• গান বাজনা ইত্যাদির ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?


    সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি আমাদেরকে সর্বোত্তম দীনের অনুসারী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উম্মত হওয়ার তৌফিক দান করেছেন। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ ইব‌ন আব্দুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপর, যিনি আমাদেরকে কল্যাণকর সকল পথ বাতলে দিয়েছেন ও সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে সতর্ক করেছেন। আরও সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পরিবারবর্গ (আহলুল বাইয়াত) এবং উনার সাথীদের উপর, যারা তার আনীত দ্বীন ও আদর্শকে পরবর্তী উম্মতের নিকট যথাযথ ভাবে পৌঁছে দিয়েছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের অনুসরণ করবে তাদের সবার উপর।

    ১।
    নিশ্চয়ই ইসলাম ধর্ম পরিব্যাপ্ত ও পরিপূর্ণ, অতিরঞ্জনের প্রতি কোনভাবেই মুখাপেক্ষী নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইসলাম’কে পরিপূর্ণ করেই সেটা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন-
    وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَاناً لِّكُلِّ شَيْءٍ ‘আর আমি প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করলাম’ (সুরা নাহল ১৬/৮৯)।

    মানুষ তাদের জীবন-যাপন ও প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে যেসকল বিষয়ের প্রতি মুখাপেক্ষী হয় তার সবগুলোই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। হয়ত সরাসরি বা ইঙ্গিতে অথবা লিখিতভাবে বা মর্মগতভাবে।

    وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِي الأَرْضِ وَلاَ طَائِرٍ يَطِيْرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلاَّ أُمَمٌ أَمْثَالُكُم مَّا فَرَّطْنَا فِي الكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ ثُمَّ إِلَى رَبِّهِمْ يُحْشَرُوْنَ- ‘ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণশীল জীব এবং নিজ ডানার সাহায্যে উড়ন্ত পাখি তারা সকলে তোমাদের মতই এক-একটি জাতি। কিতাবে (লাওহে মাহফূযে) কোন কিছুই আমি বাদ দেইনি। অতঃপর স্বীয় প্রতিপালকের দিকে তাদেরকে একত্রিত করা হবে’ (সুরা আন‘আম ৬/৩৮)।

    আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ- ‘রাসূল যা তোমাদের দেন তা তোমরা গ্রহণ কর আর যা হ’তে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হ’তে বিরত থাক এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তো শাস্তি দানে কঠোর’ (সুরা হাশর ৫৯/৭)।

    এখন চিন্তা করুন তো পবিত্র কুরআন শরিফের কোন জায়গায় পাঁচওয়াক্ত ছালাতের সংখ্যা পাবো? কুরআন শরীফে প্রত্যেক ছালাতের রাক‘আত সংখ্যা বর্ণিত আছে কি? না নেই। কারণ এটা ব্যাখ্যা করা হয়েছে হাদীসে। অর্থাৎ কুরআন শরীফের আয়াতগুলির তাৎপর্য এবং ব্যাখ্যা পবিত্র হাদিসেই বর্ননা করা হয়েছে। না জেনে কেউ যদি এখন দাবী করে কুরআন শরীফে পাঁচওয়াক্ত ছালাতের কথা কোথায় বলা আছে, তাহলে সেটার কী হবে?

    পবিত্র কুরআন শরীফের বিভিন্ন সুরা সুনির্দিষ্ট একটা বা একাধিক ঘটনার উপর নির্ভর করেই নাযিল হয়েছে। এবং সেই আয়াতের অর্থ না বুঝা গেলে সেই আয়াত বুঝার জন্য সংশ্লিট হাদীস এবং এর ব্যাখ্যা / তাফসির পড়ে দেখতে হবে।

