• উসীলা গ্রহণ: বৈধ ও অবৈধ পন্থা

     

    উসীলা গ্রহণ: বৈধ ও অবৈধ পন্থা


    [ بنغالي –  Bengali – বাংলা ]

                 

    আব্দুল্লাহ বন আব্দুল হামীদ আল-আসারী

     

    অনুবাদ: হেলালুদ্দীন আহমাদ

    সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া


     


    التوسل المشروع والممنوع

     

     

    عبد الله بن عبد الحميد الأثري

     

     

     

     

     

    ترجمة: هلال الدين أحمد

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا


    সূচীপত্র

     

    ক্র

    শিরোনাম

    পৃষ্ঠা

    ভূমিকা

     

    উসীলা বা মাধ্যম গ্রহণ কাকে বলে?

     

    উসীলার ভিত্তি তিনটি বিষয়

     

    উসীলার প্রকার

     

    শরী‘আত অনুমোদিত উসীলা ও তার প্রকার

     

    নিষিদ্ধ উসীলা ও তার প্রকার

     

    প্রথমত: কারো ব্যক্তিত্ব, সম্মান ও উঁচু অবস্থানের দোহাই দিয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা

     

    দ্বিতীয়ত: কোনো মৃত পীর-বুযুর্গকে ডাকা, তাদের নামে মান্নত করা বা তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা

     

    তৃতীয়ত: কোনো পীর-বুযুর্গের উদ্দেশ্যে প্রাণী জবাই করা এবং তাদের কবরের চারপাশে অবস্থান করা:

     

    ১০

    বর্ণিত ক্ষেত্রে মুসলমিদের পদস্খলনের কারণ

     

    ১১

    পরিশিষ্ট

     

     



    ভূমিকা

     

    الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على رسول الله خاتم النبيين، وعلى آله وصحبه ومن والاه إلى يوم الدين.

    হামদ ও সালাত।

    আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের উলামায়ে কিরামের সর্বসম্মত অভিমত হলো, আল্লাহ তা‘আলার উসীলা বা নৈকট্য তালাশ করা একটি শরী‘আত-অনুমোদিত বিষয়। তাদের এ মতের অনুকুলে আয়াতে কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসের সুদৃঢ় প্রমাণও তারা পেশ করেছেন।

    কিন্তু কুরআন-হাদীস ও উম্মতের গ্রহণযোগ্য পূর্বসূরীদের থেকে বর্ণিত উসীলা বা তাওয়াসসুলের পদ্ধতি অনুধাবন করতে কোনো কোনো মুসলিম সমস্যায় নিপতিত হয়েছেন। ফলে তারা ‘উসীলা’র এমনসব অর্থ গ্রহণ করেছেন, যার সঙ্গে ইসলামের মৌলিক নীতি ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমোদিত উসীলার কোনো সাযুজ্য নেই। তাদের ঐ ভ্রান্ত মতের পক্ষে কিছু বানোয়াট ও দুর্বল হাদীসও তারা প্রমাণ রূপে পেশ করে থাকেন। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ বরং এ সংক্রান্ত আয়াতে কুরআনীর অপব্যাখ্যার মাধ্যমে নিজেদের মত প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও করেছেন।

    বলা বাহুল্য, কিতাব ও সুন্নার কোনো ভাষ্য অনুধাবনের  বিষয়ে উম্মতের মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে আমাদের কর্তব্য হলো, সে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেগণের ব্যাখ্যা, অভিমত ও কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করা। কারণ, তারা হলেন অহী অবতরণকালের সমসাময়িক বা নিকটতম সময়ের ব্যক্তিবর্গ। ‘খাইরুল কুরূন’ বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন:

    «خير الناس قرنى ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم»

    মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো আমার সমকালীন লোকজন, তারপর তাদের সন্নিকটবর্তী সময়ের লোকজন, তারপর তাদের নিকটবর্তী কালের লোকজন[1]

    নফসের অনুসরণ মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। কাজেই আল্লাহ ও রাসূলে বিশ্বাসী সকলেরই নফসের অনুসরণ থেকে সতর্কতার সঙ্গে দূরে থেকে সঠিক পথ প্রাপ্তির জন্য পূণ্যবান পূর্বসুরীগণের অনুগমন ও অনুসরণ করা উচিৎ

    স্বীকার করতেই হবে, আলোচ্য বিষয়টি খানিকটা জটিল। ফলে এ নিয়ে মত ও অভিমতেরও যেমন অভাব নেই, তেমনি পদস্খলিত বিআত ও নফসপূজারীদের সংখ্যাও কম নয়তাই আল্লাহ পর ভরসা করে এ বিষয়ে কলম ধরেছি। আশা করি কুরআন ও হাদীসে অবতীর্ণ এতদ্বিষয়ের প্রমাণাদি একত্রিত করবো। আল্লাহ আমাকে উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধতা ও সিদ্ধান্তে সরলতা দান করুননিশ্চয় তিনি দয়ালু দাতা।


     

    উসীলা বা তাওয়াসসুল কাকে বলে?

    আভিধানিক অর্থে উসীলা হলো এমন উপায়-উপকরণ, যা উদ্দেশ্য বিষয় অর্জনে সহায়তা করে, উদ্দেশ্য লাভের নিকটবর্তী হওয়া, আগ্রহ নিয়ে কোনো উদ্দেশ্যের দিকে ধাবিত হওয়া।

    তার আরো একটি অর্থ হলো, শাসকের নিকট সম্মান, মর্যাদা ও নৈকট্য লাভ।

    পারিভাষিক অর্থে উসীলা বলা হয়,

    -       শরী‘আত অনুমোদিত ঐ সকল পন্থা অবলম্বন, যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করা যায়

    -       এমন সব ইবাদ-বন্দেগী, যেগুলো শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করা হয়অনুরূপভাবে যেসব আমল-ইবাদতকে আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানীতে প্রবর্তন করেছেন, মহান আল্লাহর কাছে উঁচু মর্যাদা অর্জন করার জন্য বা কোনো প্রার্থীত বস্ত লাভ ও কোনো অনিষ্ট থেকে রক্ষা উদ্দেশ্য পূরণের জন্য বা দুনিয়া-আখিরাতের কোনো আশা পূরণের জন্য।

