• প্রাণের রহস্য ও কেমিস্ট্রি

    বায়ো সায়েন্স, জীববিজ্ঞান বহুকাল চেষ্টা করেছে জীবনকে ধরার, অধরা প্রাণকে অনুবীক্ষণের নীচে ফেলে পরীক্ষা করার, সম্ভব হলে প্রাণের সঞ্জীবনী রসায়ন তৈরী করার, যা প্রতিটি নিষ্প্রাণ দেহকে করে তুলবে পুনরায় সজীব, প্রাণবন্ত।
        কিন্তু অধরা থেকে গিয়েছে সেই স্বপ্ন। ধরা যায়নি জীবনকে, প্রাণকে। বোঝা যায়নি প্রাণের রহস্য, আজও। বায়োসায়েন্সের কত শাখা বেরিয়েছে- মলিকিউলার বায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়ো-ফিজিক্স, জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারিং। কিন্তু করা যায়নি প্রাণের রহস্য ভেদ- জীববিজ্ঞানের পাঠ্যবইগুলিতে প্রাণের সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব হয় নি আজও। জীবন সম্বন্ধে তথ্য বাদ দিয়ে রচিত হচ্ছে ‘জীবন বিজ্ঞান’, পড়ানো হচ্ছে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের। ‘প্রাণের রহস্য সন্ধানে বিজ্ঞান’ নামে সাড়ে তিনশো পৃষ্ঠার একটি বই লিখেছেন আপরাজিত বসু। সেখানে প্রচলিত বিজ্ঞানের সাহায্যে ইন্দ্রিয়লব্ধ জৈব রাসায়নিক সংক্রান্ত জ্ঞানের সাহায্যে প্রাণের ব্যাখ্যা খুঁজেছেন তিনি; জানিয়েছেন বিশ্বের আধুনিক বিজ্ঞানীদের আধুনিক গবেষণার ফল। কিন্তু বইটির ভূমিকাতেই তিনি জানিয়েছেন বইয়ের নির্গলিত নির্যাসঃ “প্রশ্ন উঠেছে, জীবন সঠিকভাবে কোথায় অবস্থান করে? সঠিকভাবে জীবন বলতে কি বোঝায়? দেহের কোন কোন বৈশিষ্ট্য প্রাণের পক্ষে একান্ত জরুরী? প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু জবাব পরিস্কারভাবে মেলেনি। প্রাণের বস্তুগত ভিত্তি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা সংশয় হলেও প্রাণকে সংজ্ঞায়িত করা বা নিখুঁতভাবে চিহ্নিত তাঁদের পক্ষে এখনো সম্ভব হয়নি।
        প্রাণকে যদি ‘সংজ্ঞায়িত’ করা না যায়, সোজা কথায় প্রাণ কি পদার্থ সেটাই যদি জানা না যায়, তাহলে তার বস্তুগত ভিত্তি সম্বন্ধে কিভাবে ‘নিঃসংশয়’ হতে পারেন বিজ্ঞানীরা, সে বিষয়ে অবশ্য বেশি উচ্চবাক্য করেননি লেখক।
        কিন্তু জড়বিজ্ঞানে তো বস্তুই সর্বেসর্বা – জড়পদার্থের বাইরে তো কোণ কিছুরই অস্তিত্ব নেই – সেইজন্য প্রানও আবশ্য বস্তুর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফল, প্রাণের ভিত্তি অবশ্যই বস্তু, প্রাণের উৎস অবশ্যই রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ। এমন ধারণা জীব বিজ্ঞানীদের।
        কিন্তু সব রাসায়নিক দেহে থাকলেও প্রাণ চলে যায় কোথায়? উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলেও কেন উৎপন্ন করা যায় না প্রান? আর প্রাণের বস্তুগত মিশ্রণ – রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ ইনজেক্ট করলেই তো শরীরে পুনরাবির্ভাব ঘটার কথা প্রাণের – কিন্তু সেটা তো করা যায় না কখনই? কেন?
        জীবন বা প্রাণ প্রকৃতপক্ষে কি, সে বিষয়ে কিছু না জানতে পারলেও এবং গবেষণাগারে প্রাণ সৃষ্টির ধারে কাছে যেতে না পারলেও জীবন এসেছে কোথা থেকে, কোথা থেকে উদ্ভব হয়েছে জীবনের, সে-বিষয়ে বিজ্ঞানীরা সরব; তাঁদের অসাধারণ কল্পনাশক্তি আর উদ্ভাবনী প্রতিভার দ্বারা বেশ কয়েকটি তত্ত্ব তৈরী করে ফেলেছেন, যা স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে সারা বিশ্বেই পড়ানো হচ্ছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তত্ত্বগুলী হচ্ছেঃ ১। স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণ সৃষ্টির তত্ত্ব (Theory of Spontaneous Generation or Abiogenesis); ২। কসমোজোয়িক বা প্যান্সপার্মিয়া (Cosmozoic or Panspermia theory) ৩। জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তির তত্ত্ব (Theory of Chemical origin of life)। এই তত্ত্বগুলির মধ্যে বিজ্ঞানী হেকেলের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় দৈবাৎ বা ঘটনাচক্রে প্রাণের উদ্ভবের তত্ত্বই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে জড়বাদী বিজ্ঞানীদের কাছে, এবং সারা বিশ্বে বিশেষতঃ এই মতবাদটিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখানো হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা জীবনের শুরুতেই হেকেলের এই মহা অনুমানকে সত্যি বলে ধরে নিতে শিখছেঃ জীবন, অতএব, মহার্ঘ কিছু নয় – এর উৎস কেবল কিছু অজৈব, রাসায়নিক জড় বস্তু – মিথেন অ্যামোনিয়া, অ্যাসিড……!!

