অনেক মহান আমল আঞ্জাম দিয়েছেন, সেগুলো আবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে। অতএব, যে তাদের সমালোচনা করে, সে তাদের ক্ষতি করে না, বরং ক্ষতি করে নিজের দ্বিতীয়ত পরবর্তীদের সমালোচনা পূর্ববর্তী সাহাবীদের মর্যাদা ও নেকির পরিমাণ বৃদ্ধি বৈ কিছুই করে না। তাদের ব্যাপারে যে না-হক কথা বলে, তার নেকি তাঁদের সাথে যোগ হয়, যদি তার নেকি থাকে, ফলে তাদের মর্তবা বুলন্দ হয় আর যদি তার নেকি না থাকে, তাহলে প্রসিদ্ধ প্রবাদ ছাড়া কিছু বলার নেই: কুকুরের ঘেউ ঘেউ মেঘের কোনো ক্ষতি করতে পারে না।

    আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়ে রিসালাতের পরম্পরা সমাপ্ত করে তার রিসালাতকে পরিপূর্ণ ও কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী ঘোষণা দেন, যতক্ষণ না তিনি জমিন ও তাতে বিদ্যমান সব কিছুর মালিক হবেন এবং তাকে এমন অনেক মনীষী দিয়ে শক্তিশালী করেন, যাদেরকে একমাত্র তার সাথী হওয়ার জন্যই তিনি বাছাই করেছেন, ফলে তার যুগেই তাদেরকে তিনি সৃষ্টি করেন। তারাও তার সঙ্গী হয়ে আল্লাহর রাস্তায়, আল্লাহর দীন প্রচারের স্বার্থে চূড়ান্ত প্রচেষ্টা ও সর্বাত্মক জিহাদে অংশ নেন। আল্লাহর দীনকে সর্বপ্রথম তারাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে গ্রহণ করেন, ফলে পরবর্তী উম্মত ও রাসূলের মাঝে যোগসূত্র তারা। অতএব, যে তাদের অপবাদ দেয়, সে মূলত মুসলিম জাতি ও তাদের রাসূলের বন্ধনকে অপবাদ দেয়; যে তাদেরকে নিন্দা করে সে মূলত সুদৃঢ় বন্ধনকে নিন্দা করে, যা মুসলিম উম্মাহকে তাদের রাসূলের সাথে সম্পৃক্ত করে।

    বস্তুত সাহাবীগণ যে বৈশিষ্ট্য ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী, পরবর্তী কোনো উম্মত তার অধিকারী নয়, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথী হওয়া, পার্থিব জগতে তার চেহারা দেখার সৌভাগ্য হাসিল করা, যা পরবর্তী কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের আরও মর্যাদা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আল্লাহর বাণী শ্রবণ করা। তারাই সরাসরি আল্লাহর দীন, নূর ও হিদায়াত গ্রহণ করে পরবর্তীতের নিকট পৌঁছে দেন। অতএব, তাদের পরে যে আসবে, তার ওপর অবশ্যই তাদের অনুগ্রহ ও শ্রেষ্ঠত্ব বহাল থাকবে কারণ, পরবর্তীদের নিকট তাদের মাধ্যমেই আল্লাহর দীন, নূর ও হিদায়াত পৌঁছেছেআল্লাহ তাদের সবার ওপর সন্তুষ্ট হোন ও তাদের সবাইকে সন্তুষ্ট করুন।

    সর্বাধিক সাওয়াবের অধিকারী ব্যক্তিবর্গ হচ্ছেন সাহাবীগণ

    সহীহ সনদে প্রমাণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    «من دعا إلى هدى كان له من الأجر مثل أجور من تبعه لا ينقص ذلك من أجورهم شيئا ومن دعا إلى ضلالة كان عليه من الإثم مثل آثام من تبعه لا ينقص ذلك من آثامهم شيئا»

    “যে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করে, তার জন্য সেরূপ সাওয়াব হবে যেরূপ সাওয়াব হয় তার ওপর আমলকারীর জন্য, তবে তা আমলকারীদের সাওয়াবকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করবে না; আর যে গোমরাহীর দিকে আহ্বান করে, তার জন্যও সেরূপ পাপ হবে যেরূপ পাপ হয় তার ওপর আমলকারীর জন্য, তবে তার আমলকারীর পাপকে তা বিন্দুমাত্র হ্রাস করবে না”[2]

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের জন্য এ হাদীস প্রথম প্রযোজ্য, যার দাবি হচ্ছে সাওয়াবের বিরাট অংশ ও সৌভাগ্যের অধিক হকদার তারা। কারণ তারাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নূর ও হিদায়াত গ্রহণ করে তাদের পরবর্তীতের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। অতএব, যে কেউ তার থেকে উপকৃত হবে, সাহাবীগণ তার সমান সাওয়াব পাবেন, যতক্ষণ না আল্লাহ জমিন ও তার ওপর থাকা সব কিছুর একচ্ছত্র মালিক হবেন। আর তাদের সবার আগে সাওয়াবের হকদার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি কল্যাণ ও হিদায়াত নিয়ে এসেছেন, সুতরাং যে হিদায়াত লাভ করে আল্লাহর দীনে দাখিল হবে ও নেক আমল করবে, আল্লাহ তার নবীকে সেরূপ সাওয়াব দিবেন যেরূপ সাওয়াব দিবেন আমলকারীকে, তবে আমলকারীর সাওয়াব থেকে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না। তার কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করেছেন অতএব, তার জন্য তাদের প্রত্যেকের সমান সাওয়াব হবে, যারা তার হিদায়াত লাভ করে উপকৃত হবে। আবার এ হিদায়াত থেকে বিরাট এক অংশ পাবেন তার সাহাবীগণ, কারণ তারাই সর্বপ্রথম হিদায়াত গ্রহণ করেন ও তাদের পরে আগন্তুকদের নিকট পৌঁছে দেন।

    সর্বপ্রথম সাহাবীগণ কুরআনুল কারিম হিফয ও সংরক্ষণ করেন এবং তাদের পরবর্তীতের নিকট যথাযথভাবে পৌঁছে দেন। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতও তারাই সরাসরি গ্রহণ করেন ও তাদের পরবর্তীতের নিকট পৌঁছে দেন, যে কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতের বিরাট সাওয়াব, অনেক প্রতিদান ও সৌভাগ্যের একটি বড় অংশের প্রাপক সাহাবীগণ, সন্দেহ নেই। সহীহ হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    «نضر الله امرءا سمع مقالتي فوعاها وأداها كما سمعها»

    “আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে তরতাজা করুন, যে আমার কথা শ্রবণ করে সংরক্ষণ করল, অতঃপর যেরূপ শ্রবণ করেছে সেরূপ তা পৌঁছে দিল” বলার অপেক্ষা রাখে না, সাহাবীগণ তার কথা বিনা মাধ্যমে সরাসরি শ্রবণ করেছেন। এ বৈশিষ্ট্য শুধু তাদের, আল্লাহ তাদের সবার ওপর সন্তুষ্ট হোন এবং তাদেরকে সবাইকে সন্তুষ্ট করুন। অতএব, এসব পুণ্যবান মনীষী ও আদর্শ পূর্ব-পুরুষ আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে মজবুত ও সুদৃঢ় এক বন্ধন, যে এ বন্ধনকে দোষারোপ করে সে মূলত উম্মত ও তার নবীর মধ্যবর্তী বন্ধনকে দোষারোপ করে। তাদের গোমরাহী ও লাঞ্ছনার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট আমরা তার থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই।

    সাহাবীদের মর্যাদা সম্পর্কে মনীষীদের বাণী

    আমি এখন কিছু বাণী উল্লেখ করব, যা উম্মতের আদর্শ-পুরুষগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের সম্পর্কে বলেছেন, মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও তাদের অন্তর্ভুক্ত, অতঃপর সেসব বাণীও উল্লেখ করব, যা শুধুমাত্র মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সংশ্লিষ্ট।

    ইমাম তাহাভী রহ. তার প্রসিদ্ধ আকীদা গ্রন্থে বলেন, “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের মহব্বত করি, তাদের কাউকে মহব্বত করার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করি না, তাদের কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি না। সাহাবীদের সাথে যারা বিদ্বেষ পোষণ করে ও খারাপভাবে তাদেরকে স্মরণ করে, আমরা তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করি আমরা যখন তাদের কাউকে স্মরণ করি কল্যাণের সাথেই করি। আমরা বিশ্বাস করি সাহাবীদের মহব্বত করা দীন, ঈমান ও ইহসানের অংশ, আর তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা কুফুরী, নিফাক ও সীমালঙ্ঘনের অংশ”