    ২।
    সাহাবায়ে কিরামগন (রাদিআল্লাহু আনহু) মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং তাঁর প্রতিটি কাজ ও আচরণ সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে লক্ষ্য করতেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীগণকে ইসলামের আদর্শ ও এর যাবতীয় নির্দেশ যেমন মেনে চলার হুকুম দিতেন, তেমনই তা স্মরণ রাখতে এবং অনাগত মানবজাতির কাছে পৌঁছে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়ে গেছেন। হাদীস চর্চাকারীর জন্য তিনি নিম্নোক্ত দু’আ করে গেছেনঃ
    “আল্লাহ সেই ব্যাক্তিকে সজীব ও আলোকোজ্জ্বল করে রাখুন, যে আমার কথা শুনে স্মৃতিতে ধরে রাখল, তাঁর পূর্ণ হিফাযত করল এবং এমন লোকের কাছে পৌঁছে দিল, যে তা শুনতে পায়নি।” (সহী তিরমিযী, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯০)
    যুগ শ্রেষ্ঠ সেই সাহাবীগন মুসলিম উম্মাহ’র কাছে সেই তা যথাযথ ভাবে পৌছিয়ে দিয়ে গেছেন তার প্রমাণ বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থ এবং তাফসির গ্রন্থগুলি।
    মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার উম্মতদের জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে যে সকল বিষয়ের প্রয়োজন অনুভব করবে, তার সবগুলো তিনি খুব সুন্দর করে বর্ণনা করে গেছেন। আবু যার (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন,
    مَا تَرَكَ النبي صلى الله عليه وسلّم طَائِراً يُقَلِّبُ جَنَاحَيْهِ فِي السَّمَاءِ إِلاَّ ذَكَرَ لَنَا مِنْهُ عِلْماً-
    ‘আকাশে যে পাখি তার দু’ডানা ঝাপটায় তার জ্ঞান সম্পর্কেও নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নিকট আলোচনা করেছেন।
    (মুসনাদে আহমাদ হা/২১৬৮৯, ২১৭৭০, ২১৭৭১, ২১৩৯৯, ৫ম খন্ড, পৃঃ ১৬৩; ছহীহাহ হা/১৮০৩)

    ৩।
    উপরের দুইটা অংশ দেয়া হয়েছে সবাই’কে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফের মধ্যে পারস্পরিক সর্ম্পক বুঝানোর জন্য। যা আপাত এবং মনুষ্য দৃষ্টির সীমাবদ্ধতার কারণে পবিত্র কুরআন শরীফে দেয়া থাকার পরেও আমরা বুঝতে পারি না, সেটাই হাদীস শরীফে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সাহাবীগন (রাদিআল্লাহু আনহু) সেইগুলি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছ থেকে শিখে নিয়ে নিজেদের জীবনে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গেছেন। আমাদের জন্য অবশ্য পালনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

    ৪।
    অল্প কিছুদিন হল একজন বয়াতি দাবী করেছেন যে পবিত্র কুরআন শরীফে নাকি কোথাও গান গাওয়া নিষিদ্ধ করা হয় নি? যে কেউ নিজের মনগড়া কথা বলতেই পারে তবে সেটা নিয়ে তর্ক করার আগে দেখা উচিৎ আসলে এর ভিতরে কি আছে। আল কুরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যা দেয়া মারাত্মক অন্যায়। উনার এই দাবী কতটা হাস্যকর সেটাই নীচে এখন আলোচনা করা হবে।

    ইসলামে এ ধরনের গান করা বা শোনা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট দলীল রয়েছে। এ ধরনের গান করা বা শোনা সম্পর্কে হুঁশিয়ারী করে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন–
    وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
    “এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে(আল্লাহর পথ) নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। এদের জন্যে রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি”। (সুরা লোকমান ৩১-৬)
    এ আয়াতে বর্ণিত لَهْوَ الْحَدِيثِ (অনর্থ কথা) দ্বারা গানকে বুঝানো হয়েছে। এর দ্বারা গান গাওয়া ও শোনাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