    প্রাণ সৃষ্টির কেমিস্ট্রি (কিভাবে প্রাণহীন কিছু রাসায়নিক পদার্থ হঠাৎই হয়ে উঠল ‘জীবন্ত’)?
        কিভাবে নিষ্প্রাণ কিছু রাসায়নিক বস্তু হঠাৎই হয়ে উঠল প্রাণবন্ত, সেটি ব্যাখ্যা করা সমস্ত বিবর্তনবাদী জীব_বিজ্ঞানীর কাছে এক অত্যান্ত ভীতপ্রদ বিষয়। চার্লস ডারউইন যখন প্রথম তাঁর বিবর্তনবাদ উপস্থাপন করেন, তখন তিনি স্বীকার করেন যে পৃথিবীতে প্রাণ “প্রথমে এক বা একাধিক শরীরে স্রষ্টার দ্বারা প্রোথিত হয়েছে” (“Originally breathed by the Creator into a few forms or into one”)। কিন্তু বর্তমান বিবর্তনবাদীরা সাধারণত তাঁদের মতবাদে স্রষ্টা উল্লেখ করেন না। পরিবর্তে তাঁরা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিভাবে আপনা থেকেই উদ্ভব হয়েছে প্রাণের, তারপর সৃষ্টি হয়েছে লক্ষ লক্ষ প্রজাতির।