    তাহাভীয়ার ব্যাখ্যাকার বলেন, “যার অন্তরে সর্বোত্তম উম্মত ও আল্লাহর শ্রেষ্ঠ অলিদের হিংসা রয়েছে, যাদের মর্যাদা নবীদের পর, তার চেয়ে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত কে, বরং ইয়াহূদী-খৃস্টানরাও তার চেয়ে এক বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ। ইয়াহূদীদের বলা হয়েছিল, তোমাদের ধর্মে শ্রেষ্ঠ কারা? তারা উত্তরে বলেছে, মুসার সাথীগণ। খৃস্টানদের বলা হয়েছিল, তোমাদের ধর্মে শ্রেষ্ঠ কারা? তারা উত্তরে বলেছে, ঈসার সাথীগণ। রাফেযীদের (শিয়াদের) বলা হয়েছিল: তোমাদের ধর্মে সবচেয়ে খারাপ কারা? তারা উত্তরে বলেছিল মুহাম্মদের সাথীগণ। এ বিবেচনায় শিয়া-রাফেযীরা ইয়াহূদী-খৃস্টানদের থেকেও নিকৃষ্ট। হাতে গোনা কয়েকজন সাহাবী ব্যতীত কাউকে তারা মন্দ বলা থেকে বাদ রাখে নি। বস্তুত তারা যেসব সাহাবীকে গাল-মন্দ করে, তাদের মধ্যে এমন সাহাবীও আছেন, যারা অনেকগুণ বেশি মর্যাদার অধিকারী সেসব সাহাবী থেকে, যারা তাদের গালমন্দ থেকে রেহাই পেয়েছে”।[3]

    ইমাম বগভি (শারহুস সুন্নাহ) গ্রন্থে বলেন, ইমাম মালিক বলেছেন, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীকে খারাপ জানে ও তার সম্পর্কে বিদ্বেষ লালন করে, মুসলিমদের গণিমতে তার কোনো অংশ নেই। অতঃপর তিনি আল্লাহ তা‘আলার বাণী পড়ে শুনান:

    ﴿مَّآ أَفَآءَ ٱللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِۦ مِنۡ أَهۡلِ ٱلۡقُرَىٰ﴾ إلى قوله تعالى: ﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ﴾ [الحشر: ٧-١٠] 

    “আল্লাহ জনপদবাসীদের নিকট থেকে তার রাসূলকে ফায় হিসেবে যা দিয়েছেন ......এবং যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭-১০]

    ইমাম মালিকের নিকট জনৈক ব্যক্তির আলোচনা হয়, যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের বদনাম করে, তখন তিনি নিচের আয়াত পাঠ করলেন,

    ﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ  تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ  فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِۚ وَمَثَلُهُمۡ فِي ٱلۡإِنجِيلِ كَزَرۡعٍ أَخۡرَجَ شَطۡ‍َٔهُۥ فَ‍َٔازَرَهُۥ فَٱسۡتَغۡلَظَ فَٱسۡتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِۦ يُعۡجِبُ ٱلزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ ٱلۡكُفَّارَۗ ٢٩﴾ [محمد: 29]

    “মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকুকারী, সাজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সাজদাহর চিহ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইঞ্জিলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মতো, যে তার কঁচিপাতা উদগত ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়ে স্বীয় কাণ্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষিকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন”। [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ২৯]

    অতঃপর ইমাম মালিক রহ. বলেন, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবী সম্পর্কে বিদ্বেষ নিয়ে সকাল করবে (বিদ্বেষ পোষণ করবে), নিম্নের আয়াত তার বিপক্ষে অবস্থান নিবে”[4]

    ﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [الحشر: ١٠]

    “এবং যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]

    ইমাম শাওকানরহ. আল্লাহ তা‘আলার উক্ত বাণীর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, মুহাজির ও আনসারদের জন্য ইস্তিগফার শেষে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর, যেন মুমিনদের সম্পর্কে তোমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ না থাকে। অত্র আয়াতে মুমিন বলে যাদেরকে বুঝানো হয়েছে, তাদের ভেতর সাহাবীগণ অবশ্যই দাখিল। কারণ, শ্রেষ্ঠ মুমিন তারাই। অতএব, নির্বিশেষে সকল সাহাবীর জন্য যারা ইস্তেগফার ও আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রার্থনা করে না, তারা অবশ্যই আল্লাহর নির্দেশের বিরোধিতা করছে। আর যদি তাদের অন্তরে সাহাবীদের প্রতি বিদ্বেষ থাকে, সন্দেহ নেই শয়তান তাদেরকে স্পর্শ করেছে, তারা আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত। তারা আল্লাহর অলী ও উম্মতের শ্রেষ্ঠ সদস্যদের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে, তাদের জন্য লাঞ্ছনার দ্বার উন্মুক্ত, যা তাদেরকে জাহান্নামে পৌঁছাবে, যদি তারা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন ও তার নিকট ফরিয়াদ না করে যদি তারা না বলে, হে আল্লাহ! আমাদের অন্তর থেকে সাহাবীদের বিদ্বেষ দূর কর। আর যদি তাদের অন্তরের বিদ্বেষ কোনো সাহাবীকে গাল-মন্দ করতে প্ররোচিত করে, তাহলে তারা তাদের গলার রশি শয়তানের হাতে তুলে দিয়েছে, তারা আল্লাহর গোস্বা ও ক্রোধে নিমজ্জিত, সন্দেহ নেই।

    সাহাবীদের বিদ্বেষ তাকেই আক্রান্ত করে, যে রাফেযীদের কোনো নিদর্শন গ্রহণ করে অথবা উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির শত্রুতায় লিপ্ত হয়, তাকে নিয়ে শয়তান কঠিনভাবে খেলা করে, তার সামনে বানানো মিথ্যা, সাজানো ঘটনা ও চলে আসা কুসংস্কারকে সুশোভিত করে আল্লাহর কিতাব থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখে, যার অগ্র ও পশ্চাৎ দিয়ে শয়তান আসতে পারে না। তাদেরকে আরও দূরে সরিয়ে রাখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত থেকে, যা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে প্রত্যেক যুগের বড় বড় ইমামদের পরম্পরায়। তারা হিদায়াতের পরিবর্তে গোমরাহী ও সফলতার বিনিময়ে ক্ষতিকে ক্রয় করেছে, আর শয়তান তাদেরকে এক ধাপ থেকে অপর ধাপ এবং এক অবস্থা থেকে অপর অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে, ফলে তারা আল্লাহর কিতাব, তার রাসূলের সুন্নত, সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত, আল্লাহর ভালো বান্দা ও সকল মুমিনের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। তারা আল্লাহর ফরয ছেড়ে, তার দীনের নিদর্শনকে বাদ দিয়ে ইসলাম ও তার অনুসারীদের ষড়যন্ত্রে সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আল্লাহর দীন ও তার অনুসারীদের বিপক্ষে তারা প্রত্যেক শহর ও গ্রামে অবস্থান নিয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই বেষ্টন করে আছেন। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় শাওকানি রহ. এসব আলোচনা করেছেন।

    অতঃপর তিনি বলেন, সা‘দ ইবন ওয়াক্কাস বলেছেন, “মানুষ তিনটি স্তরে বিভক্ত, দু’টি স্তর চলে গেছে, একটি স্তর বাকি আছে। তৃতীয় স্তরের ভেতর সর্বোত্তম তারাই, যারা নিম্নের আয়াতের অনুসারী, তারপর তিনি তিলাওয়াত করেন:

    ﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ﴾ [الحشر: ١٠]

    “এবং যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে: হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]

    আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, মানুষকে নির্দেশ করা হয়েছে সাহাবীদের জন্য ইস্তেগফার কর, কিন্তু তারা তাদেরকে গাল-মন্দ করেছে। অতঃপর তিনি নিম্নের আয়াত পাঠ করেন।[5]

    ﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ﴾ [الحشر: ١٠]

    গ্রন্থকার আব্দুল মুহসিন বলেন, ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থের শেষে এ হাদীস এনেছেন; কিন্তু তিনি উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন নি।

    ইমাম নাওয়াওয়ী মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, কাদী ইয়াদ বলেছেন, “বাহ্যত বুঝা যায়, আয়েশা এ কথা তখন বলেছেন, যখন শুনেছেন মিসরিরা উসমান সম্পর্কে কিছু বলছে, শামের লোকেরা আলী সম্পর্কে কিছু বলছে এবং হারুরিরা সকল সাহাবী সম্পর্কেই আজে-বাজে বকছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ইস্তেগফার দ্বারা আল্লাহ তাআলার নিম্নের বাণীর দিকে ইঙ্গিত করেছেন:

    ﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ [الحشر: ١٠]

    এ আয়াত থেকে ইমাম মালিক রহ. বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো সাহাবীকে গাল-মন্দ করে, মুসলিমদের গণিমতের তার কোনো হক নেই। কারণ, আল্লাহ তাআলা গণিমতের হক তাদেরকে দিয়েছেন, যারা পরে এসে পূর্ববর্তী সাহাবীদের জন্য ইস্তেগফার করে। আল্লাহ ভালো জানেন।[6]

    ইবন উমার থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তিকে কতক মুহাজিরের সমালোচনা করতে শুনেন, তিনি তার সামনে পড়লেন: (للفقراء المهاجرين)  অতঃপর বলেন, এরা হলেন মুহাজির, তুমি কি তাদের কেউ? সে বলল, না, অতঃপর পাঠ করলেন: (والذين تبوءوا الدار والإيمان)  এবার বলেন, এরা হলেন আনসারী, তুমি কি তাদের কেউ? সে বলল: না, অতঃপর পড়লেন: (والذين جاءوا من بعدهم) এরা হলেন পরবর্তী অনুসারী, তুমি কি তাদের কেউ? সে বলল, আশা করছিতিনি বলেন, যে সাহাবীদের গাল-মন্দ করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।[7]

    ‘কিতাবুস সুন্নাহ’-তে ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের ব্যাপারে সুন্দর নীতি অবলম্বন করা ও তাদের মাঝে সংঘটিত যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পর্কে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা সুন্নত। যে সকল লোক সাহাবীকে গাল-মন্দ করে অথবা তাদের কোনো একজনকে গাল-মন্দ করে সে রাফেযী বিদ‘আতী সাহাবীদের মহব্বত করা সুন্নত, তাদের জন্য দোআ করা আল্লাহর নির্দেশ, তাদের অনুসরণ করা ইবাদত ও তাদের আদর্শ গ্রহণ করা সৌভাগ্য।

    তিনি আরও বলেন, সাহাবীদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা ও তাদের ছিদ্রান্বেষণ করা কারো জন্যই বৈধ নয়। শাসকের কর্তব্য এরূপ ব্যক্তিকে শাসানো ও শাস্তি প্রদান করা, তাদেরকে ক্ষমা করার অধিকার শাসকের নেই, বরং শাসক প্রথম তাদেরকে শাস্তি দিবে অতঃপর তাওবা তলব করবে, যদি তওবা করে গ্রহণ করা হবে, অন্যথায় পুনরায় শাস্তি দিয়ে জেলে দিবে, যতক্ষণ না তাওবা করে ফিরে আসে”।

    ইমাম আবু উসমান সাবুনী (আকীদাতুস সালাফ ও আসহাবুল হাদীস) গ্রন্থে বলেন, সালাফ ও আসহাবুল হাদীসগণ সাহাবীদের মাঝে সংঘটিত যুদ্ধ-বিগ্রহ ও তাদের সম্পর্কে এমন আলোচনা থেকে জিহ্বাকে বিরত রাখেন, যা তাদের দোষ অথবা ত্রুটিকে প্রকাশ করে, বরং তারা সবার জন্য দোআ করে ও তাদের সবার সাথে বন্ধুত্ব কায়েম করে”

    শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ (আল-আকদা আল-ওয়াসিতিয়্যাহ) গ্রন্থে বলেন, “আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নীতি হচ্ছে, অন্তর ও মুখকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের দোষ চর্চা থেকে নিরাপদ রাখা যেমন, আল্লাহ তাআলা নিম্নের বাণীতে বলেছেন,

    ﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [الحشر: ١٠]

    “এবং যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলে: হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]

    সাহাবীদের সম্পর্কে স্বীয় অন্তর ও মুখকে যে নিরাপদ রাখে, সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ পালন করে, কারণ তিনি বলেছেন,

    «لاتسبوا أصحابي فوالذي نفسي بيده لو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولانصيفه».

    “তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গাল-মন্দ কর না, সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার নফস, যদি তোমাদের কেউ উহুদ পরিমাণ স্বর্ণ সদকা করে, তাদের কারো এক মুদ অথবা অর্ধ মুদ পর্যন্ত পৌঁছবে না”অতঃপর ইবন তাইমিয়াহ বলেন, “আহলুস সুন্নাহ রাফেযীদের থেকে আলাদা, যারা সাহাবীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ ও তাদেরকে গাল-মন্দ করে, অনুরূপ নাসেবিদের থেকেও আলাদা, যারা কথা ও কাজ দিয়ে আহলে বায়েতকে কষ্ট দেয়আহলুস সুন্নাহ সাহাবীদের মাঝে সংঘটিত যুদ্ধ-বিগ্রহ বিষয় মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে। তারা বিশ্বাস করে, সাহাবীদের বদনাম সংক্রান্ত কতক বর্ণনা মিথ্যা, কতক বর্ণনা সীমালঙ্ঘন ও কতক বর্ণনা সঠিকভাবে পেশ করা হয় নি।”

    সাহাবীদের বিরোধের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ অভিমত হচ্ছে: এসব বিরোধের জন্য তারা অপারগ ছিলেন। কেউ ছিলেন সঠিক ইজতিহাদকারী, কেউ ছিলেন ভুল ইজতিহাদকারী। এতদ সত্ত্বেও আহলুস সুন্নাহ বিশ্বাস করে না যে, প্রত্যেক সাহাবী ছোট-বড় সকল পাপ থেকে মুক্ত ছিলেন, বরং মোটের ওপর তাদের থেকে পাপ প্রকাশ পাওয়া সম্ভব। তবে তাদের যে আমল ও ফযীলত রয়েছে, সেটি তাদের থেকে প্রকাশ পাওয়া পাপকে মোচন করার জন্য যথেষ্ট, যদি পাপ প্রকাশ পায়। এমন কি তাদের যেসব পাপ মোচন হবে, পরবর্তীদের তা হবে না, কারণ তাদের পাপ মোচনকারী অনেক নেকি রয়েছে, যেরূপ নেকি পরবর্তী কোনো উম্মতের নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, সাহাবীগণ সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত, তারা যদি একমুদ সদকা করেন, সেটি তাদের পরবর্তী কারো উহুদ পাহাড় পরিমাণ সদকার চেয়েও উত্তম। যদি তাদের থেকে কোনো পাপ প্রকাশ পায়, অবশ্যই তারা সে পাপ থেকে তাওবা করেছেন, অথবা এমন কোনো নেক কাজ করেছেন যেটি তাদের পাপকে নিঃশেষ করে দিয়েছে, অথবা তাদের পাপকে পূর্বের ফযীলতের কারণে আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ দ্বারা তাদের পাপকে ক্ষমা করা হবে, কারণ তার সুপারিশের অধিক হকদার তারাই অথবা দুনিয়াতে কোনো মুসীবত দিয়ে তাদের পাপ মোচন করা হয়েছেএসব কথা হচ্ছে তাদের প্রমাণিত পাপের ক্ষেত্রে, পক্ষান্তরে যেখানে তারা ইজতিহাদ করেছেন তাতে বলার কি আছে?! যদি সঠিক করে থাকেন দু’টি সাওয়াব, ভুল করলে একটি সাওয়াব, আর ভুলটি ক্ষমাযোগ্য।

    প্রকৃতপক্ষে, সাহাবীদের যেসব কাজের সমালোচনা করা হয়, সেগুলো তাদের নেকি, ভালো কাজ ও মর্যাদার বিপরীত অনেক কম। যেমন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা, তার রাস্তায় জিহাদ করা, হিজরত ও সাহায্য করা, ইলমে নাফে‘ অর্জন ও নেক আমল করা ইত্যাদি। সাহাবীগণের জীবন চরিত যে বিবেক ও বিচক্ষণতার দৃষ্টিতে দেখবে, আল্লাহর দেওয়া তাদের ফযীলত যে পর্যালোচনা করবে, সে অবশ্যই জানবে নবীদের পরেই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত তারা। তাদের সমান আগেও কেউ ছিল না, পরেও কেউ হবে না। তারা এ উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম সদস্য এবং আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত”