    এ তাফসীর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিআল্লাহু আনহু), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু), হযরত জাবির (রাদিআল্লাহু আনহু), হযরত ইকরামা (রাদিআল্লাহু আনহু), হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর (রাদিআল্লাহু আনহু), হযরত মুজাহিদ (রাদিআল্লাহু আনহু), হযরত আমর ইবনে শু‘আইব (রাদিআল্লাহু আনহু) প্রমুখ সাহাবী ও তাবিয়ীগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে।
    (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, ৪৪২ ও ৪৪৩ পৃষ্ঠা/ তাফসীর তাবারী, ২০নং খণ্ড, ১২৬ থেকে ১৩১ পৃষ্ঠা/ তাফসীরে কুরতুবী, ১৪নং খণ্ড, ৪৮ পৃষ্ঠা প্রভৃতি)
    এর তাফসিরে বলা আছে-
    নযর ইবনে হারিস বিদেশ থেকে একটি গায়িকা বাঁদী খরিদ করে এনে তাকে গান-বাজনায় নিয়োজিত করল। কেউ কুরআন শ্রবণের ইচ্ছা করলে তাকে গান শোনানোর জন্য সে গায়িকাকে আদেশ করত এবং বলত মুহাম্মদ তোমাদেরকে কুরআন শুনিয়ে নামায, রোযা এবং ধর্মের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কথা বলে। এতে শুধু কষ্টই কষ্ট। তার চেয়ে বরং গান শোন এবং জীবনকে উপভোগ কর। (মাআরিফুল কুরআন ৭/৪)

    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু)’কে উক্ত আয়াতের ‘লাহওয়াল হাদীস’-এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তা হল গান।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু), আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিআল্লাহু আনহু) একই কথা বলেন। তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে যুবাইর (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকেও অনুরূপ মত বর্ণিত হয়েছে। বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, উক্ত আয়াত গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যা বান্দাকে কুরআন থেকে গাফেল করে দেয়। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৪১)

    কুরআন মজীদের অন্য একটি আয়াতে বলা আছে, ইবলিস-শয়তান আদম সন্তানকে ধোঁকা দেওয়ার আরজী পেশ করলে আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে বললেন, “তোর আওয়াজ দ্বারা তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস পদস্খলিত কর”। (সূরা ইসরা, আয়াত ৬৪)
    এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, যে সকল বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তাই ইবলিসের আওয়াজ। বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবলিসের আওয়াজ বলতে এখানে গান ও বাদ্যযন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেসব বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তার মধ্যে গান-বাদ্যই সেরা। এজন্যই একে ইবলিসের আওয়াজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৯)
    পবিত্র হাদীসে আছেঃ “তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় কর না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায় কোনো কল্যাণ নেই। জেনে রেখ, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম”। (জামে তিরমিযী হাদীসঃ ১২৮২; ইবনে মাজাহ হাদীসঃ ২১৬৮)

    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরও ইরশাদ করেন, “আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ৪০২০; সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস : ৬৭৫৮)

    হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলে খোদা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন আমি প্রেরিত হয়েছি বাদ্যযন্ত্রকে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য। অতঃপর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, গায়ক গায়িকার জীবিকা (গানের মাধ্যমে) হারাম এবং ব্যাভিচারের জীবিকাও হারাম। যে শরীর হারাম দ্বারা গঠিত তাকে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। (কানজুল উম্মাল ১৫ তম খন্ড পৃষ্ঠা ২২৬)

    হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেন, “পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে”। (ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৩; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫২)

    বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত নাফে’ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার চলার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাদিআল্লাহু আনহু) বাঁশির আওয়াজ শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুই কানে আঙ্গুল দিলেন। কিছু দূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নাফে’! এখনো কি আওয়াজ শুনছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর আমি যখন বললাম, এখন আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না তখন তিনি কান থেকে আঙ্গুল সরালেন এবং বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন।
    (মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৪৫৩৫; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪৯২৪)

    বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকেও এমন একটি সহী হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
    (ইবনে মাজাহ হাদীসঃ ১৯০১)

    পাঠক একটু ভেবে দেখুন তো, পবিত্র কুরআন শরীফে যদি সুস্পষ্ট ভাবে একে নিষিদ্ধ না করা হতো তাহলে কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সহ তার সাহাবীরা এত কঠিন ভাবে সেটা মেনে চলতেন?

