• ইসলামের দৃষ্টিতে দলাদলি

    ইসলামের দৃষ্টিতে দলাদলি

    ইসলামের দৃষ্টিতে দলাদলি

    পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ছয়শত কোটি মানুষ বাস করে। তাদের মধ্যে জাতীগতধর্মগতবর্ণগতগোত্রগতভাষাগতসংস্কৃতগতসীমানাগতবিভক্তি লক্ষ করা যায় মুসলিমদের মধ্যে জাতীগতধর্মগতবর্ণগতগোত্রগতভাষাগতসংস্কৃতগতসীমানাগতবিভক্তি না থাকলেও আজ তারাও শত শত দলে বিভক্ত হয়ে আছে। আর এ বিভক্তির কারনে তাদের ধর্ম ইসলামকে টিকিয়ে রাখাই দুস্কর হয়ে দাড়িয়েছে। নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারনে নিজেরাই না্না প্রকার দু:-কষ্টবালা-মুসিবতে মধ্যে কালাতিপাত করছে। এমনি ভয়াবহ যুদ্ধর মত ফেতনায় জর্জরিত। যার প্রকৃত উদাহরন হল ইরাকসিরিয়া ও ইয়েমেন। ইসলামের প্রথম যুগে মুসলিমগন শিয়াখারিজীমুতাযিলীজাহমীকাদারীজাবারীসহ অনেক ফিরকায় বিভক্ত হয়ে যায়। আজও তারা বিভিন্ন নামে বিভক্ত। এক বাংলাদেশেই হাজারের অধিক ফিরকা বা দলেন সন্ধান পাওয়া যাবে। ইসলামের নামে দলে দলে বিভক্ত হওয়া কি ইসলাম সমর্থন করেআসুন এর উত্তর খুজি কুরআন হাদিসের আলোকে। কুরআন ও হাদীসে বারবার বিভক্তিফিরকাবাজি বা দলাদলি থেকে সতর্ক করা হয়েছে।

     আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

    وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا وَاذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنْتُمْ عَلَى شَفَا حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ فَأَنْقَذَكُمْ مِنْهَا
    তোমরা আল্লাহ্র রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর ঐক্যবদ্ধভাবে এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর: তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেনফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুন্ডের প্রান্তে ছিলেআল্লাহ্ তা থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। (আল-ইমরান ৩:১০৩)।

     

     অন্যত্র বলেন :

    وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ ﴿31﴾ مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ ﴿الروم32﴾

    অর্থ: তোমরা ঐ মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না, যারা দ্বীনকে টুকরা টুকরা করে ফেলেছে এবং যারা দলে দলে বিভক্ত হয়েছে, প্রত্যেক দল তাদের কাছে যা ছিল তাই নিয়েই খুশি (সূরা রূম, ৩০: ৩১ ও ৩২ আয়াত)

     

    ৩। মহান আল্লাহ বলেন:
    وَلا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
    অর্থ: তোমরা তাদের মত হয়ো নাযারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পরে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং মতভেদ করেছেএদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” (সূরা আল-ইমরান ৩:১০৫)।

    ৪। অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
    وَلا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ
    অর্থ: এবং অন্তর্ভুক্ত হয়ো না মুশরিকদেরযারা নিজেদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উৎফুল্ল।” (সূরা রূম: ৩০-৩২ আয়াত)
    ৫। অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু বলেন:
    إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ
    অর্থ: যারা তাদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোনো দায়িত্ব তোমার নয়তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।” (সূরা আনআম-: ১৫৯ আয়াত)
    অন্যত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
    شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
    অর্থ: তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দীনযার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে- আর যা আমি ওহী করেছি আপনাকে- এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীমমূসা এবং ঈসাকেএ বলে যেতোমরা দীন প্রতিষ্ঠা কর এবং তাতে দলাদলি-বিচ্ছিন্নতা করো না।” (সূরা শুরা: আয়াত ১৩)
    এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনু কাসীর বলেন, দীন প্রতিষ্ঠা কর এবং তাতে দলাদলি করো না: অর্থাৎ মহান আল্লাহ সকল নবীকে (আলাইহিমুস সালাম) নির্দেশ দিয়েছেন ভালবাসা ও ঐক্যের এবং নিষেধ করেছেন দলাদলি ও মতভেদ থেকে।” (তাফসীর ইবন কাসীর ৭/১৯৫)।
     পূর্ববর্তী উম্মাতগুলোর মতভেদ ও বিভক্তি প্রসঙ্গে কুরআন কারীমে বারবারই বলা হয়েছে যেজ্ঞানের আগমনের পরেও তারা বাড়াবাড়ি করে বিভক্ত হয়েছে। আল্লাহ বলেন:
    وَمَا تَفَرَّقُوا إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ
    অর্থ: তাদের নিকট ইলম আগমনের পরে পারস্পরিক বাড়াবাড়ি করেই শুধু তারা দলাদলি করেছে।” (সূরা শূরা ১৪ আয়াত)
    ১। প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :  আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি আল্লাহকে ভয় করার, শোনা ও মান্য করারযদিও তোমাদের আমীর হয় কোনো হাবশি দাস কারণ তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে নানা মতবিরোধ দেখতে পাবে তখন তোমাদের করণীয় হবে, আমার সুন্নত এবং হেদায়েত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনদের সুন্নতকে নিজেদের উপর অপরিহার্য করে নেওয়া সেসব সুন্নতকে মুজবুতভাবেচোয়ালের দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরার ন্যায় আঁকড়ে ধরবে  দ্বীনের মধ্যে নতুন কোনো আমল সংযোজনের ব্যাপারে খুবই সাবধান থাকবে; নিশ্চয়ই সমস্ত নতুন আমলই বিদআত এবং সমস্ত বিদআতই গোমরাহী এবং সমস্ত গোমরাহি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে) (আবু দাউদ এবং অন্যান্য, ছহীহ)