    শাইখ ইয়াহইয়া ইবন আবু বকর আল-আমেরী ইয়ামানী (রিয়াদুল মুস্তাতাবাহ ফি মান লাহু রিওয়াইয়াহ ফিস সাহিহাইন মিনাস সাহাবাহ) গ্রন্থে বলেন, “দীনদার ও নিরাপত্তার অনুসন্ধানী প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষে জরুরি সাহাবীদের বিষয়গুলো সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা, তাদের পরস্পরের মাঝে সৃষ্ট ইখতিলাফ ও মতবিরোধ এবং তাদের ভুলের স্বপক্ষে ওজর পেশ করা ও সঠিক কারণ দর্শানো। তাদের ইখতিলাফ থেকে বের হওয়ার উত্তম পথ খুঁজে বের করা। সাহাবীদের ইজমাকে মেনে নেওয়া কারণ, তাদের অবস্থা সম্পর্কে তারাই বেশি জানতেন। উপস্থিত ব্যক্তি যা দেখেন, অনুপস্থিত ব্যক্তি তা দেখেন না। জ্ঞানীদের আদর্শ দোষ করলে কারণ অনুসন্ধান করা, আর মুনাফিকদের নীতি ছিদ্রান্বেষণ করা। উপরন্তু দীনের সাধারণ বিধান হচ্ছে মুসলিমদের অপরাধ ঢেকে রাখা। অতএব, সাহাবীদের দোষের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি হওয়া উচিৎ? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    « لاتسبوا أحدا من أصحابي» وقوله صلى الله عليه و سلم «من حسن إسلام المرء تركه مالا يعنيه»

    “তোমরা আমার সাহাবীদের কাউকে গাল-মন্দ কর না”। তিনি অন্যত্র বলেছেন, “ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণ করার সৌন্দর্য হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় বিষয় ত্যাগ করা” এটাই আমাদের আদর্শ এবং পূর্বপুরুষদের নীতি। এ ছাড়া অন্যান্য পথ পতনের কারণ ও ধ্বংস ব্যতীত কিছু নয়”।[8]

    হাফিয ইবন হাজার (ফাতহুল বারি) গ্রন্থে বর্ণনা করেন: “আবু মুজাফফার বলেছেন, ব্যক্তির লাঞ্ছিত হওয়ার প্রমাণ সাহাবীদের কোনো বিচ্যুতির পিছু নেওয়া, বরং এটি তার বিদআত ও গোমরাহীর নিদর্শন”।[9]

    মায়মুনি রহ. বলেন, “আমাকে আহমদ ইবন হাম্বল বলেছেন, হে আবুল হাসান, যখন কোনো ব্যক্তিকে দেখ, কোনো সাহাবীকে খারাপভাবে উল্লেখ করছে, তার ইসলাম সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ কর”।[10]

    খতীব বাগদাদী (আল-কিফায়াহ) গ্রন্থে বর্ণনা করেন: আবু যুর‘আহ বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তিকে দেখ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীকে অসম্মান করছে, জেনে নাও সে যিন্দিক। (গোপন কাফের) তার কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হক, কুরআনও হক। আর কুরআন ও সুন্নতকে আমাদের নিকট পৌঁছিয়েছেন তার সাহাবীগণ। সে চাচ্ছে সাহাবীগণ মিথ্যা ও বাতিল প্রমাণিত হোক, যার পশ্চাতে কিতাব ও সুন্নাহ স্বাভাবিক ভাবেই বাতিল প্রমাণিত হবে, প্রকৃতপক্ষে তারা বাতিল ও যিন্দিক, এ কথাই ঠিক”[11]

    ﴿وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ ١٠٠﴾ [التوبة: 100]

    হাফিয ইবন কাসির রহ. আল্লাহ তা‘আলার উক্ত বাণীর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, “আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে জানাচ্ছেন যে, তিনি মুহাজির ও আনসারদের ওপর সন্তুষ্ট, অনুরূপ সন্তুষ্ট ইহসানের সাথে তাদের অনুসারীদের ওপর সুতরাং যে তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে অথবা তাদের সবাইকে গাল-মন্দ করে অথবা তাদের কোনো একজনকে অপছন্দ বা গাল-মন্দ করে তার জন্য ধ্বংস অবধারিত। বিশেষভাবে সাহাবীদের সরদার, রাসূলের পর সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সাথে যে অসদাচরণ করে, যেমন প্রথম সিদ্দিক ও মহান খলিফা আবু বকর ইবন আবু কুহাফা। রাফেযীদের হতভাগা একটি দল শ্রেষ্ঠ সাহাবীদের অপছন্দ ও গাল-মন্দ করে, তাদের আচরণ থেকে আল্লাহ আমাদেরকে মুক্ত রাখুন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, তাদের অন্তরগুলো বক্র ও দিকভ্রান্ত। আল্লাহ যাদের ওপর সন্তুষ্ট, তাদেরকে যখন তারা গাল-মন্দ করে, তখন কুরআনের প্রতি তাদের ঈমান কোথায় থাকে?!

    আল্লাহ যাদের ওপর সন্তুষ্ট, আহলুস সুন্নাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট আল্লাহ ও তার রাসূল যাদেরকে গাল-মন্দ করে, তাদেরকে তারাও গাল-মন্দ করে। যে আল্লাহর সাথে বন্ধুত্ব করে, তার সাথে তারাও বন্ধুত্ব করে, অনুরূপ যে আল্লাহর সাথে শত্রুতা করে, তার সাথে তারাও শত্রুতা করে। আহলুস সুন্নাহ পূর্বসূরিদের অনুসরণ করে, বিদআত তৈরি করে না, তারা পূর্বসূরিদের পশ্চাতে চলে, নতুন রাস্তা সৃষ্টি করে না। প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর দল ও মুমিন বান্দা।”

    হাফিয ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেন, “আহলুস সুন্নাহ সবাই একমত যে, সাহাবীদের মাঝে যেসব যুদ্ধ ও মতভেদ সংঘটিত হয়েছে, সে জন্য তাদেরকে গাল-মন্দ করা যাবে না, যদিও জানা যায় তাদের ভেতর কে সঠিক ছিল, কারণ তারা ইজতিহাদ ব্যতীত কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হননি। যার ইজতিহাদ ভুল, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, বরং সে একটি সাওয়াব লাভ করবে, আর যার ইজতিহাদ সঠিক তার জন্য রয়েছে দু’টি সাওয়াব”।[12]


     

    মুয়াবিয়া সম্পর্কে ইনসাফপন্থীদের বাণী:

    ইবন কুদামাহ (লুম‘আতুল ই‘তিকাদ) গ্রন্থে বলেন, “মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান মুমিনদের খালু, আল্লাহর ওহি লেখক ও মুসলিমদের একজন খলিফাতাদের সবার ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হোন ও তাদের সবাইকে সন্তুষ্ট করুন”।

    (আকীদাতুত তাহাভিয়া) গ্রন্থের ব্যাখ্যাকার বলেন, “মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু মুসলিমদের প্রথম বাদশাহ, মুসলিমদের যত বাদশাহ হবে তাদের ভেতর তিনিই শ্রেষ্ঠ”

    ইমাম যাহাবী রহ. (সিয়ারু আলামিন নুবালা) গ্রন্থে বলেন, “মুয়াবিয়া ছিলেন আমিরুল মুমিনীন ও ইসলামের বাদশাহ”।

    ইমাম বায়হাকী বর্ণনা করেন: আহমদ ইবন হাম্বল বলেছেন, “আবু বকর, উমার, উসমান ও আলী ছিলেন খলিফা। জিজ্ঞেস করা হলো: মুয়াবিয়া সম্পর্কে কী বলেন, তিনি উত্তর দিলেন: আলীর যুগে আলী থেকে অধিক কেউ খিলাফতের যোগ্য ছিল না, আর মুয়াবিয়ার ওপর আল্লাহ রহম করুন”

    ইবন আবুদ দুনিয়া বর্ণনা করেন, উমার ইবন আব্দুল আযীয বলেছেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখলাম, তার পাশে আবু বকর ও উমারকেও বসা দেখলাম। আমি তাকে সালাম দিয়ে বসে যাই, এমতাবস্থায় আলী ও মুয়াবিয়াকে আনা হল এবং তাদেরকে একটি ঘরে দাখিল করে দরজা বন্ধ করা হল। আমি দেখলাম আলী খুব দ্রুত বের হলেন, আর বললেন, কাবার রবের কসম, আমার পক্ষেই ফয়সালা করা হয়েছেঅতঃপর মুয়াবিয়া খুব দ্রুত বের হলেন এবং বললেন, কাবার রবের কসম, আমাকে ক্ষমা করা হয়েছে”।

    ইবন আসাকির বর্ণনা করেন: আবু যুর‘আহ আর-রাযীকে জনৈক ব্যক্তি বলল, আমি মুয়াবিয়াকে পছন্দ করি না, তিনি বললেন, কেন? সে বলল: কারণ সে আলীর সাথে যুদ্ধ করেছে। আবু যুর‘আহ বললেন, মুয়াবিয়ার রব খুব রহমশীল, আর মুয়াবিয়ার বিবাদীও খুব ভদ্র, তাদের মাঝে তোমাকে প্রবেশ করার অধিকার কে দিল?