    বাজনাদার নুপুর ও ঘুঙুরের আওয়াজও সাহাবায়ে কেরাম বরদাশত করতেন না। তাহলে গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রশ্ন তো চরম হাস্যকর তাইনা? সুনানে নাসাঈ ও সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে, “একদিন হযরত আয়েশা (রাদিআল্লাহু আনহা) এর নিকট বাজনাদার নুপুর পরে কোনো বালিকা আসলে আয়েশা (রাদিআল্লাহু আনহু) বললেন, খবরদার, তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে তুমি প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না”। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদীস : ৫২৩৭)

    সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র। (সহীহ মুসলিম হাদীস : ২১১৪)

    মৃদু আওয়াজের ঘণ্টি-ঘুঙুরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আধুনিক সুরেলা বাদ্যযন্ত্রের বিধান কী হবে তা খুব সহজেই বুঝা যায়!
    ইসলামের চার ইমাম, গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), ইমাম মালেক (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি), ইমাম শাফেয়ী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সকলেই গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।

    ইমাম মালেক (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে। (কুরতুবী ১৪/৫৫)

    ইমাম শাফেয়ী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন যে, গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহাম্মক। তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না। (ইগাছাতুল লাহফান ১/১৭৯)

    দাড়ি টুপি পরে কেউ কোন কাজ করলেই সেটা ইসলামে জায়েজ হয়ে যাবে এই আজগুবি থিউরি কে কবে আবিষ্কার করলো? পবিত্র কুরআন শরীফে যেখানে হারাম বলছে, এটাকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে সেখানে কার এত বড় ধৃষ্টতা যে সেটা চ্যালেঞ্জ করে? একটা একতারা নিয়ে লাফালাফি করে বেড়ালেই ইসলাম শেখা হয়ে গেল?

    আজকে একজন নির্বোধের মতো পবিত্র কুরআন শরীফ'কে নিয়ে চ্যালেঞ্জ করছে, কাল এইরকমই আরেকজন এসে করবে মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হাদীস নিয়ে। ইসলামের ইতিহাসে এইসব ভন্ড দাবীদারদের'কে যেভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে একেও ঠিক সেভাবেই উপযুক্ত শাস্তি দেয়া দরকার, দৃষ্টান্ত স্থাপন করা দরকার যেন ভবিষ্যতে এইসব ফালতু দাবী নিয়ে আর কেউ হাজির না হয়।

    অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এর চ্যালেঞ্জ কেউ গ্রহণ করে নি কেন? রাস্তাঘাটে এইরকম অনেক অনেক ক্যানভাসার, হাতের মাইক কিংবা গলা ফাটিয়ে ফেলা তথাকথিত চিকিৎসক পাওয়া যায় যারা প্রতিনিয়তই এমবিবিএস ডাক্তারদের নানা বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করে, তাই বলে ডাক্তাররা কি তাদের সাথে যেয়ে তর্ক শুরু করে? নিরর্থক কাজের কোনই মানে হয় না।

    একটু ভেবে দেখুন তো, যে আওয়াজ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাদিআল্লাহু আনহু) এক মুহূর্তের জন্যও কানে যেটা শুনতে রাজি ছিলেন না, সেই ইবলিসী আওয়াজের অনুকূলে কথা বলার দুঃসাহস আমরা কী দেখাতে পারি? কিন্তু তাহলে কারা এই দুঃসাহস দেখাতে পারে?