    প্রচলিত তত্ত্ব (জীবন এক কেমিক্যাল অ্যাকসিডেন্ট)ঃ
        স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাসায়নিক পদার্থের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় (chance chemical reaction) জীবনের উদ্ভব হয়েছে –  এই মতবাদের প্রবক্তারা জীবনের উদ্ভবের ইতিহাস এঁকেছেন এইভাবেঃ প্রথমে পৃথিবীর আহবমন্ডল ছিল কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, অ্যামোনিয়া এবং জলে গঠিত। তারপর সূর্যালোক, এবং সম্ভবতঃ বজ্রপাত আর আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ থেকে নির্গত শক্তির দ্বারা ঐ সরল যৌগগুলি ভেঙ্গে গেল, তাঁদের থেকে তৈরী হলো নানা রকম অ্যামাইনো অ্যাসিডের। এই অ্যাসিডগুলি সমুদ্রে একীভূত হয়ে তৈরী করল প্রোটিনের মতো কিছু অনুর। এই রকম বিক্রিয়ার ফলে পরিশেষে, ‘দি সেলফিস জিন’ বইয়ের এই মতবাদের একজন প্রবক্তা ডকিন্স ব্যাখ্যা করেন, মহাসাগরের তরলিত রসায়ন এক “আদি জৈব তরল”-এ (“Primordial Organic Soup”) পরিণত হল, কিন্তু সেটি এখনো নির্জীব। তারপর, ডকিন্সের বর্ণনা অনুযায়ী, “আকস্মিক দুর্ঘটনাবশতঃ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এক অনু গঠিত হলো (“a particularly remarkable molecule was formed by an accident”), যে অনু ছিল নিজের প্রতিরুপ তৈরীর ক্ষমতাসম্পরন্ন। ডকিন্স স্বীকার করলেন যে এই ধরণের বিচিত্র অ্যাকসিডেন্ট ঘটা নিতান্তই অসম্ভব (exceedingly improbable), কিন্তু তা তত্ত্বেও তাঁর মতে অবশ্যই কোনও না কোন ভাবে সেটি ঘটে গিয়েছিল, ঘটনাচক্রে – নেহাৎই দৈবক্রমে। তারপর ঘটনাক্রমে সমগোত্রীয় অনুগুলি একত্রে সমাবিষ্ট হলো এবং তারপর, আবারো অত্যন্ত অসম্ভব কোনো দুর্ঘটনাক্রমে। সেই সীমাবদ্ধ অনুগুচ্ছে তাঁদের চতুর্দিকে অন্যান্য প্রোটিন অনুর সাহায্যে তৈরী করলো এক সুরক্ষা-আবরণ বা মেমব্রেন, অর্থাৎ কোষ-পর্দা। বিজ্ঞানী ওপারিন এইভাবে ক্রমান্বয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জীবনের উদ্ভব বা কেমোজনির চলচ্চিত্র এঁকেছেন। অন্যান্য বিজ্ঞানীরা তাতে সংযোজন করেছেন তাঁদের ধারণা। এইভাবে জীববিজ্ঞানীদের দাবী, পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছিল প্রথম কোষের, যার মধ্যে ছিল প্রাণের দীপ্তি।
        ‘প্রিমঅর্ডিয়াল স্যুপ’ থেকে, রাসায়নিক তরল থেকে এইভাবের প্রাণের উৎপত্তি, সজীব জীব-কোষের উদ্ভব। ইচ্ছা-সংকল্প-অনুভবশীল সচেতন সত্তার উদ্ভবের এই মতবাদ আরো অনেক জড়বিজ্ঞানী নানারকম ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। শুধু ব্যাখ্যাই নয়, শুরু হয় জড় পদার্থ থেক প্রাণ সৃষ্টির, প্রাণ-যুক্ত সজীব কোষ সৃষ্টির পরীক্ষা-নিরীক্ষা। প্রথমে স্ট্যালনি মিলার তাঁর পরীক্ষাগারের এক পরীক্ষায় কাচের জারের গায়ে লেগে থাকে কিছু অ্যামাইনো অ্যাসিডের চিহ্ন দেখে উদ্দীপিত হন। শুরু হয় সম্পূর্ণ নির্জীব, জড় এইসব রাসায়নিক থেকে জীবন্ত কোষ তৈরীর পরীক্ষা। ২০ বছরের কঠোর গবেষণার শেষে তাঁর মন্তব্যঃ “অ্যামাইনো অ্যাসিডের আবিস্কারের ফলে মনে হয়েছিল জীব-বিজ্ঞান অচিরেই প্রান সৃষ্টির গৌরব অর্জন করতে চলছে। অথচ আজ ২০ বছর ধরে বিস্তর গবেষণা শেষে আমার মনে হচ্ছে, প্রাণ সৃষ্টি যতটা সহজ বলে মনে করেছিলাম, তা ঠিক ততটাই কঠিন।“
        এর পর চলে গেছে প্রায় আরো একশো বছর। পৃথিবী জুড়ে হয়েছে অসংখ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রচেষ্টা। কিন্তু প্রাণসৃষ্টি থেকে গেছে এক দূর-কল্পনা। ভবিষ্যতে তাঁরা করে দেখাবেন, এই প্রতিশ্রুতি দ্বারা কোনো মতবাদকে দেওয়া যায় না বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। ঠিক যেমন কারও যদি ব্যাঙ্কে টাকা না থাকে, আর সে ভবিষ্যতে জমা করবে বলে একটি পোস্ট-ডেটেড চেকে বিশাল অংকের টাকা লিখে কিনতে যায় কোনো ইমারত, তাকে বিফল হতে হবে। বিজ্ঞানী ডকিন্স তাঁর বইয়ের মুখবন্ধে নিজেই স্বীকার করেছেন যে জীবন উদ্ভবের এই বৃত্তান্ত প্রায় কল্পবিজ্ঞানের মতোঃ “This book should be viewed as though it were science fiction” – মুখবন্ধ, “দি সেলফিস জিন।“