    ইমাম আহমদ ইবন হাম্বলকে মুয়াবিয়া ও আলীর মাঝে সংঘটিত ঘটনাবলি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি উত্তর দিলেন:

    ﴿تِلۡكَ أُمَّةٞ قَدۡ خَلَتۡۖ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَلَكُم مَّا كَسَبۡتُمۡۖ وَلَا تُسۡ‍َٔلُونَ عَمَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٤١﴾ [البقرة: 141]

    “সেটা ছিল একটি উম্মত, যারা বিগত হয়েছে। তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের জন্য আর তোমরা যা অর্জন করেছ তা তোমাদের জন্য। আর তারা যা করেছে সে সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪১]

    এ কথাই বলেছেন একাধিক আদর্শ পুরুষ। মুয়াবিয়া সম্পর্কে ইবন মুবারককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি বললেন, আমি এমন ব্যক্তি সম্পর্কে কি বলব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বলেছেন, «سمع الله لمن حمده» তার পশ্চাতে সে বলেছে: «ربنا ولك الحمد» আমরা সবাই জানি যে, সামিয়া অর্থ ইস্তাজাবাহ, অর্থাৎ আল্লাহ কবুল করেছেন। মুয়াবিয়া রাসূলের পেছনে সালাত পড়েছেন, তিনি যখন সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলেছেন, তার পশ্চাতে মুয়াবিয়া রাব্বানা লাকাল হামদ বলেছেন। এ ফযীলত সমালোচকদের নেই। ইবন মুবারককে কেউ জিজ্ঞেস করল: কে উত্তম, মুয়াবিয়া না উমার ইবন আব্দুল আযীয? তিনি বললেন, মুয়াবিয়ার নাকের মাটিও উমার ইবন আব্দুল আযীয থেকে উত্তম”

    মুয়াফা ইবন ইমরানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: কে উত্তম, মুয়াবিয়া না উমার ইবন আব্দুল আযীয? তিনি রেগে গেলেন এবং প্রশ্নকারীকে বললেন, কোনো সাহাবীকে তুমি তাবেঈনদের সমান গণ্য কর? মুয়াবিয়া রাসূলের সাথী, শ্যালক, লেখক ও আল্লাহর ওহীর আমানতদার”।

    ফাদল ইবন যিয়াদ বলেন, আবু আব্দুল্লাহকে বলতে শুনেছি, যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মুয়াবিয়া ও আমর ইবনুল আসকে যে গাল-মন্দ করে, তাকে কি রাফেযী বলা যাবে? তিনি উত্তর দিলেন: সাহাবীদের ব্যাপারে একমাত্র তারাই (রাফেযীরাই গালি দেওয়ার) দুঃসাহস দেখায়, যাদের অন্তরে খারাপি রয়েছে। অন্তরে খারাপি না থাকলে কেউ কোনো সাহাবীর অসম্মান করতে পারে না।

    মুহাম্মদ ইবন মুসলিম সূত্রে ইবন মুবারক বর্ণনা করেন, ইবরাহিম ইবন মায়সারাহ বলেছেন, আমি কখনো দেখি নি উমার ইবন আব্দুল আযীয কাউকে প্রহার করেছেন, তবে এক ব্যক্তিকে কয়েকটি বেত্রাঘাত করতে দেখেছি, যে মুয়াবিয়াকে গাল-মন্দ করেছিল”।

    আবু তাওবাহ বলেন, মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের জন্য পর্দা স্বরূপ, যে কেউ এ পর্দা উন্মুক্ত করার দুঃসাহস দেখাবে, সে তার ভেতরে প্রবেশ করারও দুঃসাহস করবে, সন্দেহ নেই”

    উপরের অধিকাংশ বর্ণনা আল-বিদায়াহ ও আল-নিহায়াহ গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত, যা ইবন কাসির রহ. মুয়াবিয়া প্রসঙ্গে উদ্ধৃত করেছেন।[13]

    ইমাম বুখারী (ফাযায়েলুস সাহাবাহ) সংক্রান্ত অধ্যায়ে একটি অনুচ্ছেদ কায়েম করেছেন, যার শিরোনাম: (মুয়াবিয়ার আলোচনা সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ) এতে তিনি তিনটি হাদীস উল্লেখ করেছেন:

    ১. ইবন আবু মুলাইকাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “মুয়াবিয়া এশার পর এক রাকাত দিয়ে বিতর পড়েছেন, তখন ইবন আব্বাসের নিকট কেউ এসে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল, তিনি বললেন, তাকে করতে দাও কারণ, তিনি রাসূলুল্লাহর সাহচর্য গ্রহণ করেছেন”

    ২. ইবন আবু মুলাইকাহ থেকে বর্ণিত, ইবন আব্বাসকে বলা হলো: আমিরুল মুমিনীন মুয়াবিয়াকে আপনি কিছু বলবেন কি? কারণ, সে এক রাকাত দিয়ে বিতর পড়েছে তিনি বললেন, তিনি ফকীহ”।

    ৩. মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম, কিন্তু তোমরা যে সালাত আদায় কর, সে সালাত তাকে আদায় করতে দেখি নি। তিনি আমাদেরকে আসরের পর দু’রাকাত সালাত থেকে নিষেধ করেছেন”।

    হাফিয ইবন হাজার বুখারীর ব্যাখ্যায় বলেন, “ইমাম বুখারী মুয়াবিয়া সম্পর্কে যিকর শব্দ উল্লেখ করেছেন, যার বাংলা অর্থ আলোচনা। ফযীলত বা গুণাবলি অর্থ প্রকাশ করে এমন শব্দ তিনি ব্যবহার করেননি, কারণ অনুচ্ছেদের হাদীস থেকে মুয়াবিয়ার ফযীলত প্রমাণ হয় না, তবে ইবন আব্বাস তাকে যে ফকীহ ও সাহাবী বলেছেন এ থেকে তার ফযীলত প্রমাণ হয় মুয়াবিয়ার ফযীলত সম্পর্কে ইবন আবু আসিম একটি পুস্তিকা লিখেছেন। অনুরূপ তার ফযীলত সম্পর্কে আরও লিখেছেন আবু উমার ও আবু বকর নাক্কাশ। এসব গ্রন্থে তারা মুয়াবিয়ার ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস উল্লেখ করেছেন, যার বেশ কিছু হাদীসকে ইবনুল জাওযী মাওদু‘আত গ্রন্থে বানোয়াট বলেছেন। অতঃপর ইবনুল জাওযী বলেন, ইসহাক ইবন রাহওয়াইহ বলেছেন, মুয়াবিয়ার ফযীলত সংক্রান্ত বিশুদ্ধ কোনো হাদীস নেই। এ রহস্যের কারণেই ইমাম বুখারী উস্তাদের কথা আমলে নিয়ে মুয়াবিয়ার ফযীলত বা গুণাবলি বলেন নি; বরং এমন শব্দ ব্যবহার করেছেন, যার বাংলা অর্থ আলোচনা, তবে তিনি খুব সূক্ষ্মভাবে ইজতিহাদ করেছেন, যার দ্বারা রাফেযীরা প্রত্যাখ্যাত হয়”।[14]

    সহীহ মুসলিমে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াবিয়া সম্পর্কে বলেছেন, “আল্লাহ তার পেট পূর্ণ না করুন”মুসলিম স্বীয় সনদে ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি বাচ্চাদের সাথে খেলতে ছিলাম, এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে পড়েন, ফলে আমি দরজার আড়ালে লুকিয়ে যাই। তিনি আমাকে দু’হাত দিয়ে ঘাড়ের উপর আঘাত করলেন এবং বললেন, যাও, মুয়াবিয়াকে ডেকে আন তিনি বলেন, আমি গেলাম এবং ফিরে এসে বললাম মুয়াবিয়া খাচ্ছে। তিনি আবার বললেন, যাও, তাকে ডেকে আন। তিনি বলেন, আমি ফিরে এসে বললাম, মুয়াবিয়া খাচ্ছেতখন তিনি বললেন, «لا أشبع الله بطنه» আল্লাহ তার পেট পূর্ণ না করুন।