    ৫।
    ইসলামকে আধুনিক বানানোর জঘন্য ষড়যন্ত্রে আজকাল কেউ কেউ ফতোয়া দিচ্ছেন যে, মেয়েদের সাথে হাত মেলানো জায়েয, নারী-পুরুষের মাঝে পর্দা বিধানের এত কড়াকড়ির প্রয়োজন নেই, গান-বাদ্য, সিনেমা, টেলিভিশন এসব তো জীবনে বিনোদনেরই অংশ। এইসব বহুবিধ ‘আধুনিক’, ‘অতি আধুনিক’ হবার ফতোয়া আজ অহরহই শুনতে পাওয়া যায়।

    এদের এইসব দাবী দেওয়া দেখে মনে হয় এরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাদিআল্লাহু আনহু) চেয়েও ইসলাম’কে বেশি বুঝে ফেলেছে! এদের জ্ঞান আর প্রজ্ঞা এতই বেশি যে সেটা আর নিজেদের মধ্যে ধরে রাখতে পারছেনা, উপচে উপচে পরছে!

    অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِيْنًا ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (সুরা মায়েদাহ ৫/৩)।

    এরপর যারা ইসলামে নতুন নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করেন, সেটার কী প্রয়োজন ভেবে দেখা দরকার! আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কাউকে তার ধর্মে নতুন কিছু যোগ করা কিংবা বাদ দেয়ার অধিকার দেন নি। ইসলামে যেমন বাড়াবাড়ির অবকাশ নেই, তেমন ছাড়াছাড়িরও কোন সুযোগ নেই। ইসলাম হল মধ্য পন্থা, সরল রাস্তা, সহজ ভাষায়, সীরাতুল মুস্তাকীম। যে বিধান যতটুকু দেওয়া প্রয়োজন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ততটুকুই আমাদের দিয়েছেন। এর পূর্ণ অনুসরণেই মানবজাতীর সকল কল্যাণের সূত্র নিহীত। এর বাস্তব প্রমাণ সাহাবায়ে কেরামগনই রেখে গেছেন আমাদের জন্য এবং এর পরের প্রজন্ম থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত।

    আমরাও যদি কল্যাণের প্রত্যাশা করি তাহলে আমাদেরকেও ইসলামের সকল বিধানের পূর্ণ অনুসরণ করতে হবে এবং আমাদের ঈমান, আমল ও ফতোয়া সবকিছুকে যাচাই করতে হবে আল্লাহর দেয়া বিধি বিধানের মানদণ্ডে।

    ৬।
    এখন প্রশ্ন হচ্ছে এইসব হারাম, নিষিদ্ধ, ফাসিক কাজকর্মের পক্ষে কিছু মানুষের কেন সমর্থন দেখা যায়? এইসব কাজের পক্ষে কেন এদের সাফাই গাইতে দেখা যায়? হারাম’কে হালাল বলে প্রচার করতে দেখা যায়? এদের পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়?

    এরা কারা এবং চরিত্র কী সেটা বহু বছর আগে থেকেই সুনির্দিষ্ট করে বলে দেয়া আছে। এরা যদিও নামে মাত্র মুসলিম, কিন্তু এদের আসল পরিচয় হলো এরা মুনাফিক।

    কীভাবে এরা মুনাফিক?
    'মুনাফিক' শব্দটি 'নিফাক' শব্দমূল থেকে এসেছে, যার অর্থ কোনো কিছুকে গোপন রেখে এর বিপরীত কথা বা কাজ প্রকাশ করা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় মুনাফিক বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যে অন্তরে কুফরি ও ইসলাম বিরোধিতা রেখে মুখে ও প্রকাশ্যে মুসলমান হওয়ার দাবি করে। মুনাফিক হলো এমন ব্যক্তি যে ইসলামকে মুখে প্রকাশ করে এবং অন্তরে কুফরিকে লালন করে।

    ঈমান তিনটি জিনিসের সমন্বয়ের নাম। ১. অন্তরের বিশ্বাস, ২. মৌখিক স্বীকৃতি, ৩. স্বীকৃতি অনুযায়ী আমল করা (সুত্রঃ ইবনে মাজাহ)।