    তবে মনে রাখতে হবে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন শরী‘আত অনুমোদিত মাধ্যম ছাড়া সম্ভব নয়।

    উসীলার ভিত্তি তিনটি বিষয়:

    ১.   যার নৈকট্য লাভের জন্য উসীলা গ্রহণ করা হয়, আর তিনি হলেন মহা-মহিম, অপার করুণার আধার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা।

    ২.   নৈকট্যপ্রার্থী। সে হলো অক্ষম, দুর্বল ও প্রয়োজন পূরণে মুখাপেক্ষী বান্দা।

    ৩.   নৈকট্য লাভের উপায়তা হলো ঐ সব নেক আমল যা বান্দাকে তার মা‘বুদের নৈকট্য লাভে ধন্য করে।

    কোন উসীলা উপকাী ও তার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভ ও প্রয়োজন পূরণ করার জন্য উসীলা গ্রহণকারীকে অবশ্যই কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। সে শর্তগুলো হলো:

    ১.   উসীলা গ্রহণকারী বান্দাকে অবশ্যই সৎ ও নেক মুমিন হতে হবে এবং তার আমলের উদ্দেশ্য অবশ্যই শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন হতে হবে।

    ২.   আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে বান্দাদের জন্য যেসব আমল অনুমোদন করেছেন, আমল হতে হবে তারই মধ্য থেকে।

    ৩.   উসীলাকৃত আমলটি হতে হবে শরী‘আত অনুমোদিত এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুযায়তাতে কোনো কম-বেশি করা যাবে না এবং কোনো সময় ও স্থানের সঙ্গে নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকলে সে সীমা লংঘন করে অন্য সময় ও স্থানে করা যাবে না।

    উপরোক্ত বক্তব্যে এই বিষয়টি স্পষ্ট হলো যে, অমুসলিমদের আমল-ইবাদত যেমন কোনভাবে নৈকট্য লাভের মাধ্যম বা উসীলা হতে পারে না, তেমনি বিদ‘আতপূর্ণ কর্মকাণ্ড দিয়েও আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় না।

    উসীলার প্রকার:

    আহলে সুন্নাতের উলামায়ে কিরাম উসীলাকে দুভাগে বিভক্ত করেছেন।

    ১। শরী‘আত অনুমোদিত উসীলা ও

    ২। শরী‘আত নিষিদ্ধ উসীলা।

    শরী‘আত অনুমোদিত উসীলা ও তার প্রকার:

    শরী‘আত অনুমোদিত উসীলা হলো, যেসব ওয়াজিব ও মুস্তাহাব ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট হন এবং যেসব ইবাদত তিনি পছন্দ করেন, সেসবের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা। ঐ ইবাদত চাই মৌখিক হোক বা কর্মের মাধ্যমে পালনীয় হোক বা বিশ্বাস সংক্রান্ত হোক। শরী‘আত অনুমোদিত উসীলাকে আমরা তিনটি ভাগে বিভক্ত করতে পারি:

    ১.   সীলাসমূহের অন্যতম ও শ্রেষ্ঠতম ও বান্দার জন্য সবচেয়ে উপকারী উসীলা হলো, আল্লাহ তা‘আলার সুন্দরতম নামসমূহ এবং তাঁর সমুচ্চ গুণাবলীর উসীলা গ্রহণ করাএ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ ﴾ [الاعراف: ١٨٠] 

    আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, তোমরা তাঁকে সে নামে ডাকো [সূরা আল-রাফ, আয়াত: ১৮০] অর্থাৎ আল্লাহকে তাঁর সুন্দর নামসমূহের উসীলায় আহ্বান কর।

         উপরোক্ত আয়াতটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাঁর কোনো নাম বা গুণের উসীলায় প্রার্থনা করা বৈধ। আরও প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলার কোনো নাম বা তাঁর গুণের উসীলায় তাঁর নিকট প্রার্থনা করা আল্লাহ তা‘আলা অনেক পছন্দ করেন। আর এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এভাবে প্রার্থনা করেছেন। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেন ও তাবে-তাবেগণ যে পদ্ধতিতে ও যে উসীলায় রাববুল আলামীনের দরবারে প্রার্থনা করেছেন, তা যে আমাদের জন্যও প্রার্থনার একটি অনুমোদিত পন্থা, তাতে সন্দেহ নেই।

    ২.   প্রার্থনাকারী তার কোনো নেক আমলের উসীলায় প্রার্থনা করা। যেমন, কেউ বলতে পারে, হে আল্লাহ! আপনার প্রতি আমার ঈমান ও বিশ্বাস, ভালোবাসা ও মহববত এবং আপনার রাসূলের প্রতি ঈমান ও আনুগত্যের উসীলায় আমার পেরেশানী দূর করে দিন। এইরূপে প্রার্থনাকারী তার অন্যান্য এমনসব নেক আমলের কথা উল্লেখ করে সেগুলো উসীলায় প্রার্থনা করতে পারে, যে নেক আমলগুলো সে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সম্পন্ন করেছে। যেমন, আল্লাহর প্রতি ঈমান, সালাত, সাওম, জিহাদ, তিলাওয়াতে কুরআন, যিকির, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দুরূদ, স্তেগফার, এইরূপে অন্য যে কোনো নেক আমল ও গুনাহ থেকে আত্মরক্ষার কথাই উসীলা হিসবে উল্লেখ করা যেতে পারে।

    উসীলার উল্লিখিত পদ্ধতিটির বৈধতার প্রমাণ পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে পাওয়া যায়:

    ﴿ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ إِنَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ١٦﴾ [ال عمران: ١٦] 

    যারা বলে, হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং আমাদের অন্যায়-অপরাধ ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬]