    ইমাম মুসলিম এ হাদীসের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দোআ সংক্রান্ত হাদীসগুলো সমাপ্ত করেছেন, যার উদ্দেশ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে বদ দোআ ও গাল-মন্দ প্রকাশ পায়, যদি ঐ ব্যক্তি তার উপযুক্ত না হয়, তাহলে এগুলো তার জন্য পবিত্রতা, রহমত ও সাওয়াবের দোআয় পরিণত হয়, অতএব, মুয়াবিয়া সম্পর্কে বাহ্যত বদ-দোআ প্রকৃতপক্ষে দোআ, যেমন তিনি অন্যান্য সাহাবীর ক্ষেত্রে বলেছেন, «تربت يمينك» তোমার হাত ধুলো মলিন হোক। «وثكلتك أمك» তোমার সর্বনাশ হোক। «عَقْرَى حَلْقَى» তোমার সন্তান না হোক। «لاكبرت سنك» তোমার বয়স না বাড়ুক।

    ইমাম মুসলিম এ জাতীয় কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেছেন, তার ভেতর মুয়াবিয়ার হাদীস একটি। তার পূর্বে রয়েছে আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীস আনাস বলেন, উম্মে সুলাইমের নিকট এক ইয়াতীম মেয়ে ছিল, উম্মে সুলাইম মূলত তারই মা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াতিম মেয়েটি দেখে বলেন, “তুমিই কি সেই মেয়ে, তুমি তো বড় হয়ে গিয়েছ, তোমার বয়স না বাড়ুক”মেয়েটি উম্মে সুলাইমের নিকট কাঁদতে কাঁদতে গেল। উম্মে সুলাইম বললেন, হে মেয়ে, তোমার কি হয়েছে? সে বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বদ-দোআ করেছেন। এখন থেকে আমি বড় হবো না। উম্মে সুলাইম মাটিতে ওড়না হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে দ্রুত রাসূলকে গিয়ে ধরলেন। রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু বললেন, হে উম্মে সুলাইম, কি হয়েছে? সে বলল: আল্লাহর রাসূল, আমার ইয়াতিম মেয়েটিকে আপনি বদ-দোআ করেছেন? তিনি বললেন, উম্মে সুলাইম, সে কি? সে বলল: মেয়েটি মনে করছে, আপনি তাকে বদ-দোআ করেছেন, যেন তার বয়স না বাড়ুক। আনাস বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন। অতঃপর বললেন, হে উম্মে সুলাইম, আমার রবের নিকট আমর শর্তগুলো তুমি জান না, আমার রবের কাছে শর্ত করেছি যে, আমি একজন মানুষ, মানুষ যেরূপ সন্তুষ্ট হয় আমিও সেরূপ সন্তুষ্ট হই, মানুষ যেরূপ রাগ করে আমিও সেরূপ রাগ করি। আমার যে উম্মতের ওপর আমি বদ-দোআ করি, যার উপযুক্ত সে নয়, সেটিকে তার জন্য পবিত্রতা ও নৈকট্য বানিয়ে দিন, যার বিনিময়ে কিয়ামতের দিন আপনি তাকে নৈকট্য দিবেন”।

    এ হাদীস শেষে ইমাম মুসলিম মুয়াবিয়ার দোআ সংক্রান্ত হাদীস এনেছেন, যাতে রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তার পেট পূর্ণ না করুন। লক্ষ্য করুন, ইমাম মুসলিম একটি জটিল বিষয়কে খুব চমৎকারভাবে সমাধান করেছেন, অন্যথায় মুয়াবিয়া সম্পর্কে অনেকের ধারণা খারাপ হত। এটাই তার কিতাবের এক বড় বৈশিষ্ট্য। এখানে প্রমাণ হয় তার সূক্ষ্ম বুঝ ও তীক্ষ্ণ ইজতিহাদ। আল্লাহ তার ওপর রহম করুন।

    ইমাম নাওয়াওয়ী মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, “ইমাম মুসলিম এ হাদীস থেকে বুঝেছেন, মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বদ দোআর উপযুক্ত ছিলেন না, তাই এখানে তার আলোচনা করেছেন। ইমাম মুসলিম ব্যতীত অন্যান্য মুহাদ্দিস এটাকে মুয়াবিয়ার প্রশংসা গণ্য করেছেন, কারণ তারা জেনেছেন পরবর্তীতে এটা মুয়াবিয়ার জন্য দোআয় পরিণত হয়েছে।

    ﴿وَمَن قُتِلَ مَظۡلُومٗا فَقَدۡ جَعَلۡنَا لِوَلِيِّهِۦ سُلۡطَٰنٗا فَلَا يُسۡرِف فِّي ٱلۡقَتۡلِۖ إِنَّهُۥ كَانَ مَنصُورٗا ٣٣﴾ [الإسراء: 33]

    ইবন কাসির রহ. আল্লাহ তা‘আলার উক্ত বাণীর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন, অত্র আয়াতের ব্যাপকতা থেকে ইবন আব্বাস বুঝেছেন যে, মুয়াবিয়া কর্তৃত্বের অধিকারী ও রাজত্বের মালিক হবেন কারণ, তিনি উসমানের অলী তথা অভিভাবক ছিলেন। উসমানকে মযলুম অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট দাবি করেছেন, যেন তার কাছে উসমানের হত্যাকারীদের সোপর্দ করা হয়, তিনি তাদের থেকে কিসাস নিবেন; কারণ, তিনি উমাওয়ী তথা উসমানের বংশধরএ দিকে আলী চেয়েছেন তার কাছে সুযোগ আসুক, যেন তার ক্ষমতা দৃঢ় ও পরিপক্ব হয়, তাই মুয়াবিয়াকে বলছেন আমার হাতে আগে শামকে সোপর্দ করুন। মুয়াবিয়া শামকে সোপর্দ করতে অস্বীকার করেন, যতক্ষণ না তার নিকট উসমানের হত্যাকারীদের সোপর্দ করা হয়। এ অজুহাতে তিনি ও শামের লোকেরা আলীর নিকট বায়‘আত থেকে বিরত থাকেন, অতঃপর দীর্ঘ সময় পর মুয়াবিয়া শক্তিশালী হন ও তার নিকট রাজত্ব চলে যায়, যেমন ইবন আব্বাস এই আয়াত থেকে ইজতিহাদ করেছেন। এটা আশ্চর্য ঘটনার একটি”।[15]

    সহীহ বুখারীতে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আনসারিদের মহব্বত করা ঈমানের নিদর্শন, আর তাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা নিফাকের নিদর্শন”

    হাফিয ইবন হাজার (ফাতহুল বারি) গ্রন্থে বলেন, আনসারদের ফযীলত তাদেরও হাসিল হবে, যারা আনসারদের ন্যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহায্য করার কাজে অংশীদারি হবে। অতঃপর তিনি বলেন, সহীহ মুসলিমে আলী রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, “মুমিন ছাড়া কেউ তোমাকে মহব্বত করবে না এবং মুনাফিক ব্যতীত কেউ তোমাকে অপছন্দ করবে না”। এ ফযীলত অন্যান্য সাহাবীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

    (আল-মুফহিম) এর গ্রন্থকার বলেন, “যেসব যুদ্ধ-বিগ্রহ সাহাবীদের মাঝে সংঘটিত হয়েছে, তাতে যদিও একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ ছিল, তবে সেটা নিফাক পর্যায়ের ছিল না, বরং কোনো এক বিশেষ পরিস্থিতির কারণে ছিল, যার থেকে বিরোধিতার সৃষ্টি হয়েছে এ জন্য কেউ কাউকে নিফাকের দোষে দুষ্ট বলেন নি, এসব ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা ছিল মুজতাহিদের মত, যে ঠিক করেছে তার দু’টি সাওয়াব আর যে ভুল করেছে তার একটি সাওয়াব। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।[16]

    শাইখ ইয়াহইয়া ইবন আবু বকর আমেরী ইয়ামানী আবু মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবনী আলোচনায় বলেন, মুহাম্মদ ইবন ইবরাহীম বর্ণনা করেছেন: “ইসলামের শুরুতে আলীর বিদ্বেষ নিফাকের আলামত ছিল। কারণ, সে ছিল মুনাফিকদের আতঙ্ক। অনুরূপ হাদীসে এসেছে আনসারদের বিদ্বেষও নিফাকের আলামত। আবার আনসারদের মহব্বত যেরূপ ঈমানের আলামত, আলীর মহব্বতও ঈমানের আলামত।