    কিন্তু এই প্রাণ বা জীবনের ধর্মগুলোর ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কেউ। এত বিক্রিয়া, এত ধাপ আবিষ্কার করা সত্ত্বেও বিজ্ঞানীরা এখনও জানাতে পারেননি, কীভাবে, কখন কোন বিক্রিয়াটি ঘটলে ‘প্রাণ’ নামক জিনিসটি সৃষ্টি হয়।

    এই তত্ত্বের অন্তর্নিহিত অসঙ্গতিঃ
        কাল্পনিক যে-কোনো মতবাদ নানা অন্তর্নিহিত সমস্যায় ভুগতে থাকে, তাকে যুক্তিগ্রাহ্য করা যায় না কিছুতেই। প্রিমর্ডিয়াল সুপ থেকে জীবন সৃষ্টির এই তত্ত্বে তাই রয়েছে বহু ফাটল, গহ্বর, জোড়াতালি। বিজ্ঞানীরাই ঐ প্রশ্ন তুলেছেন ঐসব অসামঞ্জস্য নিয়ে। কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেওয়া হল।
    অসঙ্গতি-১ঃ পৃথিবীর প্রারম্ভিক পরিমণ্ডলে কি অক্সিজেনের অস্তিত্ব ছিল? যদি আবহমণ্ডলে অক্সিজেন থাকত, তাহলে তৈরী হওয়া সরল যৌগগুলি সংবদ্ধ হয়ে অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরী হওয়া সম্ভব হতো না। আবার পরিমণ্ডলে অক্সিজেনের উপস্থিতি না থাকলে মহাজাগতিক রশ্মি (cosmic rays) বিকীরণের প্রভাবে তৈরী হওয়ার পরই বিশ্লিষ্ট হয়ে যেত অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি। বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক আবিষ্কার – ৩.৫ বিলিয়ন অর্থাৎ ৩৫০ কোটি বছর পুর্বে লোহাতে অক্সাইড পাওয়া গিয়েছে – অতএব ইতিপূর্বেও পরিবেশ ছিল অক্সিজেন।
    জৈব তরলের গঠনঃ
    অসঙ্গতি-২ঃ অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি জলের মধ্যে ছিল, নাকি বাহিরে? পরিমণ্ডলে অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি গঠিত হওয়ার পর, অনুমান করা হয়েছে যে ঐ অ্যাসিডগুলি কোনোভাবে মহাসাগরের একই স্থানে গিয়ে পড়েছিল – যাতে করে “অর্গানিক স্যুপ” তৈরী হতে পারে। এখন, যদি অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি জলের মধ্যে থাকে, তাহলে তাঁরা সংবদ্ধ হয়ে প্রোটিনগুলি তৈরী হতে পারবে না, কেননা জল বড় অনুগুলিকে ভেঙ্গে দেয় – তাঁদের সংবদ্ধ হতে দেয় না। আর, অ্যাসিডগুলি যদি জলের বাইরে থাকত, তাহলে মহাজাগতিক রশ্মি-বিকিরণের ফলে তাঁরা মূহূর্তেই বিশ্লিষ্ট হয়ে যেত।
        সুতরাং জৈব তরলের উদ্ভব হতে পারে না কখনই। “অন্য কথায়”, বিবর্তনবাদী ফ্রান্সিস হিচিং বলেন, “জীবন-উদ্ভবের এই বিবর্তন-ধারায় এমনকি এই প্রথম ও অপেক্ষাকৃত সহজ পর্যায়ের ( অ্যামাইনো অ্যাসিড-যৌগ তৈরী) মধ্য দিয়ে আগ্রসর হওয়ার তত্ত্বগত সুযোগও সম্পূর্ণ ক্ষীণ, শুন্য।“ এর অর্থ, নোবেলজয়ী জৈবরসায়নবিদ জর্জ ওয়াল্ডের মতে “এটিই হচ্ছে সবচেয়ে অসমাধানযোগ্য সমস্যা, আমাদের – বিবর্তনবাদীদের যার মুখোমুখি হতে হয়”। – দি অরিজিন অফ লাইফ, জর্জ ওয়ার্ল্ড পৃ – ৪৯-৫০।
    জৈব তরল বা অর্গ্যানিক স্যুপে কিভাবে গঠিত হল সুনির্দিষ্ট কিছু অ্যামাইনো অ্যাসিড?
    অসঙ্গতি-৩ঃ প্রায় ১০০ রকমের অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে, এর মধ্যে  প্রয়োজনীয় প্রোটিন অনু তৈরীর জন্য প্রয়োজন ২০ টি বিশেষ অ্যামাইনো অ্যাসিডের। কিভাবে ‘আপনা থেকে’ বাছাই হলো? তাছাড়া অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলির দু’ধরণের গঠন গত আণবিক বিন্যাস রয়েছে। কিছু ‘লেফট-হ্যান্ডেড’, কিছু ‘রাইট-হ্যান্ডেড’। যদি আকস্মিকভাবে তাঁরা সংবদ্ধ হতো, তাহলে উভয় ধরনের অ্যাসিডই সেখানে থাকত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি জীবন্ত কোষের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন অনু তৈরী করে, সেগুলি সবই লেফট-হ্যান্ডেড। কিভাবে এটি সম্ভব যে ‘আকস্মিকভাবে’ ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে’ ঠিক নির্দিষ্ট ধরণের, নির্দিষ্ট সংখ্যার এবং নির্দিষ্ট আকৃতির অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি সমাবিষ্ট হল জৈব তরলে? পদার্থবিদ জে ডি বার্ণাল স্বীকার করেছেন “আমরা কোনদিনই এটির ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হব না।“