    হাদীসে পূর্ব যুগের এ ধরনের একটি ঘটনাও বর্ণিত রয়েছে। সেখানে উল্লেখ আছে, তিন ব্যক্তি একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলো; কিন্তু ঘটনাক্রমে একখণ্ড পাথর গড়িয়ে এসে তাদের গুহামুখ বন্ধ করে দেয়। ফলে সেখান থেকে মুক্তির আর কোনো উপায় না দেখে, তারা তিনজনই নিজ নিজ ধারণা অনুযায় নিজেদের সর্বোৎকৃষ্ট আমলের কথা উল্লেখ করে সে উসীলায় আল্লাহ তা‘আলার নিকট এই বিপদ থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা জানায়। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের পেরেশানী দূর করেন ও বিপদ থেকে মুক্তি দেন।[2]

    ৩.   কেউ খুব কঠিন বিপদে পতিত হলো, কিন্তু নিজের আমলের দুর্বলতার দরুন নিজের দ‘আর পর তার ভরসা নেই। তাই আল্লাহর জীবিত কোনো প্রিয় বান্দা, যার তাকওয়া-পরহেজগারী এবং কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানের গভীরতা সম্পর্কে তার আস্থা রয়েছে, এমন কারো কাছে গিয়ে তার বিপদ-মুক্তি ও সমস্যা উত্তরণের জন্য দ‘আর আবেদন জানানো, এটিও উসীলার শরী‘আত অনুমোদিত একটি পন্থা; শরী‘আত তার ওপর প্রমাণ দিচ্ছে এবং তা করার দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেআল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ﴾ [الحشر: ١٠] 

    হে আল্লাহ! আমাদেরকে এবং আমাদের যে সকল মুমিন ভাই ইতপূর্বে গত হয়েছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিন[সূরা আল-হাশর, আয়াত: ১০]

    হাদীসে বর্ণিত আছে:

    «دَعْوَةُ الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ»

    কোন মুমিন ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য কোনো মুমিনের দো‘আ আল্লাহ কবুল করেন[3]

    এ মর্মেরই একটি হাদীস রয়েছে যা আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, মদীনায় যখন দুর্ভিক্ষ দেখা দি, র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে গিয়ে বৃষ্টির জন্য দো‘আ করতে বলতেন। সুতরাং উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘হে আল্লাহ! ইতঃপূর্বে আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসীলায় আপনার নিকট বৃষ্টি প্রার্থনা করতাম এবং আপনি বৃষ্টি বর্ষণ করতেন। এখন আমরা আপনার নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচার উসীলা দিয়ে প্রার্থনা করছি, আপনি আমাদের প্রতি বারি বর্ষণ করুন। ফলে বৃষ্টিপাত হতো[4]

    র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বক্তব্যের উদ্দেশ্য হলো, ‘আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে আমাদের জন্য দো‘আ আবেদন করতাম এবং নবীর দো‘আর দ্বারা আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতাম; কিন্তু নবী তো এখন আর আমাদের মাঝে বিদ্যমান নেই। তিনি তো উচ্চ বন্ধুদের কাছে চলে গিয়েছেন। আমাদের জন্য তিনি দো‘আ করবেন, এটা এখন আর সম্ভব নয়। কাজেই আমরা এখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আববাসের নিকট এসেছি এবং তার নিকট আমাদের জন্য দো‘আ করার আবেদন করছি।’

    উপরোক্ত পদ্ধতি তিনটিই হলো উসীলা গ্রহণের শরী‘আতসম্মত পদ্ধতি। এ ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতির পক্ষে শরী‘আতের কোনো অনুমোদন নেই। তবে বর্ণিত পদ্ধতিত্রয় হুকুমের দিক থেকে একই পর্যায়ভুক্ত নয়। তন্মধ্যে কিছু আছে ওয়াজিব উসীলা, যেমন: আল্লাহর নাম, তার সিফাত এবং ঈমান ও তাওহীদ, এগুলোর উসীলা দেওয়া। অন্যদিকে কিছু আছে মুস্তাহাব উসীলা; যেমন, যে কোনো নেক আমল এবং নেক বান্দাদের দ্বারা কৃত দো‘আর উসীলা

    কাজেই মুসলিমের ওপর কর্তব্য হচ্ছে, বিপদ-আপদ ও বালা-মসিবতের সময় একমাত্র আল্লাহর নিকট বৈধ উসীলার মাধ্যমে নৈকট্য অর্জন করা। আর অন্তরে আল্লাহর ভয়, তাঁর প্রতি যথাযথ লজ্জা ও তাঁর প্রতি আনুগত্যের অনুভুতি নিয়ে গোনাহ ও বিদআতের পথ পরিত্যাগ করা।

    নিষিদ্ধ উসীলা ও তার প্রকার:

    যেসব কাজ, কথা ও বিশ্বাস আললাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি নেই এবং তিনি পছন্দও করেন না সেসব কিছু দ্বারা তাঁর নৈকট্য তালাশ করাই হচ্ছে নিষিদ্ধ উসীলা

    এসব নিষিদ্ধ উসীলায় আক্রান্ত হয়ে অনেকেই শরী‘আত অনুমোদিত উসীলা, যা করার প্রতি আল্লাহ তা‘আলা উৎসাহ দিয়েছেন, তা থেকে গাফেল হয়ে পড়েছে। ফলে তারা শরী‘আত অনুমোদিত উসীলা থেকে বিমুখ হয়ে পড়েছে এবং নিষিদ্ধ উসীলা অবলম্বনে ব্যস্ত থাকার কারণে শরী‘আতসম্মত উসীলা থেকে মাহরূম হয়েছে।  ফলে তাদের সমস্ত চেষ্টাই নিষ্ফল ও যাবতীয় শ্রমই পণ্ড হচ্ছে।

    মুসলিম ভাইদের কল্যাণকামিতা ও ইসলামের বাণীকে সর্বত্র প্রচা-প্রসার করার প্রত্যাশায় নিচে সে সব নিষিদ্ধ উসীলার কিছু প্রকারের বিবরণ পেশ করছি:

    প্রথমত: কারো ব্যক্তিত্ব, সম্মান ও উঁচু অবস্থানের দোহাই দিয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা:

    আল্লাহর কোনো মাখলুকের সম্মানের দোহাই দিয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা বিদ‘আতযেমন, কেউ বললো, ‘হে আল্লাহ! তোমার নবীর মর্যাদা বা অমুক বান্দার সম্মান-মর্যাদার দোহাই দিয়ে আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি’। অনুরূপভাবে আল্লাহর নবীর অধিকার বা আল্লাহর কোনো বান্দার অধিকারের দোহাই দিয়ে প্রার্থনা করাও বিদ‘আতী উসীলা। ধরনের কোনো উসীলা ইসলামে নেই। না এটার বর্ণনা কুরআনে এসেছে, যে কুরআনে বলা হয়েছে,

    ﴿مَّا فَرَّطۡنَا فِي ٱلۡكِتَٰبِ مِن شَيۡءٖ﴾ [الانعام: ٣٨] 

    “আমরা এ কিতাবে কোনো কিছুর বর্ণনা করতে ত্রুটি করি নি”, [সূরা আল-আন‘আম:৩৮] আর না এ জাতীয় উসীলা আল্লাহর নবীর কোনো হাদীসে এসেছে, অথচ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু স্পষ্ট বলেছেন বলেছেন:

    «علمنا رسول اللهﷺ كل شيء حتى الخراء»

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জীবনের সকল বিষয়েই শিক্ষা দান করেছেন, এমনকি পায়খানা-প্রস্রাব কীভাবে করতে হবে, সে পদ্ধতিও।[5] আর না সাহাবায়ে কেরামের কারো কর্মকাণ্ডে এর নজির রয়েছে।

    ইসলাম তো আল্লাহর সুন্দর নাম ও তাঁর মহৎ গুণ দিয়েই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে নির্দেশ দিয়েছে।

    উসীলা গ্রহণের এইসব বিদআতী পদ্ধতি প্রার্থনাকারীকে ‘শির্কে আকবর’ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারে, যদি প্রার্থনাকারী মনে করে যে, দুনিয়ার রাজন্যবর্গ বা আমীর-হাকীমদের মত আল্লাহ তা‘আলাও মাধ্যমেমুখাপেক্ষীএতে করে ‘খালেক’-কে মাখলুকের সঙ্গে তুলনা করা হয়, যেটা কোনক্রমেই সঙ্গত নয়; আল্লাহকে কখনও তার সৃষ্টির সাথে কিয়াস করা যাবে না। বান্দার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি যেমন কোনো মাধ্যমেদরকার হয় না, তেমনি বান্দার প্রতি তাঁর অসন্তোষের সামনেও কেউ অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে সক্ষম নয়।

    মনে রাখবেন, মানুষ মর্যাদায় যতই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হোক, তিনি ফিরিশতা, নবী বা রাসূল যেই হোন না কেন, আল্লাহর সঙ্গে তার কোনো তুলনা চলতে পারে না। মাখলুক, যতই সে উঁচু স্তরের হোক, সর্বদা সে মাখলুকই থাকে, খালেকের কাছে সর্ববিষয়ে সে মুখাপেক্ষীকিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তিনি একক স্রষ্টা-খালেক, তিনি সর্ববিষয়ে অমুখাপেক্ষী। কোনো বিষয়ে যার কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন পড়ে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿وَيَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَمۡلِكُ لَهُمۡ رِزۡقٗا مِّنَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ شَيۡ‍ٔٗا وَلَا يَسۡتَطِيعُونَ ٧٣ فَلَا تَضۡرِبُواْ لِلَّهِ ٱلۡأَمۡثَالَۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٧٤﴾ [النحل: ٧٣،  ٧٤]

    তারা আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুর ইবাদত করে, যে তাদের জন্যে ভুমণ্ডল ও নভোমণ্ডল থেকে সামান্য রুযী দেওয়ারও অধিকার রাখে না এবং মুক্তিও রাখে না। অতএব, আল্লাহর কোনো সদৃশ সাব্যস্ত করো না, নিশ্চয় আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না”[সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৮৩-৮৪]

    আর কারণেই সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পরে তাঁর দো‘আর উসীলা পরিত্যাগ করে আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দো‘আর উসীলা গ্রহণ করেছিলেন

    এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার, তা হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর উসীলা দেওয়ার উদ্দেশ্য এটা নয় যে, তারা নবীর জীবদ্দশায় বলতেন, হে আল্লাহ! নবীর সম্মানে বৃষ্টি দিন বা নবীর মৃত্যুর পরে বলতেন না যে, হে আল্লাহ আববাসের সম্মানে আমাদে বৃষ্টি প্রদান করুন। কারণ, এ ধরনের বিদআতী দো‘আ সাহাবায়ে কেরাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শিক্ষা লাভ করেন নি। আল্লাহর কিতাবেও এর কোনো ভিত্তি নেই। তাই তারা এ ধরনের উসীলা গ্রহণ থেকে বহু দূরেই ছিলেন। কারো মৃত্যুর পর যদি তার সম্মানের উসীলা দিয়ে প্রার্থনা করা জায়েয হতো, তাহলে তার সর্বাধিক হকদার ছিলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ ধরনের উসীলা গ্রহণ তো মূলত মক্কী যুগের মুশরিকদের শির্কেরই অনুরূপ। আল্লাহ তা‘আলা সে বিষয়ে পবিত্র কালামে বলেছেন:

    ﴿مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ﴾ [الزمر: ٣] 

    আমরা তাদের উপাসনা করি না শুধু এ জন্য যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী অবস্থায় এনে দেবে। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ]

    বিষয়টি সত্যিই নাজুক। মানুষ যখন কোনো মানুষের ব্যক্তিত্ব বা তার সম্মান-ইজ্জতের দোহাই দিয়ে প্রার্থনা করে, তখন তার বিশ্বাস যদি এমন হয় যে, সে ব্যক্তি তার কোনো উপকার বা ক্ষতিতে ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে তা হবে পরিষ্কার বড় শির্ক এবং তা তাকে ইসলামের গণ্ডী থেকে তাকে বের করে দিবেআল্লাহর কাছে আমরা আশ্রয় চাই।