     

    ২। মুআবিয়া (রা) বলেনরাসূলুল্লাহ বলেন, তোমরা জেনে রাখ! তোমাদের পূর্ববর্তী কিতাবীগণ (ইহূদী ও খৃস্টানগণ) ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর এ উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। এদের মধ্যে ৭২ দল জাহান্নামে এবং একটি দলই জান্নাতে। তারা জামাআত।” (আবূ দাউদ ৪/১৯৮হাকিমআল-মুসতাদরাক ১/২১৮। হাকিম ও যাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইবনু হাজার হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আলবানীসাহীহাহ ১/৪০৪-৪১৪)
    অন্য হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একমাত্র আমি এবং আমার
     সাহাবিদের মতের অনুসারী দল ব্যতীত সকলেই জাহান্নামে যাবে (তিরমিযিহাসান)

     

    ৩। ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত- আমাদের জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দাগ টানলেন তারপর বললেন: এটা আল্লাহর সোজা (সঠিক) রাস্তা তারপর তার ডানে ও বামে আরো কিছু দাগ টানলেন তারপর বললেনঃ এ রাস্তাগুলোর সবকটিতে শয়তান বসে মানুষদেরকে তার দিকে ডাকছে এরপর কুরআন থেকে পাঠ করলেন: আর এটি তো আমার সোজা পথ সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো নাতাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেনযাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর (আহমদ, নাসাঈ, হাকেম সহিহ)

     

    যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা) বলেনরাসূলুল্লাহ সা. বলেন, পূর্ববর্তী উম্মাতগণের ব্যাধি তোমাদের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছেসে ব্যাধি হলো হিংসা ও বিদ্বেষ। বিদ্বেষ মুণ্ডনকারী। আমি বলি না যেতা মাথার চুল মুণ্ডন করেবরং তা দীন মুণ্ডন করে। যারা হাতে আমার জীবন তার শপথ! ঈমানদার না হলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর তোমরা পরস্পরকে ভাল না বাসলে ঈমানদার হবে না। আমি কি তোমাদেরকে সে বিষয়ের কথা বলব না যা তোমাদের মধ্যে পারস্পারিক ভালবাসা প্রতিষ্ঠিতি করবে। তোমাদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।” (তিরমিযীআস-সুনান ৪/৬৬৪। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)

    ৪। ইবনু আব্বাস (রা) বলেনরাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেউ তার শাসক বা প্রশাসক থেকে কোন অপছন্দনীয় বিষয় দেখলে তাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কারণ যদি কেউ জামাআতের (সমাজ বা রাষ্টের ঐক্যের) বাইরে এক বিঘতও বের হয়ে যায় এবং এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেতাহলে সে জাহিলী মৃত্যু বরণ করল।” (বুখারী ও মুসলিম)

    ৫। আবু হুরাইরা (রা) বলেনরাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,যে ব্যক্তি তাআত’ অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় আনুগত্য থেকে বের হয়ে এবং জামাআতঅর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ বা বৃহত্তর সমাজ ও জনগোষ্ঠী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত্যু বরণ করল সে জাহিলী মৃত্যু বরণ করল।” (মুসলিম)

     

    ৬। আরফাজা (রা) বলেনরাসূলুল্লাহ সা. বলেন, ভবিষ্যতে অনেক বিচ্যুতি-অন্যায় সংঘটিত হবে। যদি এমন ঘটে যেএ উম্মাতের ঐক্যবদ্ধ থাকা অবস্থায় কেউ এসে সে ঐক্য বিনষ্ট করে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চায় তবে সে যেই হোক না কেন তোমরা তাকে তরবারী দিয়ে আঘাত করবে। অন্য বর্ণনায়: তোমাদের বিষয়টি একব্যক্তির বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি যদি এসে তোমাদের ঐক্য বিনষ্ট করতে বা জামাআত’ বিভক্ত করতে চায় তবে তাকে হত্যা করবে।” (মুসলিম)

