• কমিউনিজম (সাম্যবাদ)

    কমিউনিজম (সাম্যবাদ)

    কমিউনিজম হচ্ছে নাস্তিকতাপূর্ণ এক মতবাদ, যার প্রতিষ্ঠাতা কার্ল মার্কস ও তার সাহায্যকারী ফ্রেডারিক এঞ্জেল। এ মতবাদের মূলনীতি হচ্ছে আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করা, সকল নবীদের মিথ্যারোপ করা ও সকল দীনের সাথে কুফরি করা।

    কমিউনিজম বিকাশ ও তার বিস্তারের কারণ:

    ১. গির্জার কুসংস্কারের বিপক্ষে আধুনিক বিজ্ঞান জয়ী হলে নাস্তিকতার বিস্তার লাভ করা।

    ২. শিল্প বিপ্লব পরবর্তী শ্রমজীবী মানুষের উপর অত্যাচারের খড়ক নেমে আসা।

    ৩. ইয়াহূদী পরিকল্পনার ফসল কমিউনিজমের প্রতিষ্ঠাতা (মার্কস) ছিল একজন ইয়াহূদী। কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের অধিকাংশ শাসক ও বিশ্বে কমিউনিজম রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা ছিল ইয়াহূদী।

    অনুরূপ যে সমাজে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয় ও যেখানে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ বেড়ে যায়, সে সমাজকে কমিউনিস্টরা তাদের উর্বর ভূমি জ্ঞান করে। এভাবে কমিউনিষ্ট মতবাদ বিস্তার লাভ করে।

    যেসব নীতি দ্বারা কমিউনিষ্ট মতবাদ পরিপুষ্ট হয়:

    ১. তর্কদর্শন:

    তর্কদর্শন মূলত জার্মানি রূপকথামূলক (কাল্পনিক) এক দর্শন, তার শ্লোগান: প্রত্যেক বস্তু নিজের সাথে তার বিপরীত বস্তু বহন করে, সকল বিপরীত বস্তু থেকে তৃতীয় শক্তি জন্ম লাভ করে, এ তৃতীয় শক্তি আবার বিপরীত শক্তি ধারণ করে, এভাবে চলতে থাকে। কার্ল-মার্কস এ থিউরিকে বাস্তবে রূপায়িত করেন, যেমন তিনি নির্ধারণ করেন:

    পুঁজিবাদ (একটি শক্তি) সে তার সাথে বিপরীত বস্তু: (শ্রমজীবী মানুষ)কে ধারণ করে। পুঁজিবাদ ও শ্রমজীবী উভয়ের মধ্যকার দ্বন্দ্ব থেকে তৃতীয় শক্তি: সাম্যবাদ বা কমিউনিজম জন্ম হয়।

    ২. সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা:

    ইউরোপে সংস্কারমূলক বিভিন্ন মতবাদের জন্ম হয়, যার নামকরণ করা হয় সমাজতান্ত্রিক। এগুলো মূলত কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের উপর জুলম ও অত্যাচারের প্রতিবাদে আত্মপ্রকাশকারী মতবাদ।

    মার্কস তার নেতৃত্বের আসনে বসে এবং এসব চিন্তাধারা থেকে উপকৃত হয়, কিন্তু সে তার চিন্তাকে দু’টি স্বতন্ত্র ভিন্নমাত্রা প্রদান করে:

    ক. মার্কসের সমাজতন্ত্র নাস্তিকতায় পূর্ণ, কোনো দীন ও প্রচলিত আখলাকে বিশ্বাস করে না।

    খ. মার্কসের ধারণা মতে, তার সমাজতন্ত্র প্রকৃত সমাজতন্ত্র, অন্যান্য চিন্তাধারার বিপরীত তার মতবাদই বৈজ্ঞানিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, অন্যান্য মতবাদ শুধু কল্পনাপ্রসূত সংস্কারমূলক শ্লোগান। তাই মার্কস তার কমিউনিজম বা সাম্যবাদকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র নামকরণ করে।

    ৩. ডারউইনের থিউরি:

    ডারইউনির থিউরি বস্তুত কল্পনামাত্র, কোনো মতবাদ হওয়ার যোগ্যতা তার মাঝে নেই, বাস্তব হবে দূরে থাক। এ কল্পনাপ্রসূত মতবাদ মনে করে, জীবন একটি মৌচাক থেকে উত্তরোত্তর কয়েকটি বাস্তব বা অবাস্তব স্তর পার করে মানুষ পর্যন্ত উন্নত হয়। এ উন্নতি হয় সৃষ্টিকারী শক্তি অর্থাৎ স্রষ্টা ব্যতীত। মার্কস ও এঞ্জেল (ডারউইনের এমন) দু’টি নীতি ব্যবহার করে, যার উপর সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তা হচ্ছে:

    ক. মানুষের পশুত্ব ও তার বস্তুজগৎ।

    খ. বল প্রয়োগ।

    ডারউইনের কাল্পনিক মতবাদ যেরূপ ধরে নেয় যে, জীবন অবশ্যম্ভাবী, জীবিতদের তাতে কোনো হাত নেই। সেভাবেই কমিউনিজম বা সাম্যবাদ ধরে নেয় যে, ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ববাদ (অর্থাৎ এক স্তর থেকে অপর স্তরে স্থানান্তরিত হওয়া, যার বর্ণনা সামনে আসছে) অবশ্যম্ভাবী, তাতে মানুষের কোনো হাত নেই।

    কমিউনিজম বা সাম্যবাদের গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি:

    ১. কোনো ইলাহ নেই, জীবন হচ্ছে বস্তু: :

    এ কথার সারবস্তু আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা, সকল রাসূলদের মিথ্যারোপ করা, ধর্মীয় সকল আকিদা ও তার নির্দেশিত আচরণকে অস্বীকার করা এবং মানুষের জীবনকে সমাজতান্ত্রিক জীবন ও জড়পদার্থের জীবন ধারার অনুগত করা।

    ২. ইতিহাসের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা প্রদান করা:

    মানুষকে জন্তু হিসেবে গ্রহণ করে তার উপর ভিত্তি করে কমিউনিজম বিশ্বাস করে যে, একমাত্র পানাহারের তাগিদ মানুষকে প্রত্যেক কাজ ও চিন্তার জন্য উদ্বুদ্ধ করে, মানুষের ধর্ম ও চরিত্র তাদের অর্থনৈতিক উন্নতির অন্তরায়। কমিউনিজম মানুষের ইতিহাসকে অবশ্যম্ভাবী পাঁচটি ভাগে ভাগ করে:

    ক. প্রাথমিক কমিউনিজম স্তর।

    খ. দাসত্বের স্তর।

    গ. জমিদারিত্বের স্তর।

    ঘ. পুঁজিবাদের স্তর।

    ঙ. মার্কসি কমিউনিজম বা মার্কসি সাম্যবাদের স্তর। তাদের ধারণা এ মতবাদ নিশ্চিতভাবে আগামী বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে।

    ৩. বাস্তবতা মতবাদকে জন্ম দেয়, তার বিপরীত নয়:

    বাস্তবতা মতবাদকে জন্ম দেয়, মতবাদ বাস্তবতাকে জন্ম দেয় না। অর্থাৎ এ পাঁচটি স্তর মানুষের মাঝে কিছু বিশ্বাস ও চিন্তার জন্ম দেয়, যা মূলত তার অর্থনৈতিক অবস্থা ও তার জীবন স্তরের বিপরীত দিক বা বিশ্বাস ও চিন্তা, ভিন্ন কিছু নয়। এটা—তার ধারণা মোতাবেক—অবশ্যম্ভাবী, এর থেকে পলায়ন করার কোনো পথ নেই এবং এতে কোনো দ্বিদমত নেই।