    কিভাবে ঠিক সুনির্দিষ্টভাবে প্রয়োজনীয় প্রোটিনগুলি গঠিত হল?
    অসঙ্গতি-৪ঃ জীব-কোষের জন্য যে প্রোটিনগুলি প্রয়োজন, সেগুলি গঠনগতভাবে অত্যান্ত জটিল অনু। ২০টি নির্দিষ্ট লেফট-হ্যান্ডেড অ্যামাইনো অ্যাসিড একটি সুনির্দিষ্ট সিকোয়েন্সে বা বিন্যাসে সংবদ্ধ হলেই কেবল জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন উৎপন্ন হওয়া সম্ভব। আকস্মিকভাবে এটি কিভাবে সম্ভব? এটার তুলনা করা যেতে পারে সাদা ও লাল এই দুটি রঙের ১০০টি বিভিন্ন ধরনের বীন বা ডালের বড়ো এক স্তূপের সংগে। ডাল-দানাগুলি সম্পূর্ণভাবে মিশ্রিত। এখন, আপনি যদি ঐ স্তূপের মধ্য ঐ থেকে একটি বড় হাতা দিয়ে এক-হাতা ডাল-দানা তুলে আনেন, তাহলে সেগুলি কেমন হবে? প্রোটিন তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় মৌল উপাদানগুলির প্রতীক স্বরূপ নির্দিষ্ট ডাল-দানা পেতে হলে, আপনার হাতে উঠে আসতে হবে কেবল লাল রঙের দানা – একটিও থাকবে না সাদা। এছাড়াও এই লাল রঙের মধ্যেও থাকতে হবে ঠিক সুনির্দিষ্ট ২০টি ভিন্ন ধরনের ডাল-দানা এবং এর প্রত্যেকটিকে আবার ঠিক সুনির্দিষ্ট স্থানে বিন্যস্ত, সংহত থাকতে হবে। প্রোটিনের জগতের নিয়ম অনুযায়ী, উপরোক্ত নিয়মের সামান্য হেরফের হলেই এমন ত্রুটিপূর্ণ প্রোটিন উৎপন্ন হবে যা কাজ করতে পারবে না। হাতাটি নাড়া চাড়া করলেই আমরা কি উপরোক্ত নির্দিষ্ট সংখ্যক দানার শৃঙ্খলাবদ্ধ বিন্যাস পেয়ে যাব? এ যেন সমুদ্রগর্ভে আকস্মিকভাবে তৈরী হলো মুক্তার মালা বাস্তবে তা কখনই সম্ভব নয়। তেমনি, তাহলে বিজ্ঞানীদের কল্পিত ‘অর্গ্যানিক স্যুপে’ সেটি ঘটা সম্ভব হয়েছিল কিভাবে?
        আকস্মিকভাবে ঘটনাক্রমে যদি এমনকি একটি সরল অনুকেও অর্গ্যানিক স্যুপে তৈরী হতে হয়, তাহলে অংকের নিয়মে সেই সম্ভাবনা কতটা? বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেন যে, সেই সম্ভাবনা হচ্ছে ১০^১১৩ – অর্থাৎ ১- এর পর ১১৩ টি শুন্য দিলে হবে। সেই সংখ্যার ১ ভাগ। কত হাজার হাজার কোটি ভাগের এক ভাগ? ১-এর পর চারলাইন পর পর শূন্য। কল্পনার অতীত, সম্ভাবনাসীমার বাইরে। তুলনীয়ঃ আপনা থেকে উদ্ভব হলো একটি কোয়ার্টজ ঘড়ির।
        জীব-কোষ তৈরী হতে হলে কিছু প্রোটিন গঠন-কাঠামোগত(স্ট্রকচারাল) উপদান হিসেবে কাজ করে এবং অন্যান্য কিছু প্রোটিন নানা এনজাইম হিসাবে কাজ করে। এনজাইমগুলি কোষের রাসায়নিক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। এনজাইমের এই সহায়তা ছাড়া কোষের উদ্ভব অসম্ভব – কোষের মৃত্যু হত অনিবার্য। এইভাবে প্রোটিন অনুগুলির নানা বিন্যাসে দুভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়াটা যদি আপনা থেকেই ঘটতে হয়, তাহলে তার সম্ভাবনার হার কত? ১০^৪০০০০ অর্থাৎ ১- এর পর ৪০ হাজার শূন্য।
        গণিতবিদদের মত অনুসারে, যে ঘটনা ঘটার সম্ভাবনার হার ঠিক ১০^৫০- এর ১ ভাগ পেরোলেই তা ঘটার আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না। তাহলে ১ – এর পর ১১৩ টি শুন্য ভাগের এক ভাগ? গণিতিক নিয়মে অসম্ভব (‘ম্যাথেম্যাটিক্যাল ইম্পসিবিলিটি’)। বিজ্ঞানীদের হিসেব মতো ব্রহ্মাণ্ডে যত পরমানু আছে, এই সংখ্যা তার চেয়েও বেশি।