    ৭। নাসায়ীর বর্ণনায়, তোমরা যাকে দেখবে যে সে ঐক্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে বা মুহাম্মাদের (সা.) উম্মাতকে বিভক্ত করতে চাচ্ছে সে যেই হোক না কেন তাকে হত্যা করবে। কারণ আল্লাহর হাত ঐক্যের উপর। আর যে ঐক্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয় শয়তান তার সাথে দৌঁড়ায়।” (আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)

    ৮। হারিস আশআরী (রা) বলেনরাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছিযেগুলির নির্দেশ আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন: শ্রবণআনুগত্যজিহাদহিজরত ও জামাআত (ঐক্য)কারণ যে ব্যক্তি জামাআত (ঐক্য) থেকে এক বিঘত সরে গেল সে ইসলামের রজ্জু নিজের গলা থেকে খুলে ফেললযদি না ফিরে আসে।” (তিরমিযী। তিরমিযী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

    ৯। অন্য হাদীসে উমার (রা) বলেনরাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,তোমরা জামাআত (ঐক্য) আকড়ে ধরে থাকবে এবং দলাদলি বা বিচ্ছিন্নতা থেকে সাবধান থাকবে। কারণ শয়তান একক ব্যক্তির সাথে এবং সে দুজন থেকে অধিক দূরে। যে ব্যক্তি জান্নাতের প্রশস্ততা চায় সে জামাআত (ঐক্য) আঁকড়ে ধরুক। (তিরমিযী। তিরমিযী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)

    ১০। অন্য হাদীসে নুমান ইবন বাশীর (রা) বলেনরাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,ঐক্য রহমত এবং বিভক্তি আযাব।” (মুসনাদ আহমদআলবানী সাহীহুত তারগীবে হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।)

    ১১। আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রা) বলেনরাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,আল্লাহ আমার উম্মাতকে বিভ্রান্তির উপর ঐক্যবদ্ধ করবেন না। আর আল্লাহর হাত ঐক্যের উপর/ সাথে এবং যে ব্যক্তি বিচ্ছিন্ন হবে সে জাহান্নামের মধ্যে বিচ্ছিন্ন হবে।” (তিরমিযী। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেনশেষ বাক্যটি বাদে)

     

    ১২।আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ্ (সা)  ইরশাদ করেনঃ নিশ্চয়ই দীন সহজ-সরল। দীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে দীন তার উপর বিজয়ী হয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং (মধ্যপন্থার) নিকটবর্তী থাকআশান্বিত থাক এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছু অংশে (ইবাদতের মাধ্যমে) সাহায্য চাও। (সহিহ বুখারী :: খন্ড ১ :: অধ্যায় ২ :: হাদিস ৩৮)।

     

     

    ১৩। মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াকূব ফিরোযআবাদী (৮১৭ হিতার সংকলিত তানবীরুল মিকবাস” নামক তাফসীর গ্রন্থে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাথেকে উদ্ধৃত করেছেন যেতিনি বলেছেন:
    আল্লাহ সকল নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন যেদীন প্রতিষ্ঠা করঅর্থাৎ দীনের বিষয়ে ঐকমত হও এবং তাতে দলাদলি করো না’ অর্থাৎ দীনের বিষয়ে মতভেদ করো না।” (ফিরোযআবাদীতানবীরুল মিকবাস ২/)

    উপরে বর্নিত কুরআনের আয়াত ও সহিহ হাদীসের আলোকে বলতে পারি ইসলামে বিভক্তিফিরকাবাজি বা দলাদলি বলতে কিছু নেই। তার পরোও ফিরকাবাজি বা দলাদলি চলছে কিন্তু কেনআসুন উত্তর খুজি।

     

    ফিরকাবাজি বা দলাদলির মূল কারন সমুহ হলঃ

    ক. আকীদার মতভেদ
    খ. ফিকহী মতভেদ

    গ. নিজের মতামতকর নির্ভূল জ্ঞান করা

    ঘ. সমালোচনায় ইসলামী আদব লঙ্ঘন

    ঙ. জম্ম থেকে তাওহিদ সম্পর্কে জ্ঞানের অপ্রতুলতা
    চ. আকীদা ও ফিকহী মতভেদে সাহাবীগণের পদ্ধতি পরিত্যাগ