    উদাহরণত: জমিদারি স্তর, এ স্তরের জন্য দীন ও আখলাক অবশ্যম্ভাবী, যেমন দীনের প্রতি ঈমান আনা, সম্মান সংরক্ষণ ও পরিবারিক পদ্ধতি সুসংহত করা তার দাবি। যখন মানব জাতি অবশ্যম্ভাবীভাবে পুঁজিবাদে প্রত্যাবর্তন করে, তখন তার জন্য নাস্তিক হওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়, এতে নারীরা শ্রমজীবী হবে এবং পরিবারিক কোনো বন্ধন থাকবে না। এ স্তরে সম্মানকে ধুলোয় মিশানো সঠিক আচরণ বিবেচিত হয়।

    এ মিশন বাস্তবায়ন করার নিমিত্তে কমিউনিজম বা সাম্যবাদ সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোনো কৃষক সমাজ ধর্মহীন পাওয়া অসম্ভব, আবার ধর্মযুক্ত শিল্প সমাজ পাওয়াও অসম্ভব।

    সুতরাং মানব জাতি যখন পরিপূর্ণরূপে কমিউনিজম বা সাম্যবাদে প্রত্যাবর্তন করবে—সাম্যবাদীদের নিকট এ স্তরে প্রত্যাবর্তন করা অবশ্যম্ভাবী—তখন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব, ব্যক্তি মালিকানা, পরিবার ও দীন সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হবে।

    মার্কস এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, কিন্তু বাস্তবতা তার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে সম্পূর্ণরূপে, কারণ সাম্যবাদ বিপ্লব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চীন ও রাশিয়ায়, এ দু’টি দেশ কৃষি প্রধান, কখনো পুঁজিবাদের স্তর পার করে নি। আর ব্রিটেন, যার সম্পর্কে মার্কস ভবিষ্যৎবাণী করেছিল যে, এটা সর্বপ্রথম কমিউনিস্ট বা সাম্যবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে, কারণ তাতে পুঁজিবাদ পূর্ণতা পেয়েছে, বর্তমান পর্যন্ত তা পুঁজিবাদ রাষ্ট্ররূপেই আছে।

    এটা এক বাস্তবতা, ইউরোপ ব্যতীত অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও তার এ সিদ্ধান্ত সঠিক ও তার অবশ্যম্ভাবী বলে বেড়ানো কাজগুলো সত্য প্রমাণ হয় নি। উদাহরণত, শিল্প বিপ্লবের দিক থেকে জাপান ইউরোপের পুঁজিবাদী ও সাম্যবাদী অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে, তা সত্যেও সে স্বীয় দীন, প্রথা ও আচরণকে প্রাচ্যের কৃষি প্রধান অনেক দেশের তুলনায় অধিক আঁকড়ে আছে, শিল্প প্রধান দেশের তুলনায় তো আছেই।

    আলবেনিয়া ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি পশ্চাৎ মুখী, অথচ সে বর্তমান শাসনের পূর্বে সবচেয়ে বেশি মার্কসি পোশাক পরিধান করে ছিল।

    ইসলামি বিশ্বে ইসলামি জাগরণের সূচনাই প্রমাণ করে ইসলামকে আঁকড়ে ধরে শিল্পন্নীতির চূড়ায় পৌঁছা সম্ভব। শিল্পনীতি বা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন মুসলিম উম্মাহর কর্তব্য, কারণ তার দীনই তাকে এরূপ নির্দেশ প্রদান করে।

    লেখক: ড. সফর ইবনে আব্দুর রহমান আল-হাওয়ালি
    অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
    সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    সৌজন্যেঃ ionlinemedia

  • 0 comments:

    Post a Comment

    New Research

    Attention Mechanism Based Multi Feature Fusion Forest for Hyperspectral Image Classification.

    CBS-GAN: A Band Selection Based Generative Adversarial Net for Hyperspectral Sample Generation.

    Multi-feature Fusion based Deep Forest for Hyperspectral Image Classification.

    ADDRESS

    388 Lumo Rd, Hongshan, Wuhan, Hubei, China

    EMAIL

    contact-m.zamanb@yahoo.com
    mostofa.zaman@cug.edu.cn

    TELEPHONE

    #
    #

    MOBILE

    +8615527370302,
    +8807171546477