    দ্বিতীয়ত: কোনো নেককার ওলী কিংবা পীর-বুযুর্গকে ডাকা, তাদের নামে ‘নজরনেওয়াজ’ মান্নত করা বা তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা:

    কোন মৃত নেককার ওলী কিংবা পীর-বুযুর্গকে ডাকা, তাদের সম্মানের উসীলায় দো‘আ করা এবং তাদের জন্য নজরনেওয়াজ মান্নত করা -এটা স্পষ্টতঃই ইসলাম বহির্ভুত বিষয়; বরং তা বড় শির্ক ও তাওহীদ বিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিতযেমন, কেউ বললো, ‘হে খাজা বাবা, হে অমুক ওলী, এই অনুন্যোপায় ভক্তের হাতটি ধরুন, আমাকে সাহায্য করুন, আল্লাহর কাছে আমার জন্য প্রার্থনা করুন, আমি আপনার আশ্রয়ে, আমি আপনার ও আল্লাহর ওপরেএই যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিস্কার শির্কী কথাবার্তার অন্তর্ভুক্ত।

    এইরূপে কোনো মৃত ব্যক্তির নামে নজর বা মান্নত করাও শরী‘আতসম্মত উসীলা নয়। অর্থাৎ এভাবে বলা যে, ‘খাজা বাবা’! যদি আল্লাহ আমাকে অমুক জিনিসটি মিলিয়ে দেন, তাহলে তোমার নামে এই জিনিস নজরনেওয়াজ দেবো। অথবা হে আমার ওলী, তোমার দরবারে এই হাদিয়া পেশ করবো। অথবা যদি আমি অমুক জিনিস হাসিল করতে পারি তাহলে তোমার জন্য এটা ওটা দিব। এই সবই ‘গাইরুল্লাহর’ জন্য মান্নত এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য ইবাদত করার শামিল। ফলে ইসলামের সঙ্গে এর সুদূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে বলেন:

    ﴿وَجَعَلُواْ لِلَّهِ مِمَّا ذَرَأَ مِنَ ٱلۡحَرۡثِ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ نَصِيبٗا فَقَالُواْ هَٰذَا لِلَّهِ بِزَعۡمِهِمۡ وَهَٰذَا لِشُرَكَآئِنَاۖ فَمَا كَانَ لِشُرَكَآئِهِمۡ فَلَا يَصِلُ إِلَى ٱللَّهِۖ وَمَا كَانَ لِلَّهِ فَهُوَ يَصِلُ إِلَىٰ شُرَكَآئِهِمۡۗ سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ ١٣٦﴾ [الانعام: ١٣٦] 

    আর তারা আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করে চাষাবাদ ও পশুপালন থেকে যা কিছু তারা উৎপাদন করেছে তার একাংশ এবং বলে-‘এই হচ্ছে আল্লাহর জন্য’ (তাদের ধারণা অনুযায়ী) ‘আর এটা হচ্ছে আমাদের অংশীদার দেবতাদের জন্য’। তারপর যা তাদের অংশী দেবতাদের জন্য, তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, আর যা আল্লাহর জন্য, তা পৌঁছে যায় তাদের অংশীদারদের কাছে। কী নিকৃষ্ট যা তারা সিদ্ধান্ত নেয়[সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৩৬]

    কোন মৃত বান্দার কাছে ধর্না দেওয়া, তার কাছে কিছু আশা করা, কিছু প্রার্থনা করা, তাদের কবরে গেলাফ চড়িয়ে মাজার বানানো, আগরবাতি, মোমবাতি জ্বালানো প্রভৃতি মুর্খতাসুলভ কর্মকাণ্ড না ছিল নবীর শিক্ষা, না সাহাব ও তাবেঈগণের কর্মরীতি। বরং তারা বিশ্বাস করতো যে দো‘আ কেবল আল্লাহর দিকেই করতে হয়। যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

    ﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ ١٨٦﴾ [البقرة: ١٨٦]

    আর যখন বান্দারা আমার সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, দেখ, আমি অতি নিকটে। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করি, যখন সে আমাকে আহবান করে। কাজেই তারা আমার প্রতি সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক। যাতে তারা সুপথে চলতে পারে[সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৬]

    আর তাদেরকে তাদের নবী তাওহীদবাদীগণের সর্দার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছিলেন যে, “‘আই হচ্ছে ইবাদত[6]

    সুতরাং যে ইবাদতটি নিতান্তই আল্লাহ তা‘আলার জন্য খাস, সেটা অন্য কারো জন্য করা কী করে বৈধ হতে পারে?

    জেনে রাখুন, উপরোক্ত যাবতীয় বিদআতী কর্মকাণ্ডই তাওহীদ ও নবী-রাসূলগণের শিক্ষা-পরিপন্থী। নবী-রাসূলগণের শিক্ষা হলো, ইবাদত হবে শুধুমাত্র এক ও লা-শরীক আল্লাহর জন্য। এটা আল্লাহ ভিন্ন আর কারো জন্য হতে পারে নাতারা এটাও বলেছেন যে, আল্লাহ শুধুমাত্র খালেছ ও বিশুদ্ধ এবং শরী‘আত সমর্থিত ইবাদতই কবুল করেন। আল্লাহ তাঁর বান্দার সব গুনাহই ক্ষমা করেন, কিন্তু শিরক তাঁর নিকট অমার্জনীয় অপরাধ। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفۡتَرَىٰٓ إِثۡمًا عَظِيمًا ٤٨﴾ [النساء: ٤٨]

    নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্য সব অপরাধ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে, সে এক বিরাট পাপ উদ্ভাবন করে। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]

    তৃতীয়ত: কোনো পীর-বুযুর্গের রূহের উদ্দেশ্যে প্রাণী জবাই করা এবং তাদের কবরের পাশে অবস্থান করা:

    বিভিন্ন পর্ব উপলক্ষে পীর-বুযুর্গদের মাযারে যবাই করা, ওরস আয়োজন করা, তাদের কবরের গম্বুজের কাছে অবস্থান করা এবং সে উপলক্ষে সেখানে অবস্থান করে শরী‘আত বিরোধ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া, অসুস্থ ব্যক্তিকে সেখানে সুস্থতা লাভের আশায় নিয়ে যাওয়া, সেখানে অবস্থান করা, কবরবাসী বুযুর্গের নিকট আরোগ্য চাওয়া, বিভিন্ন মনোবাঞ্ছা পূরণের আবেদন করা, তাদের কাছে দো‘আ চাওয়া, তাদের দ্বারা উদ্ধার কামনা করা প্রভৃতি ক্রিয়াকর্ম সম্পূর্ণ শরী‘আত বিরোধী ও কঠিন ভ্রষ্টতা। আল্লাহর দীন ইসলামে এসব কর্মকাণ্ডের কোনো অনুমোদন নেই। আল্লাহ এগুলো প্রবের্তন করেন নি। এগুলো তো আদতে ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগের কর্মকাণ্ড এবং ইবাদতে আল্লাহর সঙ্গে স্পষ্ট শরীক নির্বাচন করা। অথচ আল্লাহ এ ধরণের শির্ক থেকে বান্দাদেরকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন,

    ﴿وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗا﴾ [النساء: ٣٦] 

    তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করো না[সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৬]

    তিনি আরও বলেন,

    ﴿فَلَا تَجۡعَلُواْ لِلَّهِ أَندَادٗا وَأَنتُمۡ تَعۡلَمُونَ﴾ [البقرة: ٢٢] 

    অতএব, তোমরা আল্লাহর কোনো সমকক্ষ সাব্যস্ত করো না, অধিকন্তু তোমরা জান[সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২] এ বাতিলে বারবার আমলকারী এবং তার স্বীকৃতি প্রদানকারী উভয়েই বিধানের দিক থেকে সমান। আর তা হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্ক করা। 

    শরী‘আতের এতো নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেখে অবাক হতে হয় যে, অনেক মুর্খ, যারা মুসলিম বলেই নিজেদের পরিচয় দেয়, উসীলা গ্রহণের কিতাব, সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মাহর প্রদর্শিত পথ পরিহার করে, নিজেদের মনগড়া পথ ও পন্থায় উসীলা গ্রহণ করছে। বরং তারা তাদের নিজেদের মনগড়া দো‘আ-অযীফার দিকে ধাবিত হচ্ছে, তারা এমনসব দের মনগড়া দো‘আ-অযীফার দিকে ধাবিত হচ্ছে, বিদ‘আতী উসীলা গ্রহণ করছেিিিিিিিিিিিিিিিিিিিিিররররররররররবিদ‘আতী উসীলা গ্রহণ করছে যা আল্লাহ তা‘আলা কখনো অনুমোদন করেন নি, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কখনও ব্যবহার করেন নি আর উম্মতের সম্মানিত গ্রহণযোগ্য উত্তরসূরীদের থেকেও বর্ণিত হয় নি। 

    আমার প্রিয় ভায়েরা! এ বিদ‘আতী উসীলা অস্বীকার করার বিষয়টি শুধু আমাদের অভিমতই নয়, বরং এাই হচ্ছ দীনের মূল বিষয়, দীনের মধ্যে যে সব বিদ‘আত এসে পড়েছে সেসবই নিষিদ্ধ। বরং জেনে রাখুন, সাহাব, তাবে, চার ইমাম তাদের অনুসারীগণ এ অভিমতই পোষণ করতেন

    বর্ণিত ক্ষেত্রে মুসলিমদের পদস্খলনের কারণ:

    প্রথম কারণ: উসীলা গ্রহণের ক্ষেত্রে মুসলিমদের একটি বিরাট অংশের এই দুঃখজনক পদস্খলনের অন্যতম কারণ হলো ‘তাকলীদ’। তাকলীদ অর্থ হলো, কারো এমন কোনো কথার অনুসরণ করা, যার পক্ষে বক্তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। এই ধরনের অনুসরণ শরী‘আতে নিষিদ্ধ। আর মুকাল্লিদ হলো, ঐ ব্যক্তি যে কোনো সুনির্দিষ্ট আলিম অনুসরণ করে তার মতামতের বাইরে যায় না। যদিও শরী‘আতের প্রমাণাদি তার মতামতের বিপরীত হয়।

    আল্লাহ তা‘আলা এ ধরনের অনুসরণের নিন্দা করেছেন। আর আল-কুরআনের বহু আয়াতে তা থেকে নিষেধ করেছেন,

    ﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ ٱتَّبِعُواْ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ قَالُواْ بَلۡ نَتَّبِعُ مَآ أَلۡفَيۡنَا عَلَيۡهِ ءَابَآءَنَآۚ أَوَلَوۡ كَانَ ءَابَآؤُهُمۡ لَا يَعۡقِلُونَ شَيۡ‍ٔٗا وَلَايَهۡتَدُونَ ١٧٠﴾ [البقرة: ١٧٠]

    আর যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ যা অবতরণ করেছেন, তার অনুসরণ করো, তারা বলে, ‘না, আমরা বরং অনুসরণ করি তার, যার পর আমাদের পিতৃপুরুষদের দেখেছি। তারা কি তাদের পিতৃপুরুষদের (অন্ধ) অনুসরণ করবে, যদিও তারা ছিল অজ্ঞ এবং পথনির্দেশ কিছুই গ্রহণ করে নি? [সূরা আল-বাকরা, আয়াত: ৭০]