    শেষকথাঃ
    বিজ্ঞানের নামে যত আজগুবি বিশ্বাস আর কাল্পনিক মতবাদ প্রচার করে মানব সভ্যতাকে বিপর্যয়ের পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উপরের কিছু দৃষ্টান্ত তার উদাহারণ। যা বলা হয়েছে তা অ্যামাইনো অ্যাসিডের জটিলতার অল্প। জটিলতার বিশালতা উল্লেখ করা আরো সময়ের প্রয়োজন। তেমনি ডি এন এ, আর এন এ, প্রোটিন অনু, কোষের কার্য্যকারিতা, বিভিন্ন প্রানীর অঙ্গপ্রতঙ্গসহ তাদের গোল্ডেন রেশিও, উদ্ভিদের বৈচিত্রতা, সৃষ্টির বৈচিত্রতা……… সবকিছু এমনি এমনি হয়ে গেছে- তা বলতে নিজের বিচার বোধের কাছে নিজেই অপরাধী। ‘সুস্থতা’ কি এবং তা বুঝার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা মানব জাতিকে দিয়েছেন। নাস্তিকরা কোন যুক্তিতে নিজেদের যুক্তিবাদী দাবী করে? নিজেদের অস্তিত্বই তো যুক্তিহীন –  তাদের জ্ঞানে, বুঝশক্তিতে ধরা দেয় না? শুন্য থেকে সবকিছুর অস্তিত্ব, শুন্য নিজেই ডিজাইন, শুন্য নিজেই self renewable and self sustainable. শুন্য নিজেই স্রষ্টা, শুন্যই সবকিছু- Doesn’t make sense. 
  • 0 comments:

    Post a Comment

    New Research

    Attention Mechanism Based Multi Feature Fusion Forest for Hyperspectral Image Classification.

    CBS-GAN: A Band Selection Based Generative Adversarial Net for Hyperspectral Sample Generation.

    Multi-feature Fusion based Deep Forest for Hyperspectral Image Classification.

    ADDRESS

    388 Lumo Rd, Hongshan, Wuhan, Hubei, China

    EMAIL

    contact-m.zamanb@yahoo.com
    mostofa.zaman@cug.edu.cn

    TELEPHONE

    #
    #

    MOBILE

    +8615527370302,
    +8807171546477