    মুহাম্মদ ইবন ইবরাহীম আরও বলেন, খারেজিরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পছন্দ করে না; বরং তাকে কাফির বলে অথচ তারা মুনাফিক নয়, তবে তাদের অপরাধ অনেক বড়। দলীল বলে, তারা ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন দল। অনুরূপ বাতেনিরা আলিকে মহব্বত করে, অথচ সবার কাছে তারা কাফির। রাফেযীরাও আলিকে মহব্বত করে, অথচ তাদের গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতা সবার নিকট স্পষ্ট। যাই বলা হোক যার অন্তর পরিশুদ্ধ এবং যার দীন সঠিক আছে, তার থেকে কখনো সাহাবীদের গাল-মন্দ, তাদের ছিদ্রান্বেষণ ও সমালোচনা প্রকাশ পেতে পারে না। আল্লাহর নিকট পানাহ চাই”[17]

    ইমাম যাহাবী (মিযানুল ই‘তিদাল) গ্রন্থে বলেন, “যদি প্রশ্ন করা হয়, একজন বিদ‘আতীকে কিভাবে আপনারা নির্ভরযোগ্য বলেন এবং সেকাহ রাবী তথা নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর বিশেষণ, যেমন আদালাত ও ইতকান দ্বারা কীভাবে তাকে বিশেষায়িত করেন? বিদ‘আতী কীভাবে আদিল তথা নির্ভরযোগ্য হয়?! এ প্রশ্নের উত্তর: বিদআত দু’প্রকার: ছোট বিদআত, যেমন সীমালঙ্ঘন ও অতিরঞ্জন ব্যতীত শিয়া মতবাদতাবেঈ ও তাদের কতক অনুসারীর ভেতর এ জাতীয় বিদআত ছিল, যদিও তাদের দীনদারি, তাকওয়া ও সততার ঘাটতি ছিল না। এমতাবস্থায় তাদের হাদীস যদি প্রত্যাখ্যান করা হয়, তাহলে হাদীসের বিরাট অংশ হাতছাড়া হবে সন্দেহ নেই। অতএব, গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া হাদীসের বড় অংশ প্রত্যাখ্যান করা একটি বড় ভুল, সন্দেহ নেই।

    দ্বিতীয় প্রকার, বড় বিদআত যেমন, পরিপূর্ণভাবে রাফেযী হওয়া, রাফেযী মতবাদ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা, আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখদের সম্মানহানি করা। এ জাতীয় মতবাদ প্রচার করা বড় বিদআত এরূপ বিদআতী নির্ভরযোগ্য নয়, বরং লাঞ্ছিত। বর্তমান এমন কোনো রাফেযী নেই যে সত্যবাদী ও বিশ্বাসযোগ্য, বরং মিথ্যাই তাদের প্রতীক, তুকইয়া ও নেফাকই তাদের বৈশিষ্ট্য অতএব, তাদের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। পূর্বযুগে সীমালঙ্ঘনকারী শিয়া দ্বারা তাদেরকে বুঝানো হত, যারা উসমান, যুবায়ের, তালহা, মুয়াবিয়া ও কিছু সংখ্যক সাহাবী সম্পর্কে, যারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিপক্ষে যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, বিরূপ মন্তব্য ও গাল-মন্দ করত। আমাদের যুগে সীমালঙ্ঘনকারী রাফেযীর অর্থ যারা তাদেরকে কাফির বলে এবং আবু বকর ও ওমরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেএটা তাদের স্পষ্ট গোমরাহী, বলার অপেক্ষা রাখে না”[18]

    কতক মুহাদ্দিস শিয়া মতাবলম্বী দোষে দুষ্ট ছিলেন, যেমন আবু নু‘আইম ফাদল ইবন দুকান, তিনি ইমাম বুখারীর উস্তাদ। হাফিয ইবন হাজার বলেন, “স্মৃতি শক্তি ও নির্ভুলতার ক্ষেত্রে তার অনেক প্রশংসা রয়েছে, তবে শিয়া মতাবলম্বী হওয়ার কারণে অনেকে তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন, এতদসত্ত্বেও সহীহ সনদে প্রমাণিত, তিনি বলেছেন, মুয়াবিয়াকে গাল-মন্দ করেছি, মালায়েকারা এমন কোনো পাপ আমার ওপর লিপিবদ্ধ করে নি”[19]

    শিয়া দোষে দুষ্ট আরেকজন মুহাদ্দিস হলেন মুহাম্মদ ইবন ফুদাইল ইবন গাযওয়ান কুফি। তার সম্পর্কে হাফিয ইবন হাজার বলেন, যারা তার ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করেছেন, তার কারণ ছিল তিনি শিয়া মতাদর্শী। আহমদ ইবন আলী বলেন, আমাদেরকে আবু হাশিম বলেছেন, তিনি মুহাম্মদ ইবন ফুদাইলকে বলতে শুনেছেন: আল্লাহ উসমানের ওপর রহম করুন, আল্লাহ তাকে রহম না করুন, যে উসমানের ওপর রহমতের দোআ করে না। আবু হাশিম আরও বলেন, আমি তার ভেতর আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নিদর্শন দেখেছি, আল্লাহ তাকে রহম করুন”।[20]

    শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীকে গাল-মন্দ বা লা‘নত করা বৈধ নয়, যে তাদের কাউকে লানত করে, যেমন মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান, আমর ইবনুল আস ও তাদের সমমর্যাদার কোনো সাহাবীকে অথবা তাদের থেকে উত্তম কোনো সাহাবীকে, যেমন আবু মুসা আশআরি, আবু হুরায়রা ও তাদের সমমর্যাদার কোনো সাহাবী, অথবা তাদের থেকেও উত্তম কোনো সাহাবী, যেমন তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ, যুবায়ের ইবনুল আওয়াম, উসমান ইবন আফফান, আলী ইবন আবু তালিব, অথবা আবু বকর ও উমার ইবনুল খাত্তাব অথবা মুমিনদের মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুম বা তাদের ছাড়া কোনো সাহাবীকে গাল-মন্দ করে, সকল ইমামের নিকট সে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত, তবে শাস্তি স্বরূপ সে হত্যার যোগ্য, না তার থেকে নিম্ন পর্যায়ের কোনো শাস্তির যোগ্য এ নিয়ে তারা দ্বিমত পোষণ করেছেন।

    ইবন তাইমিয়াহ আরও বলেন, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এমন কোনো মুহাজির নেই, যিনি নেফাকের দোষে দুষ্ট ছিলেন, বরং তারা সবাই মুমিন এবং তাদের সবার ঈমানের পক্ষে সাক্ষী রয়েছে।

    তিনি আরও বলেন, মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান ও তার ন্যায় অন্যান্য সাহাবী, যারা ফাতহে মক্কার পর ইসলাম গ্রহণ করেছেন, সবাই নাজাত প্রাপ্ত দলের সদস্য, যেমন ইকরিমাহ ইবন আবু জাহল, হারিস ইবন হিশাম, সুহাইল ইবন আমর, সাফওয়ান ইবন উমাইয়াহ ও আবু সুফিয়ান ইবন হারিস ইবন আব্দুল মুত্তালিবসহ অন্যান্য সাহাবীমুসলিমরা সবাই একমত যে, তাদের সবার ইসলাম সঠিক ছিল, পরবর্তীতে কেউ তাদেরকে নেফাকের দোষে দুষ্ট বলেননি। আর মুয়াবিয়া তো ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকেই ওহি লিখনির কাজে লিপ্ত ছিলেন।

    তিনি আরও বলেন, উমারের খিলাফতের যুগে যখন ইয়াযিদ ইবন আবু সুফিয়ান মারা যায়, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইয়াযিদের ভাই মুয়াবিয়াকে তার স্থলাভিষিক্ত করেন। আর উমার ইবনুল খাত্তাবের তীক্ষ্ণ মেধার স্বীকৃতি সর্বত্রই ছিল, মানুষ সম্পর্কে তার জানা-শুনা সবচেয়ে বেশি, তিনি দৃঢ়ভাবে হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন ও হক সম্পর্কে সবার চেয়ে বেশি জানতেন।

    তিনি আরও বলেন, উমার কখনো কোনো মুনাফিককে মুসলিমদের নেতা নির্বাচন করেননি, আর না করেছেন আবু বকর, তাদের কেউ নিকট আত্মীয়কেও নেতা নির্বাচন করেন নি। আল্লাহর রাস্তায় তারা কোনো তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় করতেন না”