    মুনাফিকরা শুধু মৌখিকভাবে ঈমানের স্বীকৃতি দান করে, কিন্তু অন্তরে মোটেও বিশ্বাস লালন করে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর মানুষের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা বলে আমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান এনেছি, অথচ তারা মুমিন নয়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮)

    এরা কেন এ কাজ করে, এর ব্যাখ্যায় কোরআনের এক আয়াতে বলা হয়েছে, 'তারা আল্লাহ ও মুমিনদের ধোঁকা দিতে চায়, আসলে তারা নিজেদের সঙ্গেই প্রতারণা করছে, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারছে না।' (সুরা বাকারা, আয়াত: ৯)।
    অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'তারা মূলত কাফিরদের কাছ থেকে মান-মর্যাদা পেতে চায়।' (সুরা আন-নিসা, আয়াত: ১৩৯)

    নিফাক ও মুনাফিকি দুই ধরনের।
    এক. বিশ্বাসগত মুনাফিকিঃ অন্তরে কুফরি রেখে নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করা কিংবা পরিচয় দেয়া। এ ধরনের মুনাফিকির মাধ্যমে এরা ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। (উদাহরণ, আল্লাহ’র নির্দেশে নামায পড়ার জন্য দেয়া আযান’কে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করা, আদি পিতা হযরত আদম (আলাহিস সালাম) এবং আদি মাতা হযরত বিবি হাওয়ার অস্তিত্ব’কে অস্বীকার করা)
    দুই. কর্মগত মুনাফিকিঃ আমানতের খিয়ানত করা, মিথ্যা বলা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, গালিগালাজ করা ইত্যাদি। এসব কর্ম মুনাফিকি হলেও এসবের মাধ্যমে কেউ ইসলাম ধর্ম থেকে বের হয়ে যায় না।
    (তাফসিরে মা'আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির)

    মুনাফিকদের ইসলামের আকিদা-বিশ্বাসে সন্দেহ, অস্বীকৃতি ও মিথ্যা থাকার কারণে তাদের কলবকে অসুস্থ কলব বলা হয়। দ্বিমুখী আচরণ একটি কঠিন মানসিক ব্যাধি। ঈমান আনার পর যারা দ্বিমুখী আচরণ করে, তারা মূলত মানসিক ভাবে অসুস্থ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাদের হৃদয়ে রয়েছে ব্যাধি। অতঃপর আল্লাহ সে ব্যাধিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের মিথ্যাচারের দরুন তাদের জন্য রয়েছে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত: ১০)

    এই মুনাফিকরা যখন প্রকাশ্যে থাকে তখন এক কথা বলে আবার যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলে তখন আরেক কথা বলে। এদের মুনাফিকির উদাহরণ দিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফে বলা আছেঃ
    ‘যখন তারা মুমিনদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি, আবার যখন নিরিবিলি তাদের শয়তানদের (কাফির নেতাদের সঙ্গে) মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি। আমরা তাদের (মুমিনদের) সঙ্গে শুধু ঠাট্টা-তামাশা করছি মাত্র।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪)

    ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, মুনাফিকরা প্রত্যেকেই দ্বিমুখী আচরণকারী। এক মুখে তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়। অন্য মুখে ভোল পাল্টিয়ে তারা তাদের কাফির ভাইদের সাথে মিলিত হয়। তাদের জিহবাও দু’টো। এক জিহবা দিয়ে তারা মুসলমানদের সাথে উপর উপর কথা বলে, আর অন্য জিহবা তাদের গোপন অবস্থার ভাষ্যকার। কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারীদের সঙ্গে ঠাট্টা-তামশা করা এবং তাদের তুচ্ছ ভাবা ওদের স্বভাব। এ কারণে তারা কুরআন-সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের যে বিদ্যা-বুদ্ধি আছে, তা কেবলই তাদের ঔদ্ধত্য ও অহংকার বাড়িয়ে তোলে।