    বিভক্তির মুল কারণ হল আকীদা বা বিশ্বাসগত ইখতিলাফ বা মতভেদ। তবে ফিকহি মাসলা মাসায়েলের ক্ষেতেও ইখতিলাফ বা মতভেদ দেখা যায়। মতভেদ থেকে শুরু হয় মতবিরোধ আর মতবিরোধ থেকে সৃষ্টি হয় নতুন নতুন ফিরকা বা দলেরযারা মূল ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করে। আর এই বিচ্ছিন্ন হওয়া বা দলে দলে বিভক্ত হওয়া কে বলা হয় ইফতিরাক।

    কুরআন হাদিসে ষ্পষ্টভাবে উল্লেখ নেইএমন ফিকহি মাসলা মাসায়েলের ক্ষেতে ইখতিলাফ বা মতভেদ করা জায়েয হলেওআকিদার ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতভেদ জায়েয নেই কারন আকিদার ছয়টি বিষয় (আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাসফিরিশতাগণের প্রতি বিশ্বাসকিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাসরাছূলগণের প্রতি বিশ্বাসশেষ দিনের প্রতি বিশ্বাসতাক্বদীরের  ভালো মন্দেন প্রতি বিশ্বাসযার সবগুলিই গায়েবের সাথে সম্পৃক্ত এবং গায়েব জানার জন্য অহীর প্রয়োজন। তাই আকিদার ক্ষেত্রে ইখতিলাফ বা মতভেদ করা করা বা করার চেষ্টা করাও হারাম। কিন্তু আকিদা হোক বা ফিকহি মাসলা মাসায়েল হোক উভয় ক্ষেত্রে ইফতিরাক বা বিচ্ছিন্ন হওয়া বা দলে দলে বিভক্ত হওয়া জায়েয নেই

    যেহেতু, ইখতিলাফ বা মতভেদ হল ইফতিরাক বা বিভক্তির অন্যতম কারণ। তাই উভয়ের মধ্যে পার্থক্য জ্ঞান থাকা আবশ্যক। ইখতিলাফ বা মতভেদ একটি মানবীয় প্রকৃতি। কখনোই দুজন মানুষ  শতভাগ একমত প্রসন করতে পারেন না। এই জন্যই ইসলামে পরামর্শের বিধান বাখা হইয়াছে। ইখতিলাফ বা মতভেদ করা জায়েয। কিন্তু ইফতিরাক বা বিচ্ছিন্ন হওয়া বা দলে দলে বিভক্ত হওয়া সকল অবস্থায়ই হারাম।

    আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

    وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا (آل عمران 103)

    অর্থাৎ : আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না  (সূরা আল ইমরান : ১০৩)

    সমাজে আমরা প্রায়ই সর্বত্রই মতভেদ দেখতে পাই। সকল মতভেদ খারাপ নয়। মতভেদ যখন শত্রুতাবিদ্বেষবিভক্তি বা দলাদলি সৃষ্টি করে না তখন তা খারাপ নয়। সাহাবীগণের যুগ থেকে মুসলিম উম্মার ইমাম ও আলিমদের মধ্যে মতভেদ’ বা ইখতিলাফ ছিলকিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের মধ্যে দলাদলি-বিচ্ছিন্নতা বা ইফতিরাক ছিল না। ইখতিলাফকারী আলিম নিন্দিত ননবরং তিনি ইখলাস ও ইজতিহাদের ভিত্তিতে প্রশংসিত ও পুরস্কার-প্রাপ্ত। মুজতাহিদ ভুল করলে একটি পুরস্কার ও সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছালে দুটি পুরস্কার লাভ করেন।

    কিন্তু মতভেদ যখন শত্রুতাবিদ্বেষবিভক্তি বা দলাদলি সৃষ্টি করে তখন তা চূড়ান্তভাবে নিন্দনীয়। এরও কারন আছে মানুষ যখন নিজের মতামত কে নির্ভূল জ্ঞান করে আর অন্যদের ভ্রান্ত ভাবে তখনই শুরু হয় বিরোধ। বিরোধ থেকে শুরু হয় বিভক্তি বা দলাদলি। তাই যে মতভেদ বিভক্তি বা দলাদলির সৃষ্টি করে তা পরিহার করা সকলের কর্তব্য।


    copy

  • 0 comments:

    Post a Comment

    New Research

    Attention Mechanism Based Multi Feature Fusion Forest for Hyperspectral Image Classification.

    CBS-GAN: A Band Selection Based Generative Adversarial Net for Hyperspectral Sample Generation.

    Multi-feature Fusion based Deep Forest for Hyperspectral Image Classification.

    ADDRESS

    388 Lumo Rd, Hongshan, Wuhan, Hubei, China

    EMAIL

    contact-m.zamanb@yahoo.com
    mostofa.zaman@cug.edu.cn

    TELEPHONE

    #
    #

    MOBILE

    +8615527370302,
    +8807171546477