    তিনি আরও বলেন, এ কথা স্পষ্ট যে, মুয়াবিয়া, আমর ইবনুল আস ও তাদের ন্যায় অন্যান্য সাহাবীর মাঝে ফিতনা ছিল, তবুও তাদের স্বপক্ষের কিংবা বিপক্ষের কেউ তাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিথ্যা বলার অপবাদ দেন নি; বরং পরবর্তী সকল আলেম ও তাবে‘ঈ একমত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রে তারা সত্যবাদী এবং হাদীসের ব্যাপারে তারা সবাই বিশ্বাসযোগ্য। পক্ষান্তরে মুনাফিকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে নিরাপদ নয়; বরং নবীকে তারা মিথ্যা বলেছে ও তার সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার করেছে।

    তিনি আরও বলেন, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত সবাই একমত যে, কোনো সাহাবী অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আত্মীয় অথবা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী কোনো মনীষী নিষ্পাপ নয়; বরং তাদের থেকে পাপ প্রকাশ পাওয়া সম্ভব, তবে তওবার কারণে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও তাদের মর্তবা বুলন্দ করবেন এবং অন্যান্য নেকি ও পাপ মোচনকারীর বিনিময়ে তাদেরকে ক্ষমা করবেন।

    তিনি আরও বলেন, এসব কথা হচ্ছে সাহাবীদের নিশ্চিত পাপের ক্ষেত্রে, তবে যেখানে সাহাবীগণ ইজতিহাদ করেছেন, সেখানে কখনো ঠিক করেছেন কখনো ভুল করেছেন। যদি ঠিক করেন, দু’টি সাওয়াব, আর ভুল করলে একটি সাওয়াব, ভুলটি ক্ষমা

    তিনি আরও বলেন, আলীর সাথে যুদ্ধ করার সময় মুয়াবিয়া খিলাফতের দাবি করেননি, নিজের খিলাফতের জন্য বাই‘আতও নেন নি, আবার খলিফা হিসেবেও যুদ্ধ করেন নি, তিনি খিলাফতের হকদার জন্যও যুদ্ধ করেন নি; বরং তারা আলীর খিলাফতের স্বীকারোক্তি প্রদান করত। যে তাকে জিজ্ঞেস করত তাকে তিনি বলতেন খিলাফতের হকদার আলিতিনি ও তার সাথীদের কেউ আলী ও তার সাথীদের সাথে যুদ্ধ করাকে বৈধ জানতেন না, বরং আলী ও তার সাথীগণ দেখলেন মুয়াবিয়া ও তার অনুসারীদের থেকে আনুগত্য আদায় ও তাকে বাই‘আত করানো জরুরি। কারণ, মুসলিমদের খলিফা একজনই হবেন। অতএব, তারা বিদ্রোহী, খলিফাকে বায়‘আত দিচ্ছে না, অধিকন্তু তারা শক্তির অধিকারী তাই তাদের বায়‘আত জরুরি। এসব চিন্তা করে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তাদের সাথে যুদ্ধ করবেন যেন আনুগত্যের ওয়াজিব তারা সোপর্দ করে এবং একচ্ছত্র আনুগত্য ও মুসলিম উম্মার ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ দিকে মুয়াবিয়া ও তার সাথীগণ দেখলেন বায়‘আত দেওয়া ওয়াজিব নয়, বাই‘আতের জন্য যদি তাদের সাথে যুদ্ধ করা হয়, তারা জুলমের স্বীকার হবেন। তাদের যুক্তি ছিল, উসমানকে মযলুমভাবে হত্যা করা হয়েছে, আসলেও তাই, আর তার হত্যাকারীরা ছিল আলীর দলে। তারা প্রভাবশালী, ক্ষমতাও তাদের হাতে ছিল।

    তিনি আরও বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আম্মারকে সীমালঙ্ঘনকারী দল হত্যা করবে”। এ হাদীস চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে না যে, মুয়াবিয়া ও তার সাথীরা এ বাণীর উপযুক্ত, বরং সম্ভাবনা আছে, এ হাদীস দ্বারা তাদরেকে বুঝানো হয়েছে, যারা আম্মারের ওপর হামলা করে হত্যা করেছে, অর্থাৎ বাহিনীর একটি অংশ এবং আম্মারের হত্যায় যারা খুশি তারাও তাদের ন্যায়। এটা স্পষ্ট যে, মুয়াবিয়ার দলে এমন অনেক লোক ছিল, যারা আম্মারের হত্যায় সন্তুষ্ট ছিল না যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস ও অন্যান্য সাহাবী, বরং মুয়াবিয়া ও আমর ইবন আস সবাই আম্মারের হত্যাকে অপছন্দ করেছেন”[21]

    মোদ্দাকথা: সাহাবীদের মাঝে যেসব ফিতনা সংঘটিত হয়েছে, বুদ্ধিমানের উচিৎ সেসব ব্যাপারে তাদের সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করা। তাদের সম্পর্কে ভালো কথা বলা। সকল সাহাবীর ক্ষেত্রে রাদিয়াল্লাহু আনহু বলা, তাদের সাথে বন্ধুত্ব ও মহব্বত রাখা। আর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা যে, তারা ইজতিহাদ করে একটি সাওয়াব বা দু’টি সাওয়াবের ভেতর ছিলেন তাহাভীয়া গ্রন্থের ব্যাখ্যায় আলী ও মুয়াবিয়ার ইখতিলাফের দিকে ইঙ্গিত করে খুব সুন্দর কথা বলা হয়েছে: “আমরা তাদের সবাইকে ভালো বলি:

    ﴿رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠﴾ [الحشر: ١٠]

    “হে আমাদের রব, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন”। [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]

    অতঃপর তিনি বলেন, যে ফিতনা আলী রাদিয়াল্লাহুর যুগে হয়েছে, সেসব থেকে আল্লাহ আমাদের হাতকে মুক্ত রেখেছেন, আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদের জবানকে নিজ দয়া ও অনুগ্রহে তার থেকে মুক্ত রাখেন।

    আল-হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।

     

    আদর্শ মনীষী আবু তাওবাহ হালব বলেছেন, মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের জন্য পর্দা স্বরূপ, যে এই পর্দা উঠাবে, সে তার ভেতর প্রবেশ করারও দুঃসাহস দেখাবে এ কারণেই লেখক মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আলোচনার বিষয়বস্তু বানিয়েছেন।

     

     

     

     

     

     

     

     



    [1] আল- বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ: (৮/১৩৯)।

    [2] সহীহ মুসলি (৪/২০৬০)।

    [3] দেখুন: শারহুত তাহাভীয়াহ পৃ. (৪৬৯)।

    [4] শারহুস সুন্নাহ (১/২২৯)।

    [5] ফাতহুল কাদির (/১৯৭-১৯৮)

    [6] শারহুন নাওয়াওয়ী (১৮/১৫৮)।

    [7] ফাতহুল কাদির (৫/১৯৮)।

    [8] রিয়াদুল মুস্তাতাবাহ পৃ. (৩১১)।

    [9] ফাতহুল বারি (৪/৩৬৫)।

    [10] আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (৮/১৩৯)।

    [11] আল কিফায়াহ পৃ. (৪৯)।

    [12] ফাতহুল বারি (১৩/৩৪)।

    [13] আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (৮/১৩০-১৩৯)।

    [14] ফাতহুল বারি (৭/১০৩-১০৪)।

    [15] তাফসীরে ইবন কাসির (৩/৩৮)।

    [16] ফাতহুল বারি: (/৬৩)

    [17] রিয়াদুল মুস্তাতাবাহ পৃ. ১৯৫।

    [18] মিযানুল ই‘তিদাল (১/৫)।

    [19] মুকাদ্দামাতুল ফাতহ পৃ. (৪৩৪)

    [20] মুকাদ্দামাতুল ফাতহ পৃ. ৪৪১।

    [21] মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান। ইবন তাইমিয়া রচিত।

  • 0 comments:

    Post a Comment

    New Research

    Attention Mechanism Based Multi Feature Fusion Forest for Hyperspectral Image Classification.

    CBS-GAN: A Band Selection Based Generative Adversarial Net for Hyperspectral Sample Generation.

    Multi-feature Fusion based Deep Forest for Hyperspectral Image Classification.

    ADDRESS

    388 Lumo Rd, Hongshan, Wuhan, Hubei, China

    EMAIL

    contact-m.zamanb@yahoo.com
    mostofa.zaman@cug.edu.cn

    TELEPHONE

    #
    #

    MOBILE

    +8615527370302,
    +8807171546477