    ৭।
    ইসলামে একদম সুস্পষ্ট ভাবে গান বাজনা নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফে সুস্পষ্টভাবে সেটা বলে দেয়ার পরও কেউ যদি সেটা বুঝতে না পারেন সেটা তার ব্যর্থতা। নিজের ব্যর্থতার জন্য অন্য কাউকে চ্যালেঞ্জ করার কোন অবকাশ এখানে থাকে না।

    আমরা নিজেদের ব্যস্ততা কিংবা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার জন্য অনেক সময় ধর্মীয় অনুশাসন পুরোপুরি মেনে চলতে পারি না। সেটা আমাদের ব্যর্থতা। কিন্তু প্রকাশ্যে সেটা কে অস্বীকার করা কিংবা ব্যঙ্গ করা ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সব কিছুরই অলংঘ্যনীয় একটা সীমারেখা থাকে। কোন মর্ত্যমানুষেরই সেটা অতিক্রম করা উচিৎ নয়।

    কারও ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়, মহাবিশ্বের কালের পরিক্রমায় সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যত বড় বড় রাজা মহারাজাই এসেছে; যত বড় জালিম, নমরূদ,‌ হিটলার এসেছে, এরা প্রত্যেকেই আজ মৃত। তুচ্ছ এই ধুলামাটির নীচেই এদের শেষ আশ্রয় নিতে হয়েছে। সেখানে যাবার সময় নিজেদের মুনাফিকি, দম্ভ কিংবা অহংকার কোন কিছুই সাথে নিয়ে যেতে পারে নি। পবিত্র কুরআন শরীফে বার বার স্মরণ করে দেয়া হয়েছে “কুল্লুন নাফসুন জাইকাতুন মঊত” / “প্রত্যেক জীবিত প্রাণ’কেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে”। এইসব অস্বীকারকারী কিংবা মুনাফিকদের সর্তক করে দেয়া মুসলিম হিসেবে যা দায়িত্ব সেটা পালন করা হয়েছে।

    এইসব মুনাফিকদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলেই এই লেখা শেষ করতে চাই-

    মৃত্যুর পর যখন ধবধবে সাদা কাফনের কাপড় পরিয়ে সাড়ে তিনহাত মাটির নীচে, মাটি চাপা দিয়ে একদম একা রেখে সবাই চলে আসবে, ঠিক তখনই মুনকার এবং নাকীর (আলাইহিস সালাম)’র নামক দুইজন ফেরেস্তা আসবেন এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সময়ে যত কথা এবং যত কাজ করেছেন সেটার হিসাব নিতে। মুনাফিকির মাধ্যমে যত লেখালিখি, বক্তিতা আর মাঠ গরম করেছেন তার সঠিক হিসাব নিতে। পারলে এই ফেরেস্তারদের তখন বলবেনঃ
    - আপনারা তো সিম্বোলিক, মানুষের বিবর্তনের আদি সব গালগল্পে আপনাদের নাম লেখা ছিল। আমি তো আপনাদের চিনিও না, নামও শুনি নি, বিশ্বাসও করি না। জানেন আমি কে? আমার পারমিশন ছাড়া আমার কবরে ঢুকেছেন কেন?
  • 0 comments:

    Post a Comment

    New Research

    Attention Mechanism Based Multi Feature Fusion Forest for Hyperspectral Image Classification.

    CBS-GAN: A Band Selection Based Generative Adversarial Net for Hyperspectral Sample Generation.

    Multi-feature Fusion based Deep Forest for Hyperspectral Image Classification.

    ADDRESS

    388 Lumo Rd, Hongshan, Wuhan, Hubei, China

    EMAIL

    contact-m.zamanb@yahoo.com
    mostofa.zaman@cug.edu.cn

    TELEPHONE

    #
    #

    MOBILE

    +8615527370302,
    +8807171546477