    পূর্ববর্তী বিজ্ঞ আলি সমাজ ও মুজতাহিদগণও অন্ধ তাকলীদ করতে নিষেধ করে গেছেন। কারণ, অন্ধ তাকলীদ মুসলিমদের মাঝে পারস্পরিক দ্বন্ধ ও দুর্বলতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। যে কোনো বিরোধপূর্ণ বিষয়ে আল্লাহ ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথের অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে মুসলিমদের ঐক্য ও শক্তি। এ কারণেই আমরা সাহাবদের মধ্যে কাউকেই যাবতীয় বিষয়ে কোনো বিশেষ কারো অনুসরণ করতে দেখি না। তদ্রূপ চার ইমামের কাউকেও তাদের কাছে ভিন্ন কোনো মতের সত্যতা প্রকাশের পর নিজের মতের পরই অবিচল থাকতেও দেখি না। নিজেদের মতের বিপরীত যদি হাদীসের কোনো প্রমাণ তারা পেতেন, তো নির্বিবাদে তা গ্রহণ করে নিতেন। তাছাড়া অন্যদেরকেও তারা কোনো দলল-প্রমাণ না বুঝে অন্ধের মত তাদের অনুসরণ করতে নিষেধ করতেন। তারা পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত বাণীটি সম্পর্কে সম্মকরূপে অবগতই ছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

    ﴿ٱتَّبِعُواْ مَآ أُنزِلَ إِلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِۦٓ أَوۡلِيَآءَۗ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ ٣﴾ [الاعراف: ٣]

    তোমাদের রবের কাছ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অনুসরণ করো। আর তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। তোমরা খুব অল্পই মনে রাখো।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩]

    দ্বিতীয় কারণ: এই ভ্রষ্টতার দ্বিতীয় কারণ হলো, আয়াতে করআন বা হাদীসে রাসূলের কিছু গ্রহণ ও কিছু বর্জন। এর ফলে তারা নিজেদের মতামতের পক্ষে জোরালো কোনো প্রমাণ পেশ করতে তো সক্ষম হচ্ছেই না, বরং ক্ষেত্র বিশেষে করআনের সঠিক মর্ম ও তাফসীরও উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কোনো কোন ক্ষেত্রে আয়াতের প্রকৃত মর্ম থেকে সরে গিয়ে সুদূরতম কোনো অপব্যাখ্যার মাধ্যমে নিজেদের মত প্রমাণের অপচেষ্টা করছে। সে রকই একটি আয়াত হলো:

    ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ ٱلۡوَسِيلَةَ﴾ [المائ‍دة: ٣٥] 

    ওহে যারা ঈমান এনেছো, আল্লাহকে ভয় করো এবং তার দিকে উসীলা অন্বেষণ করো[সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩৫]

    এখানে উসীলা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ সন্তুষ্ট হন এমন আমল দ্বারা তার নৈকট্য অর্জন করা। এ তাফসীর বিষয়ে তাফসীরবিদদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। এখন এই আয়াত দিয়ে আললাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য চাওয়ার বৈধতা দানের চেষ্টা করা মূল বিষয় থেকে ‘তাহরীফ’ তথা কুরআনের মর্ম বিকৃতির চেষ্টা ছাড়া আর কী হতে পারে? তাহলে বুঝা গেল যে আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যে উসীলার নির্দেশ দিয়েছেন তা হচ্ছে, সৎকাজ ও যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে এমন কাজের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য প্রার্থনা করা। এ তাফসীরের ব্যাপারে তাফসীরকারগণের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই।

    অনুরূপভাবে আরও যে বিশুদ্ধ হাদীসটি বুঝার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সমস্যা হয়েছে তা হচ্ছে, উর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দো‘আর উসীলা গ্রহণের বিষয়টি, যার বর্ণনা পূর্বে চলে গেছে প্রতিপক্ষ এ সম্পর্কে বলতে চায়, আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণেই র তার উসীলা গ্রহণ করেছিলেন। তাদের উত্তরে আমরা বলবো, মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যে বৃষ্টির জন্য ইয়াযীদ ইবনুল আসওয়াদ আল-জুরাশীর মত ব্যক্তির উসীলা গ্রহণ করেছিলেন, সেটা কোন শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে? অথচ জুরাশী দো‘আও করেছিলেন এবং সেই দো‘আ কবুলও হয়েছিল এবং আল্লাহ বৃষ্টিও বর্ষণ করেছিলেন।

    আরো আছে, এক অন্ধের হাদীস। যেই অন্ধ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তার জন্য দো‘আর আবেদন করে বলেছিলো, ‘আপনি আমার জন্য দো‘আ করুন, তিনি যেন আমাকে সুস্থতা দান করেনজবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, ‘তুমি চাইলে আমি দো‘আ করবো, আর চাইলে তুমি ধৈর্যও ধারণ করতে পারো। সেটাই হবে তোমার জন্য উত্তম।’ লোকটি বললো, আপনি আমার জন্য দো‘আই করুন। ফলে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উত্তমরূপে অযু করে আসতে বললেন। তারপর এইভাবে দো‘আ করতে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমতের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বারা আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছিহে মুহাম্মদ! আমি আপনার দ্বারা আমার প্রয়োজন পূরণের জন্য আমার রবের সামনে মুখ ফিরাচ্ছি। হে আল্লাহ! আমার ব্যাপারে তাঁর সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ ফলে লোকটি এমনভাবে ফিরে আসলো যে, তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে

    এই হাদীসের মর্ম খুবই স্পষ্ট। লোকটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তার জন্য দো‘আ করার আবেদন জানিয়েছে এবং পাশাপাশি আল্লাহর কাছে এই দো‘আও করেছে, যেন তিনি তাঁর রাসূলের দো‘আ কবুল করেন। কারণ লোকটি বলেছিল, “হে আল্লাহ! আমার ব্যাপারে তাঁর সুপারিশ গ্রহণ করুন

    তৃতীয় কারণ: এই জাতীয় ভ্রষ্টতার তৃতীয় কারণ হলো, দুর্বলবানোয়াট হাদীসের পর আমল। যে হাদীসগুলোর কোনো ভিত্তি নেই এবং কোনো কোন ক্ষেত্রে তা মূল দ্বীনের সঙ্গেই সাংঘর্ষিকউদাহরণস্বরূপ নিম্নে আমরা তার দু’একটি উল্লেখ করছি:

    যেমন, একটি হাদীস এরকম বলা হয়, ‘তোমরা আমার উচ্চ মর্যাদার উসীলা গ্রহণ করো। কারণ, আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমার মর্যাদা অনেক সুউচ্চ।’

    আরেকটি হাদীস এ রকম বর্ণনা করা হয়েছে, ‘আদম আ. যখন ভুল করে ফেললেন, তিনি আল্লাহর নিকট এই বলে ক্ষমা চাইলেন, ‘হে রব! আমি আপনার নিকট মুহাম্মদের উসীলা দিয়ে ক্ষমা চাইছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন তাকে বলা হলো, আমি তো মুহাম্মদকে সৃষ্টিই করি নি, তুমি তার কথা জানলে কী করে? তখন আদম আ. বললেন, হে রব! যখন আপনি আমাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করলেন এবং আমার দেহে আপনার রূহ ফুঁকে দিলেন, আমি মাথা উঠিয়ে দেখতে পেলাম, আপনার আরশের পায়ায় লিপিবদ্ধ রয়েছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্’। তখন আমি বুঝতে পারলাম, আপনার নিকট অত্যাধিক প্রিয় না হলে এই নামটি আপনি আপনার নামের সঙ্গে জুড়ে দিতেন না। তখন আল্লাহ বললেন, ‘যদিও আমি এখনও মুহাম্মদকে সৃষ্টি করি নি, তবুও তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম।’

    ইমাম যাহাবী রহ. উপরোক্ত বর্ণনাটি সম্পর্কে বলেছেন, এটা একটি বাতিল ও মদু‘ হাদীস।

    আরো একটি বর্ণনা আছে, ‘যে ব্যক্তি সালাতের জন্য বাড়ি থেকে বের হলো এবং বললো:

    اللهم إني أسألك بحق السائلين عليك، وأسألك بحق ممشاي هذا ...

    শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যা ইমাম যাহাবী এই  হাদীসটিকে দুর্বল বলে মত ব্যক্ত করেছেন।

    সর্বশেষ আমাদের বক্তব্য হলো, তওহীদপন্থী সকলের কর্তব্য হচ্ছে উসীলার এমন সব পদ্ধতি বর্জন করে চলা, যেগুলো অবলম্বন করলে কোনটি দ্বারা ‘শিরকে আকবর’ (বড় শির্ক), কোনটি দ্বারা ‘শির্কে আসগর’ (ছট শির্ক) বা কোনটির কারণে হারাম বিদআতের শিকার হতে হয়। তাছাড়া তা দো‘আতে সীমালঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত। আর এ কারণেই আমাদের অনেক দো‘আ নিষ্ফল হয়ে থাকে। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা তো কেবল শরী‘আত সম্মত দো‘আই কবুল করেন।

    অনুরূপভাবে প্রত্যেক তাওহীদবাদী মুসলিমের উচিৎ কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত শব্দ ও বাক্য দিয়েই দো‘আ করা। কেননা, সেসব দো‘আই গ্রহণযোগ্য হবার অধিক সম্ভাবনা রয়েছে এবং ঐসব বাক্য দ্বারা দো‘আ করার ফলে পূণ্য ও সওয়াব পাওয়ারও আশা রয়েছে।

    পরিশিষ্ট

    হে আল্লাহ! আপনার সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলীর উসীলায় আপনার নিকট প্রার্থনা করছি এবং আপনার নৈকট্য কামনা করছি। হে আল্লাহ! আপনার প্রতি আমাদের ঈমান, আপনার নবীর প্রতি আমাদের ভালোবাসা, তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ এবং আমাদের নেক আমল, যেগুলোর পিছনে আপনার সন্তুষ্টি লাভই শুধু আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, এগুলোর উসীলায় আপনার কাছে আমাদের চাওয়া যে, আপনি আপনার একত্ববাদে বিশ্বাসী বান্দা হিসাবে আমাদেরকে কবুল করুন। আমাদেরকে আপনার পথের অনুসারী, আপনার পথে আহবানকারী এবং আপনার নবীর হিদায়াত ও হকের পর প্রতিষ্ঠিত করুন। আমাদেরকে আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা ও আহবানে সাড়া দানকারী। আর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন, সকল সাহাবী ও িয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুগামীদের প্রতি

     


    উসীলা গ্রহণের কিছু কিছু পদ্ধতি শরী‘আতসম্মত। আবার কিছু কিছু পদ্ধতি শরী‘আত অনুমোদিত নয়। অনুমোদিত নয় এমন উসীলা গ্রহণের বিষয়ে অনেকেই তাদের মতের পক্ষে কিছু মাওদু‘ ও দুর্বল হাদীস প্রমাণ রূপে পেশ করে থাকেন। কেউ কেউ বরং এ সংক্রান্ত আয়াতে কুরআনীর অপব্যাখ্যার মাধ্যমে নিজেদের মত প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও করে থাকেন।

    তাই লেখক যথাসম্ভব কুরআন-সুন্নাহ’র দলীল অনুযায় আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ‘উসীলা’ বা কোনো মাধ্যম গ্রহণ করার বৈধতা-অবৈধতা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এ পুস্তিকটিতে

     

     

     

     

     

     

     

     

     

     

     

     

     

     

     



    [1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৫২

    [2] মুত্তাফাকুন আলাইহি

    [3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৩৩

    [4] সহীহ বুখারী

    [5] সহীহ মুসলিম

    [6] তিরমিযী

  • 0 comments:

    Post a Comment

    New Research

    Attention Mechanism Based Multi Feature Fusion Forest for Hyperspectral Image Classification.

    CBS-GAN: A Band Selection Based Generative Adversarial Net for Hyperspectral Sample Generation.

    Multi-feature Fusion based Deep Forest for Hyperspectral Image Classification.

    ADDRESS

    388 Lumo Rd, Hongshan, Wuhan, Hubei, China

    EMAIL

    contact-m.zamanb@yahoo.com
    mostofa.zaman@cug.edu.cn

    TELEPHONE

    #
    #

    MOBILE

    +8615527370302,
    +8807171546477